সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০১:১০

দুঃখ প্রকাশ করে হেফাজত মহাসচিবের আলোচনার প্রস্তাব

হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারকে অভিযুক্তদের তালিকা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদেরকে নিয়ে নিজেই কারাগারে যাবেন জানিয়েছেন। তবে সংগঠনের মহাসচিব নুরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি চান আলোচনা।

হেফাজতের তাণ্ডবকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা উল্লেখ করে দুঃখও প্রকাশ করেছেন। দাবি করেছেন, এগুলো তৃতীয় পক্ষের কাজ। তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।

বৃহস্পতিবার বাবুনগরী এই বিবৃতি দেয়ার কিছুক্ষণ পর গণমাধ্যমে আসে নুরুল ইসলামের বিবৃতি।

সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতার দুই ধরনের অবস্থান হেফাজতে সমন্বয়হীনতা ও বিশৃঙ্খলার উদাহরণ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না।

বিকালে বাবুনগরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশের নিম্ন আয়ের গরিব মানুষকে আর হয়রানি ও কষ্ট না দিয়ে আমার কাছে তালিকাটা পাঠান, আমি অভিযুক্তদের সকলকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জেলে চলে যাব; একজন পুলিশও পাঠাতে হবে না।’

পরে নুরুল ইসলাম বিবৃতিতে সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন এই পবিত্র রমজান মাসে গণ-গ্রেপ্তার বন্ধ করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজি। সমস্যা যত বড়ই হোক, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান বের করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ। হেফাজতের মধ্যেও যদি কেউ অপতৎপরতা চালায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেব ইনশাআল্লাহ।’

মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে সহিংস হয়ে উঠে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় চলতে থাকে হামলা

গত ২৬ মার্চ থেকে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠা হেফাজতের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে ১১ এপ্রিল থেকে। এই ১১ দিনে গ্রেপ্তার হয়েছেন সংগঠনের ১৬ জন শীর্ষ নেতা। আর এতদিন উত্তেজক বক্তব্য দিয়ে এলেও এখন নেতারা কথা বলছেন নরম ভাষায়।

১৯ এপ্রিল ভিডিও বার্তায় এসে বাবুনগরী ‘মাননীয় সরকার’ উল্লেখ করে ২৬ মার্চের তাণ্ডবের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। একই দিন নয় জন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে নুরুল ইসলাম দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়। আহ্বান জানান ‘সমঝোতার’।

কিন্তু ওই বৈঠকের পরে আরও অন্তত ছয় জন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, সরকার ছাড় দিচ্ছে না সংগঠনটিকে। এই পরিস্থিতিতে বাবুনগরী নিজে নেতাদের নিয়ে জেলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

তবে হেফাজতের মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা আমরাও চাই, আপনারাও চান। আমরা কোনোভাবেই চাই না যে, দেশের মধ্যে অশান্তি তৈরি হোক। তাই আসুন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোনও সমস্যা থাকলে তার সমাধান করি।’

গত কয়েক বছরে কওমিপন্থিদের মধ্যে অবস্থান করে নেয়া মামুনুল হক গ্রেপ্তার হওয়ার পর হেফাজত বারবার সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছে

হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হওয়ায় সারা দেশের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচি চায় উল্লেখ করে হেফাজত নেতা বলেন, ‘কিন্তু আমরা দেশের করোনা পরিস্থিতি ও পবিত্র রজমান মাসের সম্মানে কোনও কর্মসূচি দিচ্ছি না। সরকারকে বলব- আপনারা যেমন চাননি দেশে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হোক, আমরাও সেটা চাইনি।

‘কিন্তু এরপরেও কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এবং এতে আমাদের ২২টি তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছে। এত কিছুর পরেও আমরা চুপ রয়েছি। কারণ আমরা দেশ ও দেশের জনগণকে ভালোবাসি। দেশের তৌহিদি জনতাই আমাদের কর্মী। এই অবস্থায় নতুন কোনো কর্মসূচি দিয়ে দেশের পরিস্থিতি আরও নাজুক করতে চাই না।’

হেফাজতের সহিংসতার প্রতি ইঙ্গিত করে মহাসচিব বলেন, ‘কোথাও যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে কিংবা হেফাজতের কর্মসূচিতে তৃতীয় কোনো শক্তি যদি সুযোগ নিয়ে থাকে, অথবা কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে থাকে, তাহলে সরকার তাদের খুঁজে বের করুক। আমরা সরকারকে এই ক্ষেত্রে সহযোগিতা করব ইনশাআল্লাহ।’

মহাসচিব বিবৃতি পাঠানোর আগে হেফাজত আমির বাবুনগরী বলেছেন, তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে কারাগারে যেতে চান

গত ২৬ ও ২৮ মার্চ হেফাজতের বিক্ষোভ ও হরতালে তাণ্ডবের বিষয়ে মহাসচিব বলেন, ‘হতে পারে কোনো কোনো অপশক্তি তাদের হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হেফাজতের শান্তিপূর্ণ কর্মসুচিতে অনুপ্রবেশ করেছিল এবং হেফাজত ও হেফাজতের নেতাকর্মীদের দায়ী করার জন্য নানান বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল।’

২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ত্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে ঘটনার সঙ্গে হেফাজতের হরতাল কর্মসূচির সরাসরি কোনো সম্পর্ক ছিল না। ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসায় হামলা করায় বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ মাঠে নেমে আসে, এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

‘তারপরেও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা সমূহের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দের আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল বলে আমরা মনে করি।’

আগামীতে হেফাজতের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এসব ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকবে বলে অঙ্গীকারও করেন নুরুল ইসলাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত