সিলেটটুডে ডেস্ক:

২৭ এপ্রিল, ২০২২ ২২:৪৮

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে আইনজীবীদের হাতাহাতি

নির্বাচনের প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এখনও কাটেনি। সে জটিলতাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি ও সমিতির একটি কক্ষের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

তালা ভেঙে নতুন করে ভোট পুনর্গণনায় যুক্ত হন আওয়ামী আইনজীবীরা। অন্যদিকে তালা ভেঙে ভোট গণনার প্রতিবাদ জানিয়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

তার আগে বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় আইনজীবী সমিতি ভবনের তিন তলায় কনফারেন্স রুমের সামনে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয়। পরে তালা ভাঙাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি, পরে কিলঘুষির মতো ঘটনা ঘটে। এর পরই কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্ব একটি দল সমিতির ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে রাখা ব্যালট পেপার পুনর্গণনার জন্য রুমের তালা ভাঙতে যায়। অবশ্য কক্ষটির তালা ভাঙার আগেই তারা বিষয়টি সংবাদ সম্মেলন করে জানায়।

ভোট পুনর্গণনার জন্য আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা কনফারেন্স রুমের তালা ভাঙা শুরু করেন। তখন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাতে বাধা দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি স্লোগান, হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

এ সময় কয়েকবার বাইরে থেকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন উপকমিটি এ ভোট গ্রহণ করে।

এর এক দিন পর ১৭ মার্চ ভোট গণনা করে রাতে ফলাফল ঘোষণার সময় আওয়ামপন্থি আইনজীবী প্যানেল পক্ষের সম্পাদক প্রার্থী ভোট পুনর্গণনার দাবি করে লিখিত আবেদন জানালে তখন ফল ঘোষণা আটকে যায়।

ওই রাতে ফল ঘোষণা না করে মশিউজ্জামান সমিতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানান।

দীর্ঘ এক মাস ১৩ দিন পর গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাবেক সহসভাপতি অজি উল্লাহ দাবি করেন, গত ১২ এপ্রিল সমিতির কার্যকরী কমিটির মেয়াদের শেষ এক সভায় তাকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি নির্বাচন উপকমিটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন-পরবর্তী অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য গত ১৬ এপ্রিল থেকে কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে (সম্পাদক) নোটিশ করি, বারের অফিসে নোটিশ করি। কক্ষের দাবি হস্তান্তরের জন্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ই-মেইলে পত্র প্রেরণ করি। তিনি চাবি হস্তান্তর করেননি, তারপর তার সাথে আদালতে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি।’

বর্তমানে সমিতির কার্যক্রম ‘অচলাবস্থা’ বিরাজ করছে উল্লেখ করে অজি উল্লাহ বুধবার নির্বাচনের অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করবেন বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

এদিকে আইনজীবী সমিতির বর্তমান সম্পাদক ও বিএনপিপন্থি আইনজীবী প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, অজি উল্লাহ নির্বাচন পরিচালনায় উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যে দাবি করছেন, তা সঠিক নয়। যে সভায় তাকে নির্বাচনের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বায়ক করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন, তা সত্য নয়।

গত ১২ এপ্রিল সমিতির কোনো সভাও অনুষ্ঠিত হয়নি বলে দাবি করেন কাজল।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “অজি উল্লাহর নেতৃত্বে তথাকথিত নতুন নির্বাচন সাবকমিটি গঠন, ভোট কাউন্টিং বা নির্বাচনি ফলাফল বিষয়ে তাদের যেকোনো পদক্ষেপ অবৈধ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সুমহান ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার নির্লজ্জ অপচেষ্টা। এ ধরনের অবৈধ, নীতিহীন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

আওয়ামীপন্থি আইনজীবী অজি উল্লাহ মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘বারের কল্যাণ ও মর্যাদা রক্ষার জন্য এবং অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি। স্বচ্ছভাবে সম্পাদক পদে ভোট ফ্রেশ গণনা করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’

গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনের ৫১টি বুথে সমিতির ২০২২-২৩ মেয়াদের এ নির্বাচনের ভোট নেয়া হয়। ৮ হাজার ৬২৩ জন ভোটারের মধ্যে দুই দিনে ভোট দেন ৫ হাজার ৯৮৩ জন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত