ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

১৭ আগস্ট, ২০১৫ ১৩:৪৫

শ্রীলঙ্কায় সাধারণ নির্বাচন আজ, পরীক্ষার মুখে রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার সাধারণ নির্বাচনে সোমবার ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।

গত জানুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁরই একসময়ের সহযোগী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে পরাজিত রাজাপাকসের জন্য এ নির্বাচনকে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, খোদ প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাসহ নানা পক্ষের বিরোধিতায় রাজাপাকসের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন সহজ হবে না। এবার কোনো একক দলের পক্ষে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব নয় বলে আভাস মিলেছে। আর সিরিসেনা তো বলেই দিয়েছেন, রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রিত্বের যেকোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করবেন তিনি।

এদিকে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে দেশজুড়ে ৬৩ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত এক মাসে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনটি সহিংস ঘটনায় চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। যদিও অনেকেই বলছেন, গত দুই দশকের অন্যান্য নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সংঘটিত সহিংসতার তুলনায় এবারের মাত্রা অনেক কম।

ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রটির নির্বাচনী প্রচারে রাজাপাকসে বড় বড় সমাবেশ করেছেন। ৬৯ বছর বয়সী এই নেতা নিজের ফিরে আসার চেষ্টার পক্ষে এই যুক্তি তুলে ধরেন, 'যারা ক্ষমতায় আছে, তারা যদি ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করত, তবে আমি অবসরই নিতাম। তবে তাদের একের পর এক ভুল দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। এক রকম বাধ্য হয়েই রাজনীতিতে ফিরেছি আমি।'

রাজাপাকসে ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় এক দশক। গত ৮ জানুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি হেরে যান নিজ দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) সাধারণ সম্পাদক সিরিসেনার কাছে।

দীর্ঘ ৩৭ বছরের তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াইয়ে সমাপ্তি টানার সাফল্যের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিদের মধ্যে রাজাপাকসের জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই কোটি তিন লাখ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৫ শতাংশই সিংহলি। তামিলদের শতকরা হার ১৫ দশমিক ২৬।

তবে সিংহলিদের মধ্যে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি ২০০৯ সালে তামিলবিরোধী চূড়ান্ত অভিযানের সময় সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বেসামরিক তামিলদের হত্যার অভিযোগও আছে। এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেননি।

জাতিসংঘের হিসাবে, সরকারি বাহিনীর শেষ মুহূর্তের অভিযানে ৪০ হাজার তামিলের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ আন্তর্জাতিক মহলের দাবি, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ যুদ্ধাপরাধের আইনি সমাধান হোক। সিরিসেনা সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। তবে রাজাপাকসে ক্ষমতায় ফিরলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

সিংহলিদের ব্যাপক সমর্থন, নির্বাচনী সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের পরও রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আরো বাধা রয়েছে। নতুন সরকার গঠনের জন্য সিরিসেনা বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংঘের ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিকে (ইউএনপি) বেছে নেবেন বলেই ধারণা করা হয়।

সম্প্রতি এক সমাবেশে তিনি ভোটারদের প্রতি এ আহ্বান জানান, '৮ জানুয়ারির নির্বাচনের নীরব বিপ্লবকে অক্ষুণ্ন রাখুন।' তাঁর কথায় বিশ্লেষকরা রনিলকে সমর্থন দেওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত খুঁজে পান। বিরোধীরা বলছেন, ভবিষ্যতে মামলায় জড়ানোর ভয় থেকেই রাজাপাকসে আবার রাজনীতির মাঠে নেমেছেন।

সোমবারের (১৭ আগস্ট) নির্বাচনে প্রায় দেড় কোটি ভোটার ২২৫ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ভোট নেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল মঙ্গলবার রাতের দিকে ফল ঘোষণা হতে পারে। সূত্র : এএফপি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত