সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৩:৫২

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

সহিংসতা, হত্যা, নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সমস্যা সমাধানে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।

জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৭২ তম সাধারণ অধিবেশনে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে) প্রধানমন্ত্রী ওই প্রস্তাব তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণ পরেই তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবগুলো হলো—

  • অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা;
  • অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা;
  • জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় (safe zones) গড়ে তোলা;
  • রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা;
  • কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে চতুর্দশবারের উপস্থিত হওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার হৃদয় আজ দুঃখে ভারাক্রান্ত। কেননা আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে ক্ষুধার্ত, ভীত-সন্ত্রস্ত এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখচ্ছবি। আমি মাত্র কয়েক দিন আগেই আমার দেশে আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। যারা ‘জাতিগত নিধনে’র শিকার হয়ে নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত। অথচ তারা হাজার বছরেরও অধিক সময় মিয়ানমারে বাস করে আসছেন। এদের দুঃখ-দুর্দশা আমি গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর আমার ছোট বোনকে নিয়ে ছয় বছর উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো এখানে ভাষণ দেওয়ার সময় এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে তাঁর অঙ্গীকারের কথা বলে গেছেন। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গীকৃত, যে ব্যবস্থায় সব মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। এবং আমি জানি আমাদের এ প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মধ্যে আমাদের লাখ লাখ শহীদের বিদেহী আত্মার স্মৃতি নিহিত রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এ মুহূর্তে নিজ ভূখণ্ড হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত আট লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। আপনারা সকলেই জানেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এ নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে গত তিন সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া ঠেকানোর জন্য মিয়ানমার দেশটির অভ্যন্তরে সীমানা বরাবর স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। এতে আমরা ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এ সব মানুষ যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সম্প্রতি ২৫শে মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মূলত ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ মাধ্যমে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এই গণহত্যার সূচনা করেছিল। এ গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মূল অভিযুক্তদের আমরা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করেছি। বিশ্বের কোথাও যাতে কখনই আর এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয় সে জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, ৭১-এর গণহত্যাসহ সকল ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আমাদের এ লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি চাই, মানব ধ্বংস নয় মানবকল্যাণ চাই। এটাই হোক আমাদের সকলের লক্ষ্যে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত