সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:৩৫

ঈদযাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াবেন যেভাবে

আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতেই নাড়ির টানে ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দময়। ঈদের সব আনন্দ নষ্ট হয়ে যায় অসুস্থতার কারণে। অনেকেই ক্লান্তিকর ও দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে বাড়ি পৌঁছানো এবং পরে আবার কাজে যোগদানের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিশেষ করে শিশুদের পক্ষে লম্বা যাত্রাপথের ধকল সহ্য করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে সহজেই ছোটখাটো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে ভ্রমণের সময় ও ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে করণীয় সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জেনে নিন কী করবেন-

পরিকল্পনা করুন- বাসায় যাওয়ার দু-এক দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন। কোথায় যাচ্ছেন, সেখানকার আবহাওয়া কেমন, কদিন থাকবেন ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে প্রস্তুতি নিন। এর মাধ্যমে যেমন কম জিনিস বহন করা সম্ভব তেমনি পরে কোনো দরকারি সামগ্রী যেমন ওষুধ, চশমা প্রভৃতি বাড়িতে ফেলে আসার ধকলও পোহাতে হবে না।

পানির বোতল- রাখুন বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই অবশ্যই পানের বোতল সঙ্গে রাখুন। সুস্থ থাকতে নিজে পানি পান করুন এবং আপনার সঙ্গে কোনো ছোট কেউ থাকলে তাকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানে উৎসাহিত করুন।

পোশাক- ভ্রমণের সময় পোশাকের ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করুন। খুব বেশি আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে বরং হালকা, আরামদায়ক ও সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করুন। তাহলে ভ্রমণ আপনার জন্য অনেক আরামদায়ক হয়ে উঠবে।

জুতা- ভ্রমণের সময় আপনি কোন ধরনের জুতা পরে বের হলেন, সেটাও খেয়াল করুন। জুতা জুতসই না হলে চলাফেরায় কষ্ট হয়। এ সময় মেয়েদের যতটা সম্ভব উঁচু হিলের স্যান্ডেল এড়িয়ে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরা উচিত। কারণ দীর্ঘযাত্রার সময় পরে থাকা উঁচু হিলের জুতা পায়ের রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং হাঁটুতে চাপ দেয়; ফলে পায়ের হাড়ে ব্যথা হতে পারে। আবার একেবারে নতুন জুতো পায়ে কোথাও রওনা হবেন না। এতে পায়ে ফোস্কা পড়তে পারে।

ছাতা ও চশমা- বাসে বা ট্রেনে ওঠার আগে বেশ খানিকটা পথ রোদে হাঁটার প্রয়োজন হয়। অনেকটা সময় আবার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তখন সানবার্ন থেকে বাঁচতে ছাতা কিংবা রোদচশমা ব্যবহার করুন। শিশুরা সব সময় ছাতার নিচে থাকতে রাজি না হলে বিকল্প হিসেবে তাদের হ্যাট পরাতে পারেন।

ফার্স্ট এইড বক্স- ঈদের সময় যেহেতু অনেক মানুষ একই বাড়িতে একত্র হন, ফলে যেখানে যাচ্ছেন সেখানে সব কিছু সব সময় হাতের নাগালে নাও পেতে পারেন। তাই যাওয়ার আগে ফার্স্ট এইড বক্স নিতে কিছুতেই ভুলবেন না। মনে রাখবেন, ঈদের সকালে অসতর্কতাবশত হাত কেটে গেলে কিংবা আপনার সন্তান খেলতে গিয়ে হাঁটু ছিলে ফেললে এই ফার্স্ট এইড বক্সই হয়তো বড় বিপদ থেকে রেহাই দেবে। এছাড়া একটি নোটবুকে আপনার পরিচিত চিকিৎসক ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফোন নম্বর ও ঠিকানা লিখে রাখুন। এতে দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।

হালকা ঘুমিয়ে নিন- যাত্রাপথে অনেকেই বই পড়ে সময় কাটান। ভালো অভ্যাস কিন্তু আপনার যদি মোশন সিকনেস থাকে, তাহলে দয়া করে এ কাজটি করতে যাবেন না। ট্রেনে দুলনির সঙ্গে সঙ্গে বই পড়ার ফলে মাথা ঘোরা শুরু হতে পারে, যা থেকে পরে বমিও হতে পারে। মোশন সিকনেস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাস বা ট্রেন চলাকালে বাইরের দিকে তাকিয়ে না থেকে ও বই না পড়ে বরং চোখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে ঘুমিয়েও নিতে পারেন।

অপরিচিতদের খাবার এড়িয়ে চলুন- ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খাবেন না। একই কথা প্রযোজ্য, ঈদ কাটিয়ে ফিরে আসার সময়ও। নতুবা বড় কোন দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে আপনার। শিশু ও বয়স্কদের খেয়াল রাখুন, ভ্রমণের সময় শিশুরা অধিক উত্তেজনাবশত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। কখনো সে ব্যথা পায়, কখনো হারিয়েও যায়। এজন্য আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে খেলছে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন।

একেবারে ছোট দুগ্ধপোষ্য শিশু নিয়ে ভ্রমণ না করাই উচিত। একান্ত প্রয়োজনে বের হতে হলে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করে তবেই বাসা থেকে বের হোন। ভ্রমণের সময় শিশুদের ধুলাবালি থেকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে, এদিকে সতর্ক থাকুন। শিশুদের বাইরের খোলা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত রাখার জন্য বাসায় তৈরি কিছু মুখরোচক খাবার সঙ্গে নিয়ে নিন। তারা যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও তরল-জাতীয় খাবার খাচ্ছে কি না, সেদিকে সব সময় লক্ষ রাখুন। এছাড়া বয়স্ক মানুষের জন্য বাসে বা ট্রেনে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। সে সময় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। বাসের মধ্যেও যেন তারা একই ভঙ্গিতে বেশিক্ষণ বসে না থাকে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন।

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণে করণীয়-  বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা নিরাপদেই ভ্রমণ করতে পারেন। তবে দেহে ঝাঁকির উদ্রেক হয় এমন পথ যথাসম্ভব পরিহার করুন। প্রথম তিন মাস ও সাত মাস বা ২৮ সপ্তাহ পেরোনোর পর ভ্রমণ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় একা ভ্রমণের চিন্তা করা ঠিক নয়। নিরাপদ মাতৃত্বের স্বার্থে কোনো ধরনের বিপদের ঝুঁকি নেবেন না; এজন্য যারা ৩৫ বছর পেরোনোর পর প্রথমবারের মতো মা হচ্ছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা আছে, যারা মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত এবং ইতিপূর্বে যারা মাতৃত্বজনিত জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন, তারা এবারে ঈদের আনন্দ বাড়িতে বসেই উপভোগ করুন। অন্য যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।   

ভ্রমণের সময় ব্যায়াম- বাসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় অনেকক্ষণ বসে থাকার জন্য অনেকেরই পা ফুলে যায়। গন্তব্য স্থলে যাওয়ার জন্য ছয়-সাত ঘণ্টার বেশি একনাগাড়ে বসে থাকার প্রয়োজন হলে এমন ঘটনা বেশি ঘটে। এ সময়ে শরীরে একধরনের জড়তাও ভর করে। এ ধরনের বিভিন্ন অসুবিধা দূর করতে কয়েকটা ব্যায়াম জেনে নিন, যেগুলো বাসে বা গাড়িতে বসেই করা সম্ভব। এতে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হওয়ার পাশাপাশি দেহও সতেজ থাকবে * কিছুক্ষণ পর পর স্ট্রেচিং বা আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করুন। * বসে থেকেই হাত কয়েকবার ওপর-নিচ করতে পারেন। এতে দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। * দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে অনেকেরই পা ফুলে যায়। এ সমস্যা এড়াতে বসে থেকেই একটু পর পর দুই পা গোড়ালির ওপর ভর করে কয়েকবার ঘুরিয়ে নিন। * শূন্যে ঘুষি মারাও কিন্তু হাতের একধরনের ব্যায়াম। এর মাধ্যমে দুই বাহুতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। * বাস থামলে বা গাড়ি থামিয়ে সুযোগ পেলেই হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করে শরীরের অবসাদ দূর করুন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত