ওয়েব ডেস্ক

২২ নভেম্বর, ২০১৫ ২০:২৩

সাকা-মুজাহিদ : ফাঁসির দিনের কার্যক্রম

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের চূড়ান্ত প্রায়শ্চিত্য হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ২২ নভেম্বর।

মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ ) করতে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের আবেদন খারিজের পর তাদের সুযোগ ছিল শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার।

বুধবার (১৮ নভেম্বর) রিভিউ খারিজের পর বৃহস্পতিবার রায় পৌঁছায় কারাগারে। মাঝে একদিন আলোচনা চললেও দণ্ড কার্যকরের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আসেনি।

শনিবার সকাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে নিরাপত্তা জোরদারের পরও ঘটনা প্রবাহ বেশি দূর গড়াচ্ছিল না। দুপুরের পরই ঘটতে থাকে একটির পর একটি ঘটনা।

দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সংবাদ সম্মেলন, ক্ষমা চাওয়ার কথা আইনমন্ত্রীর জানানো, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ তাদের পরিবারের, ক্ষমার আবেদন নাকচ- সবই ঘটে যায় দ্রুত।

সকাল ৯টা: আগের দিনের তুলনায় কড়াকড়ি বাড়ে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে কারাফটকের সামনে। ঢুকতে গেলে তল্লাশির মুখে পড়তে হয় সবাইকে।

সকাল ১০টা: কারাগারে ঢোকেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট।

বেলা ১২টা: গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

যুদ্ধাপরাধের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারে সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে অভিযোগ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান তারা। ক্ষমা চাওয়ার বিষয় হুম্মাম বলেন, এই সিদ্ধান্ত তার বাবাই নেবেন।

বেলা ১২টা ১৫ মিনিট: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন মুজাহিদের স্ত্রী ও সন্তানেরা।

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখতে রাষ্ট্রপতির প্রতি আবেদন জানায় তারা। ক্ষমা চাওয়ার বিষয়েও স্পষ্ট কিছু বলেননি তারা।

দুপুর ১টা: অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সব বিষয় নিষ্পত্তি হওয়ার পর এখন বিভ্রান্তি তৈরি করতে দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিবার রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের কথা বলছে। এখন মার্সি পিটিশন ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।

বেলা ২টা: সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন বলে কারা ‍সূত্র জানায়।

বেলা ২টা ১৫ মিনিট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, তার কাছে এই বিষয়ে কোনো ‘মেসেজ’ নেই।

বেলা ২টা ৩০ মিনিট: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ ক্ষমা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন।

২টা ৩৫ মিনিট: কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ানকে একটি রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে বের হতে দেখা যায়। কীসের ফাইল, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি তিনি। খাতাটির উপরে লেখা ছিল ‘গুরুত্বপূর্ণ পত্রাদি’।

বেলা ২টা ৫৪ মিনিট: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই ফাইল নিয়ে পৌঁছেন ডেপুটি জেলার। তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবের কক্ষে ছিলেন কিছুক্ষণ।

বিকাল সাড়ে ৩টা: কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন দুই ম্যাজিস্ট্রেট। তবে তারা সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেননি।

বিকাল ৪টা: মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর বলেন, তার বাবা ক্ষমা চেয়েছেন এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। একই সময় জামায়াতে ইসলামীর এক বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদনের খবরটি ‘সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর’।

বিকাল সোয়া ৪টা: কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা সকালের তুলনায় বাড়ানো হয়। র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে কারা ফটকের সামনে অবস্থান নেয় আর্মড পুলিশও।

বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট: আবেদন পৌঁছে দিতে বঙ্গভবনে যান সালাউদ্দিন কাদেরের স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তবে চিঠি না নিয়ে তাদের জানানো হয়,সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই চিঠি দিতে হবে।

বিকাল ৫টা: ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে সালাউদ্দিন কাদেরের ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বলেন, ক্ষমা চেয়ে তার বাবা আবেদন করেছেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের। একটু পর হুম্মামও সেখানে আসেন। পরে দুইজন চলে যান।

সন্ধ্যা ৭টা: রাজধানীতে ২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রামে নামে ১০ প্ল্যাটুন এবং কক্সবাজারে নামে ৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা: গুলশানের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন,প্রাণভিক্ষার নথি তিনি হাতে পেয়েছেন এবং নিজের মতামত দিয়েছেন।

রাত ৭টা ৫৫ মিনিট: কারাগারের ভেতরে ঢোকেন অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল ফজলুল কবির।

রাত ৮টা: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন বঙ্গভবনে পৌঁছায়।

রাত সাড়ে ৮টা: কারা কর্তৃপক্ষ পরিবারের সদস্যদের ডেকেছে বলে জানান মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর। সালাউদ্দিন কাদেরের আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান আলফে সানীও একই কথা জানান।

রাত ৯টা: কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছান সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের সদস্যরা।

রাত ৯টা ১৯ মিনিট: কারাগারের ফটকে পৌঁছান মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা।

রাত সাড়ে ৯টা: প্রাণভিক্ষার আবেদনে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মতামত নিয়ে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যান আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিব। সূত্র জানিয়েছে, প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়েছে।

রাত ১০টা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর বাধা নেই।

রাত ১০টা ১৮ মিনিট: কারাগারের ভেতরে ঢোকেন আইজি (প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন ও ঢাকার জেলা প্রশাসক।

রাত ১০টা ৪৫ মিনিট: সালাউদ্দিন কাদেরের সঙ্গে দেখা করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।

রাত ১২টা ২১ মিনিট: আলী আহসান মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তার পরিবারের সদস্যরা।

রাত ১২টা ৩১ মিনিট: চারটি অ্যাম্বুলেন্স নেওয়া হয় কারাগারের ভিতরে।

রাত ১২টা ৫০ মিনিট: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন,“অল্প ক্ষণের মধ্যেই সব শেষ হবে।”

রাত ১২টা ৫৫ মিনিট: সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বলে কারা কর্মকর্তারা জানান।

রাত ১টা ৫৫ মিনিট: দুই যুদ্ধাপরাধীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স কারাগার থেকে বেরিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।

তথ্যগ্রহণ: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আপনার মন্তব্য

আলোচিত