সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ আগস্ট, ২০২১ ২১:০০

বাংলাদেশিদের মত রোহিঙ্গাদেরকেও সব সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব বিশ্বব্যাংকের

বাংলাদেশি নাগরিকরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা পায়, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরকেও তার সব সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মানলে বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছে তারা। তবে বাংলাদেশ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির প্রস্তাব, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে জমি কেনার সুযোগ দেয়া হোক, তাদের স্বাধীনভাবে যাতায়াত করতে দেয়া হোক, তাদের নিজেদের মধ্যে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হোক।

সোমবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিশ্বব্যাংকের এই প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের এই প্রস্তাব বিষয়ে আমরা জানতাম না। আমরা জেনেছি ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা) মাধ্যমে। তারা বিশ্বব্যাংকের রেফারেন্স দিয়েছে।

‘তাদের প্রস্তাব হলো, রোহিঙ্গাদের অল রাইটস দিতে হবে। যাতে তারা কাজ করতে পারে সকল বাংলাদেশির মতো। তাদের লিগ্যাল রাইটস দিতে হবে। তাদের বার্থ, ডেথ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এনি ন্যাশনালাইজের মতো। তাদের ফ্রিডম অব মুভমেন্ট দিতে হবে যাতে তারা যেকোনো জায়গায় যেতে পারে। তাদের জমিজমা কেনার ক্ষমতা দিতে হবে; তারা যেখানে খুশি জমিজমা কিনবে। তাদের যা ইচ্ছা ব্যবসা করতে দিতে হবে। তাদের ফ্রিডম অব নির্বাচন দিতে হবে। যাতে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে; একদম নাগরিকের মতো। তাদের এমন স্থানে রাখতে হবে, যাতে তারা সহজে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। কোনো ধরনের ডিসক্রিমিনেশন করা যাবে না কাজের ক্ষেত্রে, মবিলিটির ক্ষেত্রে, জমিজমা কেনার ক্ষেত্রে, ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর বলছে, এই সুযোগ দিলে তারা কিছু টাকাপয়সা দেবে। সেটা দুই বিলিয়ন বা আরও বেশি ডলারের হতে পারে। ওরা বলছে, রিফিউজিদের জন্য বিশ্বব্যাংক দুই হাজার কোটি ডলারের একটি ফান্ড তৈরি করেছে। সেখান থেকে কিছু রোহিঙ্গাদের জন্য তারা দেবে যদি বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ইন্টিগ্রেড করে। তারা বলছে, এটা না করলে সমস্যা তৈরি হবে। স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সংঘাত তৈরি হবে। রোহিঙ্গা রিফিউজিদের সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ দিতে হবে।’

মোমেন বলেন, ‘আমরা বলেছি, প্রথমে আমাদের সংজ্ঞায় রোহিঙ্গারা রিফিউজি না। আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছি না। দে শ্যুড গো ব্যাক। দে আর ট্যাম্পোরারি পিপল, নট রিফিউজি। আর আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারও কখনও বলেনি তারা ফেরত নেবে না। আর কোনো শরণার্থী আশ্রয় দিইনি। আমরা বিপদগ্রস্ত, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি। তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ তাদের মাতৃভূমিতে আছে। তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ করতে হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘তারা (ইউএনএইচসিআর) রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। আমরা বলেছি, না আমরা এটা গ্রহণ করতে পারছি না। রোহিঙ্গা সমস্যা সাময়িক। এ নিয়ে ট্যাম্পোরারি কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। আমরা আমাদের এই কথা তাদের জানিয়ে দিয়েছি।’

দাতাদের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র থেকে যে সহায়তা আসে, সেটি বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া হয় না। তিনি বলেন, ‘তার চেহারাও আমরা দেখি না। অথচ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা বাংলাদেশের জন্য টাকা পাঠায়। তা আমরা এক পয়সাও পাই না। এগুলো খরচ করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, ইউএনএইচসিআর ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নামে টাকা পাঠায়। কিন্তু তা অ্যালোকেট করে বিভিন্ন সংস্থার নামে, বিভিন্ন এজেন্সির কাছে, রোহিঙ্গাদের জন্য। বাংলাদেশ সেখান থেকে এক পয়সাও পায় না। এজেন্সিগুলো কীভাবে সেই টাকাপয়সা খরচ করে, আমরা তার খবরও পাই না। তাই ওগুলো আমাদের না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি সেদিন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমি ওনাকে বললাম, ‘আপনারা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক টাকাটুকা দিচ্ছেন। এর ছোট্ট একটা অংশ তো বাংলাদেশ সরকার, জনগণের উন্নয়নের জন্য দেয়া উচিত।’ উনি বললেন, ‘আমরা তো বাংলাদেশের লোকাল পিপলের জন্যও টাকা দিই।’ আমি বললাম, ‘কোথায়? আপনি তো বলছেন, কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নাই।’

‘তারা ১৩৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তার মধ্যে ৫ মিলিয়ন ডলার স্থানীয়দের জন্য। তাও তা ওনাদের এজেন্সির মাধ্যমে। আমরা এক টাকাও পাই না। ওনারা হেল্প করতেছেন ওনাদের এজেন্সিগুলোকে। ওনারা বাইরে গিয়ে বড় গলায় বলে বেড়ান বাংলাদেশকে হেল্প করছেন। আদতে ওনারা হেল্প করছেন ওনাদের এজেন্সি ও রোহিঙ্গাদের। রোহিঙ্গাদের হেল্প করা তো তাদের দায়িত্ব। সেটা তো একা আমাদের দায়িত্ব না।’

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ছুটে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১০ লাখের বেশি। কারণ, আশির দশক থেকেই তারা দলে দলে আসছে বাংলাদেশে।

এতদিন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের রাখা হলেও সম্প্রতি নোয়াখালীর দ্বীপ ভাসানচরে আশ্রয় পরিকল্পনা করে এরই মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা।

 

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত