সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:৩৯

আওয়ামী লীগে জামায়াতিরা ঢুকছে, সতর্ক হন: শাহরিয়ার কবির

জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনৈতিক চাপ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দলটির বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের ক্ষমতাসীন দলে যোগদানের প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানান তিনি।

এই বিষয়ে সরকারের ভেতর ‘নানা সমস্যা আছে’ মন্তব্য করে শাহরিয়ার কবির বলেন, “একদিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হবে না। অন্যদিকে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে, তাদের ফুল দিয়ে গ্রহণ করা হচ্ছে।

“এ দলটি বিএনপিকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে, বিএনপির জামায়াতীকরণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এখন তারা আওয়ামী লীগের শরীরের ভেতরে মওদুদীবাদের বীজ ঢোকাতে চায়। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড সতর্ক না হলে দেশের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।”

নব্বই দশকের শুরুতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কমিটি’র ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার এক মতবিনিময় সভা ও মিলনমেলায় শাহরিয়ার কবির একথা বলেন।

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াতের আমির ঘোষণার পর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরের বছর ১৫ জুন এই কমিটি গঠিত হয়েছিল।

তার চার দিন পরে ১৯ জুন গঠিত হয় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। পরবর্তী সময়ে দুই আলাদা মঞ্চ ঐক্যবদ্ধ হয় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় কমিটি’ নামে দেশব্যাপী যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবির ধারবাহিক আন্দোলন চালায়।

ওই জাতীয় সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতে গোলাম আযমের প্রতীকী ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।

২৪ বছর পর এই অনুষ্ঠানে শাহরিয়ার কবিরসহ বক্তারা সেই সময়ের আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করেন। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ড কার্যকর ওই আন্দোলনের সফলতা বলেও মন্তব্য করেন তারা।

শাহরিয়ার কবির নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ মঞ্চের মাধ্যমে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের জন্য গণআদালত তৈরির ঘোষণার সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী এখন পাকিস্তানিদের বিচারের জন্য গণআদালত করার কথা বলছেন। আমরা বলেছি, এ ধরনের কোনো কিছু করে জাহানারা ইমামের গণআদালতকে প্রহসনে পরিণত করবেন না।

“তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকার বিচার না করায় সে সময়ে নাগরিক আন্দোলনের প্রয়োজন হয়েছিল। সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। একটি ট্রাইব্যুনাল বিচার করছে, প্রকৃত বিচার হচ্ছে।”

১৯৫ পাকিস্তানি সৈন্যসহ সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জামায়াত নিষিদ্ধ এবং পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান শাহরিয়ার কবির।

“কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। আল বদর, আল শামস বাহিনীর সকলের বিচার করতে হবে। ১৯৫ জনসহ আরও যারা পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী, সকলকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে।”

পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, “এটা জার্মানি দিচ্ছে, জাপান দিচ্ছে। জার্মানি যদি হলোকস্টের ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে আমরা কেন পাকিস্তান থেকে ক্ষতিপূরণ নেব না?”

একাত্তরে শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার সংশয় প্রকাশের সমালোচনা করে মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার আইন করে তার বিচারের দাবি জানান শাহরিয়ার কবির।

অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহসভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী বলেন, “আমার মতো অনেকের এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গেজেট হয়নি। সে বিষয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঐক্যন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, জাসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, সাংবাদিক সেলিম ওমরাও খান বক্তব্য দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত