সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জুন, ২০২২ ০৩:৩১

৮৬ শতাংশ হাওর ভরাটে পানিধারণের ক্ষমতা কমে গেছে: গবেষণা

গত ৩২ বছরে দেশের হাওর অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৮৬ শতাংশই ভরাট হয়ে গেছে। এতে হাওরে পানিধারণের ক্ষমতা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় এবার সিলেটসহ আশপাশে বন্যার ভয়াবহতা দেখা গেছে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক যৌথ গবেষণার প্রতিবেদন তুলে ধরে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী ও ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) যৌথভাবে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। বুয়েটের দুই গবেষক হলেন সদ্য পাস করা ইনজামামুল হক ও মারিয়া মেহরিন।

এতে বলা হয়, হাওরের বাকি অংশটুকু রক্ষা করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন–সংক্রান্ত এ গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে হাওরের মোট আয়তন ছিল প্রায় ৩ হাজার ৩৪ বর্গকিলোমিটার। ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে প্রায় ৪০৬ বর্গকিলোমিটার। সে হিসাবে হাওর কমেছে প্রায় ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় ১৯৮৮, ১৯৯৪, ২০০০, ২০০৬, ২০১৩ ও ২০২০ সালের চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় হাওর আছে। এবারের বন্যায় এসব হাওর এলাকার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও নেত্রকোনায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, কিছু এলাকায় ২০০০ থেকে ২০০৬ এবং কিছু এলাকায় ২০০৬-২০১৩ এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাওর ভরাট হয়েছে। এই সময়ে হাওর নিয়ে মহাপরিকল্পনা ছিল না, সরকারি তদারকিও ছিল না। কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। এ কারণে এই সময়ে হাওর ভরাট বেশি হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

বন্যা নিয়ন্ত্রণে হাওরের গুরুত্ব তুলে ধরে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বৃষ্টি হলে হাওর এলাকা অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। এ ছাড়া হাওরের সঙ্গে নদ-নদীর সংযোগ থাকার কারণে প্রাকৃতিকভাবে হাওরের পানি নদীতে চলে যায়। কিন্তু গত কয়েক দশকে হাওর ভরাটের পাশাপাশি রাস্তাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে বৃষ্টির পানি ব্যবস্থাপনার প্রাকৃতিক পদ্ধতিটা ধ্বংস করা হয়েছে।

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, হাওর শুধু শস্য ও মৎস্যভান্ডার নয়, এগুলো জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্রও। এ ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শুষে নেয় হাওর অঞ্চল। তাই হাওর রক্ষা না করতে পারলে ব্যাপক পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেবে। অবকাঠামোর মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদী শাসন না করে, বন্যার সঙ্গে কীভাবে বসবাস করা যায়, তার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আইপিডির পরিচালক নগর পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, হাওর অঞ্চল এই মুহূর্তে চরম দুর্যোগের মধ্যে আছে। এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে। উন্নয়নের নামে হাওর অঞ্চল ভরাট করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে জমির স্বল্পতা আছে, যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। তবে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জলবায়ু বিবেচনায় নিয়ে এ উন্নয়ন করতে হবে। না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নগর পরিকল্পনাবিদ চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত