সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ নভেম্বর, ২০১৫ ১৩:২৩

পিছিয়েছে সাকার রিভিউর শুনানি

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি হয়নি।

আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানিটি ‘আজ হচ্ছে না (নট টুডে)’ বলে আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

তবে অপর আসামি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। কাল এ শুনানির রায় দেবেন আদালত।

আসামিদের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন রিভিউ আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।

এর আগে সকাল ৯টা ৮ মিনিটে আসামিদের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে রিভিউ আবেদনের পক্ষে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে মঙ্গলবার আদালতের কার্যারম্ভেই এই রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন : বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সকালে আদালতের নির্ধারিত সময়ের আগেই অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুবের নেতৃত্বে আসামিপক্ষের একদল আইনজীবী এজলাসে প্রবেশ করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী ভেতরে প্রবেশ করেন।

এ মামলার তদন্ত সংস্থার প্রধান আবদুল হান্নান খানসহ সংশ্লিষ্টরা ৯টার মধ্যেই এজলাসে প্রবেশ করেন।

এদিকে সাকা-মুজাহিদের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ও এর আশপাশের এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট, মূল গেট, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনসহ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোর থেকেই নিরাপত্তাকর্মীরা এই এলাকায় অবস্থান নেয়।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে মুজাহিদের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে গেলে সর্বোচ্চ আদালতও ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। তবে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল তাকে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ শুধুমাত্র ষষ্ঠ অভিযোগে অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন।

৩০ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর দণ্ড থেকে বাঁচতে মুজাহিদের সামনে খোলা ছিল রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পথ। এতেও যদি তার দণ্ডই থেকে যায় তবে ফাঁসি থেকে বাঁচতে তার সামনে খোলা থাকবে একটাই রাস্তা তা হলো- রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন সাকার আইনজীবীরা। আপিল আবেদনে মোট ১ হাজার ৩২৩ পৃষ্ঠার নথিপত্রে বিভিন্ন ডকুমেন্টসহ ২৭টি গ্রাউন্ড ছিল।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে (অভিযোগ নং- ৩, ৫, ৬ ও ৮) তাকে ওই শাস্তি দেয়া হয়।

এছাড়া তিনটি (অভিযোগ নং- ২, ৪ ও ৭) অভিযোগে তাকে ২০ বছরের ও দুটি (অভিযোগ নং- ১৭ ও ১৮) অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় বসেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে নানা তীর্যক মন্তব্য করেছিলেন ফটিকছড়ির এই সাংসদ। হাসিমুখে একবার বলেছিলেন, ‘যেটা পড়া হয়নি সেটা পড়েন, পড়ে চলেন বাড়ি যাই।’

এরপর নিয়মমাফিক সাকাও ওই রায়ের বিরুদ্ধে যান আপিল বিভাগে। তবে সেখানেও তার সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল থাকে।

৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের সঙ্গে তারও মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। এরপর দুজনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিই একসঙ্গে যায় ট্রাইব্যুনালে। গত ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলে তা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেয়া হয়।

তবে আসামিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করায় ফাঁসির রায় কার্যকর প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হয়ে যায়, মৃত্যুপরোয়ানা জারির মধ্যে দিয়ে যা শুরু হয়েছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত