সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ মার্চ, ২০২৪ ১৪:২২

মিয়ানমার বিষয়ে আমরা নাক গলাতে চাই না: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা

মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছেন, আমাদের ওপর কোনরকমের আক্রমণ হলে আমরা প্রস্তুত।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমাদের ওপর আগ্রাসনের কোনো সম্ভাবনা দেখি না। তারপরও আমরা প্রস্তুত। আমাদের ওপর যদি কোনো রকম আক্রমণ আসে, আমরা ব্যবস্থা নেব।’

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনের প্রথম কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘মিয়ানমার পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বহিঃশক্তি সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। কোথাও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হলে সবাই এখন নাক গলাতে চায়। আমরা ওই ব্যাপারে (মিয়ানমার পরিস্থিতি) মোটেও নাক গলাতে চাই না। আমাদের জনগণ যাতে শান্তিতে থাকে এবং রোহিঙ্গা যারা আছে তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সজাগ থাকি। প্রধানমন্ত্রীর থেকে নির্দেশ আছে, আমরা বিশ্ব শান্তির জন্য কাজ করব, আমরা কখনও আগ্রাসী ভূমিকায় যাব না। এজন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের খুবই ভালো সম্পর্ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওখানে সিভিল প্রশাসন যেমন সম্পৃক্ত, তেমনি বিজিবিও সম্পৃক্ত। সেনাবাহিনী ততটা সম্পৃক্ত নয়। কারণ এখনও যুদ্ধ লাগেনি, যে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হতে হবে।’

ডিসিরা কী প্রস্তাব দিয়েছেন জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘ওনারা (ডিসি-বিভাগীয় কমিশনার) হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা হেলিকপ্টার ব্যবহার অনেক কমিয়ে দিয়েছি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তেলের ওপর প্রভাব পড়েছে। যার কারণে হেলিকপ্টার ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিসিরা বলছিলেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী পান না। এটা হয়তো সাময়িক। তবে যেকোনো সময় যে কারও অসুবিধা হলেই হেলিকপ্টার সাপোর্ট দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া ইলিশ মাছ ধরার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসে ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে যায়। ওটার ব্যাপারে নৌ-বাহিনীপ্রধান বলেছেন, কী কী ব্যবস্থা নেবেন।’

তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা সামরিক বাহিনী তো স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা চাচ্ছি, ওনাদের সঙ্গে বিশেষ করে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় একসঙ্গে কাজ করতে। আমাদের তরফ থেকে ডিসি সাহেবদের অনুরোধ ছিল, আগুন ধরার বিষয়ে আজকেই দেখা যাবে চিনির বাজারে চিনির দাম বেড়ে যাবে। কোথায় কার চিনির গুদামে আগুন ধরেছে, এটার ইফেক্ট হয়তো আসবে কিছুটা বাজারে, সেটি খুবই সামান্য আসার কথা। সেটি আমাদের মজুদের তুলনায় এক শতাংশও না। কিন্তু দেখা যাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা ওটার অজুহাত দিয়ে চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এ ব্যাপারে বলা হলো, ওনারা যাতে নজর রাখে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বলব এগুলো মনিটরিং করতে।’

ক্রস বর্ডার কিলিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো পরিকল্পিত কিছু না। এখানে দুই পক্ষেরই দোষ থাকে। আমাদেরও দোষ, বর্ডারের ওপারে যারা থাকে তাদেরও দোষ। এটাকে কিলিং না বলে ইনসিডেন্ট বলা যায়। চোরাচালনাকারীরা এতটাই ফেরসাস হয় যে, মাঝে মাঝে তারা বিএসএফকে আক্রমণ করে বসে। তখন তারা গুলি করে বাধ্য হয়ে। আমাদের তরফ থেকেও গুলি হয় মাঝে মাঝে।’

তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব ঘটনা অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে, সেদিকে আমরা বেশি সজাগ আছি। যেমন আগুন লাগা, এই লাগা, ওই লাগা এগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ হয়, তখন বিনিয়োগকারীরা আসবে না। এসব ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। এ ছাড়া আর কোনো সমস্যা দেখি না। তবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমরা সবাই যৌথভাবে কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিভিল মিলিটারি রিলেশনশিপ (সিএমআর) এটা যেনো আরও উন্নত হয় সেজন্য আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ ছিল। ডিসি সাহেব ও বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে। এটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নিব। ওনারাও (ডিসি-বিভাগীয় কমিশনার) চাচ্ছে আমাদের কাছাকাছি আসতে, আমরাও চাচ্ছি ওনাদের কাছাকাছি যেতে। আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্য অনেক বেশি। ওনারা আমাদের এখানে ট্রেনিং করতে আসেন, আমরাও যাই। এতে আমাদের বন্ধুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত