সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:৫০

মানবাধিকারকর্মীদের দুষছেন সু চি

আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মীরা মিয়ানমারের রাখাইনে ‘সন্ত্রাসীদের’ সাহায্য করছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির দপ্তর।

তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এতে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে এবং এই ধরনের আচরণ মারাত্মক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা পরিচয়। রবিবার তাদের ফেসবুক পেজে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা জানতে পেরেছেন রাখাইনের একটি গ্রাম যখন ‘চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা’ ঘিরে রেখেছে তখনই তাদের সাহায্য করেছেন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কর্মীরা। এই ঘটনার তদন্ত করা হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।   

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির এই দপ্তরের প্রধান। তারা জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার দেয়া বিস্কুটের ছবি প্রকাশ করে দাবি করে, এই বিস্কুটগুলো রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আশ্রিত একটি ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

মিয়ানমার সরকার এমন সময়ে এই বিবৃতি দিল যখন দেশটির রাখাইন রাজ্যে অশান্ত অবস্থা বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার ভোরে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মুসলিম বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ২০টি তল্লাশিচৌকিতে এই হামলায় নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হামলার জের ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কমপক্ষে ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। তারমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ জন সদস্য রয়েছে।

সামান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী মিয়ানমারের নেতারা জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইসলামি জঙ্গিদের সহযোগিতার করার অভিযোগ করছেন।

রাখাইনে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেছেন, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে জাতিসংঘ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাময়কিভাবে তাদের কর্মীদের মংডু থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে।

বুথিডাউন শহরের এক প্রতিবেদক বলেছেন, এই বিবৃতি প্রকাশের পরে প্রায় ১০০ জন কর্মীকে স্পিডবোটে করে চলে যেতে দেখেছেন।

মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাই রাইটসের নির্বাহী পরিচালক ম্যাথিউ স্মিথ বলেছেন, মানবাধিকারকর্মী বিরোধী অং সান সু চির দপ্তরের এই ধরনের বিবৃতি খুব দায়িত্বজ্ঞানহীন, মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী।

‘সু চি রোহিঙ্গা এবং মানবাধিকার কর্মী বিরোধী মনোভাব মানুষের মনে তৈরি করার চেষ্টা করছেন। অথচ তাকে এখন দেশে শান্তি ও মানবাধিকার রক্ষায় ক্ষমতার ব্যবহার করা উচিত।’

রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর প্রায়ই নির্যাতন, অত্যাচার এবং হত্যার ঘটনা ঘটলেও দেশটির নেত্রী ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সু চি হয় নিরব থেকেছেন নয়তো বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী কয়েকজন ব্যক্তি এক যৌথ বিবৃতিতে অং সান সুচির নিরব ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীসহ মোট ২৩ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব সু চির ভূমিকার সমালোচনা করেন।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে তারা বলেন, বার বার আবেদন জানানোর পরও সু চি যেভাবে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ ও সমান নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তা হতাশাজনক। তারা আরও বলেছেন, সু চি মিয়ানমারের নেত্রী এবং এক্ষেত্রে সাহসিকতা, মানবিকতা ও সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি মোকাবেলার প্রাথমিক দায়িত্বটি তারই কাঁধে ছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত