সিলেটটুডে ডেস্ক

৩১ জুলাই, ২০২১ ০২:৩৩

‘আমি সরকারের লোক, আমি আওয়ামী লীগের লোক’

আলোচিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গুলশান থানায় করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

তবে শুনানির সময় আদালতে হেলেনা আত্মপক্ষ সমর্থনে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি সরকারের লোক।’

শুক্রবার বিকেলে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করার পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করে র‍্যাব। রাত ৮টার কিছু আগে তাকে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) রাজেশ চৌধুরীর কোর্টে তোলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি করেন আবদুল্লাহ আবু ও হেলেনা জাহাঙ্গীরের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন শফিকুল ইসলাম।

আদালত এ সময় হেলেনা জাহানঙ্গীরকে আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু বলার আছে কি না, তা জানতে চায়।

হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি সরকারের লোক। আমি আওয়ামী লীগের লোক। আমার পদ এখনও যায়নি। আমাকে কোনো শোকজ করা হয়নি। আমি কোনো নোটিশ পাইনি। আমার জীবনে আমি ফেসবুকে কোনো দিন সরকারের বিপক্ষে লিখি নাই। আমি সরকারের লোক। আওয়ামী লীগের লোক। আমি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করি।’

হেলেনা আরও বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে প্রায় ২৫টা দেশ সফর করেছি। আমি কীভাবে সরকারের বিপক্ষে কথা বলব। কোথাও কোনো প্রমাণ নেই আমার ফেসবুকে। কোনো পেজে। বরং কেউ যদি কথা বলে থাকে সেটার প্রতিবাদে আমি দাঁড়িয়েছি। সেই ভিডিও আছে আমার ফেসবুকে। সেটার ভিডিও আছে আমার ফেসবুকে।’

তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন দলের হয়ে আমেরিকা থেকে কানাডা থেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। তাদের বিপক্ষে আমি কথা বলেছি। এগুলোর প্রমাণ আমার কাছে আছে।’

তবে এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি কল রেকর্ড বিচারককে দেয়া হয়। যেখানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের কণ্ঠ শোনা যায়।

ভিডিওতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বলতে শোনা গিয়েছে তিনি প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে গুনে চলেন না। ‘কোনো মন্ত্রীকে গোনার সময় নাই।’

আবদুল্লাহ আবু আদালতে হেলেনা জাহাঙ্গীর বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল মামলায় তার রিমান্ড চেয়ে বলেন, ‘আসামি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর কথা ছড়িয়েছেন। তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। মানসম্মান ক্ষুণ্ন করেছেন। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এইগুলো তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে করেছেন।’

আবদুল্লাহ আবু কোর্টে বলেন, ‘যেহেতু তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করেছেন, তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে আর কারা জড়িত আছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এখানে সে একা না, তার সাথে অন্য কেউ থাকতে পারে।’

এ সময় হেলেনা জাহাঙ্গীরের পক্ষে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এজাহার দেখলে ২৫, ২৯ ৩২ ধারায় যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে কোথাও কোনো উল্লেখ নেই, কখন কোথায় কীভাবে কার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেয়া হয়েছে। তার কোনো উল্লেখ নেই। আসামি একজন সিআইপি, এই মামলায় রিমান্ড কী দরকার? রিমান্ডের কোনো যুক্তি নেই।’

তিনি বলেন, ‘মামলায় বলা হয়েছে তিনি মন্ত্রীদের মানহানি করেছেন। তবে কোনো মন্ত্রী বলে নাই যে এই হেলেনা জাহাঙ্গীরের বক্তব্যে তার মানহানি হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক পক্ষ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আসে নাই। আমি বলতে চাই তার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হানড্রেড পার্সেন্ট অনুগত্য রয়েছে। এখানে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কোনো কিছুই হয়নি।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মামলার পুরো এজাহার দেখেছি। পুরো এজাহারের মধ্যে হেলেনা জাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ সুস্পষ্ট নেই।’

এ সময় বিচারক বলেন, মামলার ফরোয়ার্ডিংয়ে বলা হয়েছে, ‘এই আসামি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মন্ত্রী, এমপি ও দেশের সম্মানিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে সরকারের ভাবমূর্তি ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।’

ফরোয়ার্ডিংয়ে আরও বলা হয়েছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর সরকারবিরোধী কার্যকলাপ ও পরিকল্পনায় যুক্ত। এর সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা মহল জড়িত আছে, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এই গোষ্ঠী কারা তা জানতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ।

আবু বলেন, ‘তিনি এখন আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যেহেতু তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাই আমি এটির প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সে যেহেতু আওয়ামী লীগের কেউ না, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সে কোনো কিছু করতে পারে না।’

গৃহবধূ থেকে ব্যবসায়ী হয়ে সিআইপির (কমার্শিয়ালি ইমপর্টেন্ট পারসন) স্বীকৃতি পাওয়া এই ব্যবসায়ী সম্প্রতি তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠেন ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের প্রচার চালাতে গিয়ে। আওয়ামী লীগের এই নামে কোনো সংগঠন নেই। তিনি এই সংগঠনকে সামনে নিয়ে আসার পর ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন।

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পদ হারান হেলেনা। ক্ষমতাসীন দলের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যপদ ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় তাকে। ওই ঘটনায় পিছুটান দেন হেলেনা। বলেন, তিনি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে এই সংগঠনের কেউ না। তাকে সম্প্রতি সভাপতি হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত