সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০২:১৬

জাফরুল্লাহর বয়স হয়েছে, তাই উলটাপালটা বলছেন: ফখরুল

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বিভ্রান্তিকর ও উলটাপালটা কথাবার্তা না বলতে অনুরোধ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে নিজ বাড়িতে স্থানীয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ডা. জাফরুল্লাহকে এই অনুরোধ জানান।

প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনানায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ। ঐ সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র মেনে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। গঠনতন্ত্রে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেও কোনো দায়িত্ব ছিল না। আমি এক খোলা চিঠিতে খালেদা জিয়াকে বলেছিলাম—গঠনতন্ত্রটা ভালো করে পড়েন। আপনি পুরোটা ভালো করে পড়েননি হয়তো। এছাড়া তারেক রহমান তখনই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি আরো পরে দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন।’

ঠাকরগাঁওয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ঐ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে আছেন। তারেক রহমান আগেও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। দলের মধ্য থেকেই তিনি ধারাবাহিকভাবে এই পদে এসেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাফরুল্লাহ সাহেবের বয়স হয়ে গেছে। তিনি অত্যন্ত সম্মানিত লোক, জ্ঞানীগুণী লোক। কিন্তু বয়স হয়ে গেলে মানুষ কিছু উলটাপালটা কথা বলতেই পারেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তার মন্তব্যটা যুক্তিসঙ্গত না। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, কথা বলছেন। কিন্তু তিনি একবারও ভাবছেন না, এসব কথা বললে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন কিছুটা ব্যাহত হবে। আমি তাকে অনুরোধ জানাব—যে সমস্ত কথায় জনগণ বিভ্রান্ত হয় সেসব কথা যেন তিনি না বলেন। তারেক রহমানই বিএনপির নেতা। তারেক রহমানই আমাদের সুসংগঠিত করছেন। পুরো দল তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। দল তার হাতে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং তিনি সাংগঠনিক দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা আশাবাদী যে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে অচিরেই দল সুসংগঠিত হবে এবং একটা আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারব। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল আরো বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময় চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনেকেই বলেছেন বিএনপি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু বিএনপি ধ্বংস হয়নি। বিএনপি আবার খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জেগে উঠেছে। গত ১২ বছর ধরে শুধু বিএনপি নয়, গোটা দেশে একটা বড় রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে সংকটের সামনে আছে। এ সময়ে আমাদের দলের বড় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা হলো দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে নির্বাসিত।

উল্লেখ্য, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে গেলে সেই রাতে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় বিএনপি। এর আগে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান।জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত না থাকলেও তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত