নিউজ ডেস্ক

২৫ মে, ২০১৫ ১১:৫৫

যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের যুক্তিতর্ক দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিলেন আপিল বিভাগ

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আল বদর উপ-প্রধান ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল শুনানিতে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সোমবার (২৫ মে) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আদালত এ তাগিদ দেন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন এ বেঞ্চের অপর তিন বিচারক হচ্ছেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সোমবার (২৫ মে) শুনানির সপ্তম দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছেন মুজাহিদের আইনজীবী এস এম শাহজাহান। এর আগে গত গত ২৯ এপ্রিল শুরু করে ১৮ মে পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে ট্রাইব্যুনালের রায় ও রায় সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) পাঠ শেষ করেন তিনি।

এরপর যুক্তিতর্কের সূচনা উপস্থাপন শুরু করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১ ও ৩ নম্বর অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে ফের শুরু হবে রাষ্ট্রপক্ষের অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। 

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পরে একই বছরের ১১ আগস্ট খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন মুজাহিদ। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে এবং ২টি প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু’টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ।

১ নম্বর অভিযোগে ছিল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যা ও ৬ নম্বর অভিযোগে ছিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনা।

প্রথম অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যার ঘটনায়ও তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায় ছিল বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে। ৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার ঘটনা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগ প্রসিকিউশন সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রমাণিত ৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরোনো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া প্রমাণিত ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজি‍ৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন মুজাহিদ। ‍

অন্যদিকে প্রমাণিত না হওয়া ২ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানায় বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণহত্যার অভিযোগ এবং ৪ নম্বর অভিযোগে কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার মো. আবু ইউসুফ পাখিকে আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ থেকে খালাস পান মুজাহিদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত