সিলেটটুডে ডেস্ক

০৫ নভেম্বর, ২০২৪ ১৫:১৪

তাবলিগের জুবায়েরপন্থীদের সমাবেশে সাদ কান্ধলভিকে ঠেকানোর ঘোষণা

তাবলিগ কওমি মাদ্রাসা ও দ্বীন রক্ষার্থে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের মহাসম্মেলনে লাখো লোকের সমাগম হয়েছে। এই সম্মেলনে তাবলিগ জামাতের দুইপক্ষের বিরোধ ওঠে এসেছে। তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির বিপক্ষে এই মহাসম্মেলন করছেন প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারীরা।

সম্মেলনে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামরা বলছেন, দেশে ইজতেমা একবার হবে, দুবার নয়। ইজতেমার মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থীদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। ভারতের মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করলে ঠেকানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাবলিগের সাধারণ সাথী ও কওমিপন্থী আলেম-ওলামারা।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামি মহাসম্মেলনে বক্তব্যের সময় জুবায়েরপন্থী আলেম-ওলামারা এ কথা বলেন।

এ সময় আলেম-ওলামারা অভিযোগ করে বলেন, সাদপন্থীরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তারা এখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। ইসলামকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। যদি মাওলানা সাদকে দেশে এনে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান মানুষ সেটা মেনে নেবে না।

মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বলেন, সাদ স্বঘোষিত তাবলিগের আমির বলে ঘোষণা দেয়। কোরআন হাদিস, আলেম-উলামা, আল্লাহর অলি, নবী ও স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে কুফরি বক্তব্য দিতে থাকে৷ তাই সারা বিশ্বে তাবলিগের মূলধারা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। সাদের অনুসারীরা হচ্ছে কাদিয়ানী গ্রুপ। তারা ইসলামের মূলধারায় বিভক্তি সৃষ্টি করছে। তাবলিগের নামে কাদিয়ানীদের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানিরা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত।

নরসিংদীর জামিয়া কোরআনিয়া বৌয়াকুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা ইসমাইল নুরপুরী বলেন, আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করলো- সাদ অনুসারীরা বাতিল, গোমরাহ। আমরা চাই, তিনি যেন বাংলার জমিনে পা রাখতে না পারে। তারা যেখানেই যায় সেখানেই রক্ত ক্ষয় হয়।

জামেয়া হোসাইনিয়া মিরপুর মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া বলেন, মাওলানা সাদ এমন কিছু বক্তব্য দিচ্ছেন যা একজন ইসলাম প্রচারকের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তিনি নবীদের সমালোচনা করেছেন, সাহাবা ও দ্বীন ও ইসলাম সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন। যে ব্যক্তি এমন কথা বলেন তিনি তাবলিগের আমির হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তাকে আনার কোনো ষড়যন্ত্র যদি চলে তাহলে তিনি যেদিক দিয়েই আসবেন সেদিক দিয়ে লংমার্চ চলবে।

কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বিদের উদ্দেশ্য করে কাকরাইল মসজিদের কোনো স্থান ও বিশ্ব ইজতেমার মাঠ বাতিলপন্থীদের জন্য ছেড়ে না দেওয়ারও আহবান জানান তিনি।

ময়মনসিংহের মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী বলেন, কোনো সন্তান বাবাকে হত্যা করলে তার বাবার ওয়ারিশানা যেমন পায় না; তেমনি মাওলানা সাদও তার পিতার আদর্শকে হত্যা করেছেন। তাই তিনিও তার পিতার ওয়ারিশানা পাবেন না।

মহাসম্মেলনের আহ্বান জানানো আলেমদের মধ্যে ছিলেন আল্লামা শাহ্ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আল্লামা খলিল আহমাদ কাসেমী, আল্লামা আবদুল হামিদ, আল্লামা আবদুর রহমান হাফেজ্জী, আল্লামা নুরুল ইসলাম, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, আল্লামা শাইখ জিয়াউদ্দিন, আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান, আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ রহমানি, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা মুস্তাক আহমদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা মুফতি দেলাওয়ার হোসাইন, মাওলানা জাফর আহমাদ, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আবদুল আউয়াল, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সা’দী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জিয়াউদ্দিন, মাওলানা আবদুল হক, মাওলানা ইউনুস, মাওলানা নুরুল হক, মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা আনাস, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা শওকত হোসাইন সরকার, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ আল ফরিদী ও মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী প্রমুখ।

এদিকে, ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রথম পর্বে শুরায়ি নেজামের অধীনে তাবলিগের সাথী, আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের অনুসারীরা অংশ নেন। তবে এবার মাওলানা সাদের অনুসারীরা দাবি করছেন, তারা প্রথম পর্বে ইজতেমা করতে চান। এই দাবি নিয়ে শুরায়ি নেজামের তাবলিগের সাথী, কওমি মাদরাসার আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষ বিরোধিতা করেন এবং তাদের পক্ষ থেকে ইসলামি মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত