সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জুন, ২০২২ ১৮:৫৯

আসাম ও মেঘালয়ের বন্যা-বৃষ্টিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সিলেটের পরিস্থিতি

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে ভারি বৃষ্টিতে প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে রাজ্য দুটির অন্তত ১ হাজার ৭০০ গ্রাম। অবিরাম বৃষ্টিপাতের মধ্যে রাজ্য দুটির বিভিন্ন এলাকায় ভূমিধস হয়েছে। এতে আসামে মৃত্যু হয়েছে অন্তত চার জনের। আর মেঘালয়ে চার শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

আসাম-মেঘালয়ের বন্যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। রাজ্য দুটি থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে হু হু করে। ইতোমধ্যে সিলেট-সুনমাগঞ্জের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এর আগে মে মাসের মাঝামাঝিতে বন্যা হয় সিলেটে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, মে মাসের বন্যায় গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি হয় সিলেটে। তবে চলমান বন্যা গত মাসের রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি প্লাবিত এলাকার মানুষদের।

জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, সদর, দক্ষিণ সুরমা, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিলেট নগরের অন্তত ৩০ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে সুনামগঞ্জ জেলার ৮০ শতাংশ অঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। শহরের প্রায় সব বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। শুক্রবার সকালে সুরমা পয়েন্টে বন্যার পানি বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

তারা আশঙ্কা করছেন, আসাম-মেঘালয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর প্রভার পড়বে। এতে বন্যা আরও দীর্ঘ হবে।

এদিকে এনডিটিভি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বন্যাকবলিত আসামের ২৫ জেলার অন্তত ১১ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।

আসামে বন্যায় নবগঠিত বাজালি জেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

আসাম রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর ১৯ হাজার ৭৮৩ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবেছে ১ হাজার ৫১০টি গ্রাম।

টানা তিন দিন ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টিতে আসামের রাজধানী গোয়াহাটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পুরো শহরের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজনকে বাড়ি থেকে বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

টানা বৃষ্টিপাতে ডিহিং নদীর পানি বৃদ্ধির পর বুধবার বাকসা জেলার সুবনখাতা এলাকার একটি সেতু আংশিক ধসে পড়ে।

নিম্ন আসামের রানগিয়া বিভাগের নালবাড়ি ও ঘোগরাপারের মধ্যবর্তী লাইন ডুবে যাওয়ায় অন্তত ছয়টি ট্রেন যাত্রা বাতিল ও চারটির আংশিক বাতিল করতে হয়েছে।

এছাড়া মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে বন্যায় বাড়ি ধসে চার শিশুর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পশ্চিম খাসী হিল জেলায় ২৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

প্রবল বৃষ্টি ও বন্যায় ভারতের ৬ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের কিছু অংশ ধসে গেছে। এ কারণে মহাসড়কটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ত্রিপুরা, দক্ষিণ আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ের কিছু অংশের যোগাযোগের একমাত্র উপায় মহাসড়কটি।

বুধবার আসাম ও মেঘালয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ২৭২ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এই দুই রাজ্যে চলা রেড অ্যালার্টের সময়সীমা রোববার পর্যন্ত বাড়িয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত