সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ১০:২২

বুধবার নির্ধারিত হবে কবে মীর কাশেমের আপিল শুনানি

আসামিপক্ষের কে মামলা পরিচালনা করবেন তা নির্ধারণ না হওয়ায় তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পিছিয়ে গেছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর আপিলের শুনানির তারিখ নির্ধারণ।

কবে থেকে মামলার শুনানি শুরু হবে সেটা নির্ধারিত হবে আগামীকাল (৬ জানুয়ারি)

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় থাকলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে দিন নির্ধারণ পিছিয়ে যায়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন তুহিন (অন রেকর্ড) আদালতে বলেছেন, ‘মীর কাশেম আলীর মামলায় কোন আইনজীবী শুনানি করবেন তা আমরা এখনও নির্ধারণ করতে পারিনি। নির্ধারণ করতে আমাদের সময়ের প্রয়োজন।’ তখন আদালত বুধবার দিন নির্ধারণের জন্য মামলাটি রেখে দেন।

প্রধান বিচারপতি এস সে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর আপিল করেন তিনি।

দেড়শ পৃষ্ঠার মূল আবেদন ও এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ করা আপিলে মীর কাশেম সাজা বাতিল চেয়ে খালাস চান। আপিলে তার খালাসের পক্ষে আইনজীবীরা ১৮১টি যুক্তি তুলে ধরেন। এর আগে গত ২৮ মে আপিল বিভাগ আপিলের সার-সংক্ষেপ দাখিল করতে দুই পক্ষকে সময় বেঁধে দিয়েছিল।

এদিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির ও যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের ওপর ৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণার দিন রয়েছে। মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ ৬ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করে।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আদালতে রায়ের পর্যায়ে থাকা ষষ্ঠ মামলা এটি।

আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগে পাঁচটি রায়ের মধ্যে চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

আপিল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ও যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মীর কাশেম আলীকে ২ নভেম্বর, ২০১৪ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়ার সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২।

আটজনকে নির্যাতনের পর হত্যা ও মরদেহ গুম এবং ২৪ জনকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন নির্যাতনকেন্দ্রে আটকে রেখে নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী ১৪টি অভিযোগে অভিযুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা মীর কাশেম আলী। এ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়েছে। বাকি ৪টি অভিযোগ প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।

১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অর্থাৎ ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ৪টি অর্থাৎ ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ মোট ৮ জনকে হত্যার দায়ে কাশেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১১ নম্বর অভিযোগে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে ও ১২তম অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বসম্মত ও ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দেন বিচারপতিরা।

ফাঁসি ছাড়াও প্রমাণিত অন্য ৮টি অভিযোগে আরও ৭২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা মীর কাশেম আলী।

এর মধ্যে প্রমাণিত ফারুককে অপহরণ-নির্যাতনে (২ নম্বর অভিযোগ) ২০ বছর ও নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের (১৪ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড পান তিনি।

এছাড়া অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মীর কাশেম আলী। এগুলোও ছিল অপহরণ, আটক ও নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ।

রায়ে উল্লেখ করা হয়, মীর কাশেম আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ওই সময় চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম শহর শাখারও সভাপতি ছিলেন।

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রাদেশিক কার্যকরী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মীর কাশেম আলী জামায়াতসহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের সমন্বয়ে সশস্ত্র আলবদর বাহিনী গঠন করেন। সেই আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে মীর কাশেম আলী স্বাধীনতাবিরোধী মূল ধারার সঙ্গে একাত্ম হয়ে সারা বাংলাদেশ বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

চট্টগ্রাম শহরের দোস্ত মোহাম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিং (চামড়ার গুদাম), সালমা মঞ্জিল, ডালিম হোটেলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মীর কাশেম আলী তার সহযোগীদের নিয়ে আলবদর বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এসব নির্যাতন কেন্দ্রগুলোতে বহু মানুষকে ধরে নিয়ে তিনি দিনের পর দিন নির্যাতন এবং অনেক লোককে হত্যা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত