সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ আগস্ট, ২০১৬ ১৫:৫০

৪০ বছর ধরে আমি আপনাকে চিনি, মাহবুবকে প্রধান বিচারপতি

৪০ বছর ধরে আমি আপনাকে চিনি; ওয়ার ক্রাইম নিয়ে আপনার ইয়ে আমি জানি। আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি। আশা করি, আপনি আপনার সম্মান রাখবেন- যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ফের সময়ের প্রার্থনা করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা তাকে উদ্দেশ করে এ সব কথা বলেন।

উচ্চ আদালতে পুনর্বার সময়ে আবেদন করে নাকচ হওয়ার পর তার কাছে কোন কাগজপত্র নাই এমন অজুহাত দেখাতে গেলে প্রধান বিচারপতি নিজে তাঁর হাতে থাকা পেপারবুক এগিয়ে দিয়ে শুনানির আহবান জানান। খন্দকার মাহবুবকে উদ্দেশ করে তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার কাছে ওইদিনও (রিভিউ শুনানির আগের তারিখ ২৫ জুলাই) পেপার বুক ছিল। এখন নাই কেনো।’

বুধবার (২৪ আগস্ট) মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন শুনানির শুরুতেই বারবার সময় চেয়ে পীড়াপীড়ি করলে প্রধান বিচারপতি তাকে এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি শুরু করেন, আমরা রবিবার শেষ করবো’। এসময় খন্দকার মাহবুব হোসেন তার কাছে পেপার বুক নেই বলে জানালে, প্রধান বিচারপতি তার হাতে থাকা পেপার বুক এগিয়ে দেন। আর পাশে অ্যাটর্নি জেনারেলও তার হাতে থাকা পেপারবুক নিয়ে খন্দকার মাহবুবের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। এসময় মীর কাসেমের প্রধান আইনজীবী ও বিএনপিপন্থী এ আইনজীবী বলেন, ‘দরকার নেই, আমি আমার মেমোরি থেকে বলতে পারবো।’ তখন প্রধান বিচারপতি তাকে বলেন, ‘আপনি শুরু করেন, আপনার স্মরণশক্তি ভাল আমি জানি।’

খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমি একটা অভিযোগের ওপর বক্তব্য রাখবো। যে অভিযোগে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তিনি শুনানি শুরু করে কিছু কথা বলার পর আদালত আগামী রবিবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

আসামিপক্ষের সময় চেয়ে করা আবেদন না মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে বুধবার এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।  সকাল সাড়ে নয়টার কিছু পরে আপিল বিভাগের কার্য তালিকার ৫ নম্বরে থাকা রিভিউর আবেদন শুনানির জন্য এলে আসামিপক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন দাঁড়ান।

এ সময় খন্দকার মাহবুব সময়ের আবেদনের কথা বললে প্রধান বিচারপতি তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি যে যুক্তিতে সময় চেয়েছেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার ব্রাদার বিচারপতি এখানে আছেন। তিনি সময় নির্ধারণ করেছিলেন। এরপর ৬ সপ্তাহ সময় পেয়েছেন। ২৫ জুলাই আবার সময়ের আবেদন করেছেন। আমরা সময় দিয়েছি। অথচ রিভিউর কোনও আইন নাই। এরপরও আমরা সেই সুযোগ দিয়েছি। যদিও এখানে কনস্টিটিউশনাল বেরিয়ার রয়েছে, তারপরও আমরা সেটি দিয়ে থাকি। কারণ, এটা প্রাকটিস এবং নর্মের জন্য। রিভিউতে যুক্তি খুবই কম থাকে।’ তারপরও খন্দকার মাহবুব সময়ের জন্য আবেদন করলে আদালত বলেন, ‘আমরা দুঃখিত।’

তখন খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমার কাছে কিছুই নাই। কাগজপত্রও নাই। এসব ছিল তার (মীর কাসেম) ছেলের নিকট। তাকে কেউ নিয়ে গেছে। সে কেবল তার ছেলেই ছিল না। সে এই মামলার আইনজীবীও ছিল। তার কাছেই সব কাগজপত্র ছিল, সে এখন জেলে আছে। আমি এই মামলার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, কিন্তু আমার কাছেতো কিছুই নাই। আমি অসহায়।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাকে ল এনফোর্সিং এজেন্সি নিয়ে গেছে।’ জানালে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সেটা আমি জানি না।’ জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি যথেষ্ট লিবারেল, সময়ে দিয়ে দেই, কিন্তু ওই যুক্তিতে (সময় মুলতবি) দেবো না।’ এক পর্যায়ে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমার কাছে পেপার বুকও নাই। কোন কাগজপত্র নাই।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরাতো রায়ের বাইরে যাব না। কোথায় ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড?’এখানে অ্যাডভোকেট শাহজাহান (মীর কাসেমের আরেক আইনজীবী) আছেন, আপনি আছেন।’’

উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ওইদিন আপনি আবেদন করেছেন। আমি সময় দিয়ে দিয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ নানা বক্তব্য দিয়েছে। আমি বলতে গেলে তাদের বক্তব্য শুনিও নাই। সময় দিয়ে দিয়েছি।’

এরপর নিজের পেপার বুক খন্দকার মাহবুবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি আমার পেপার বুক দিয়ে দিচ্ছি। আপনি শুনানি শুরু করেন।

তখন খন্দকার মাহবুব শুনানিতে অংশ নেন। এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা আংশিক শ্রুত, আগামী রবিবার কার্যতালিকার শীর্ষে আসবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ওই সাজাই বহাল থাকে। ৬ জুন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম। প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময় চেয়ে  আবেদন করার পর গত ২৫ জুলাই আদালত রিভিউ শুনানি এক মাস পিছিয়ে দেয়। এক মাস পর শুনানির জন্য আসলে ফের এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত