সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ মে, ২০১৬ ২১:৫৫

মসজিদের মাইকে গুজব রটিয়ে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন সেলিম ওসমান

নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এমপির সামনে অপদস্ত করার পেছনে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিশেষের স্বার্থ জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারেই ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করার মিথ্যা অভিযোগ তুলে এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করা হয়েছে।

ঘটনার শিকার ওই শিক্ষক বলছেন, তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন ইস্যুতে ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে সবশেষ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি মুসলমান ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের নেতিবাচক কথা বলেননি। ছাত্রকে মারধরের অভিযোগটিকে নানাভাবে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের স্থলে অন্য একজনকে বসাতেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

পিয়ার উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি মসজিদের মাইকে এমন প্রচারণা চালিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করেন এমপি সেলিম ওসমানের অনুসারীরা।

গত শুক্রবার সকালে এই লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এ সময় সেলিম ওসমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকের স্ত্রী।

ওই শিক্ষক পুলিশ প্রহরায় বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ইসলাম তার বোন পারভীন আক্তারকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে বসানোর জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন। তিনি (শ্যামল কান্তি) এ স্কুলের প্রায় সতের বছর ধরে প্রধান শিক্ষক। টিনশেড ভবন থেকে স্কুলকে এখন পাকা ভবনে এনেছেন তিনি। তাই তিনি রাজি হচ্ছিলেন না স্কুলের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে। সম্প্রতি তার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত ক্লাসে বসে কোকিলের ডাক, কাকের ডাক দিয়ে দুষ্টুমি করছিল। তিনি না করলেও ওই ছাত্র শোনেনি। এতে তিনি রিফাতকে শাসন করেন।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, কমিটির সদস্য ইউএনও অফিসের পিয়ন মিজানুর রহমান, মতিউর রহমান মিজু, মোবারক মিলে গুজব রটান যে রিফাতকে মারার সময় তিনি ইসলাম ধর্মবিরোধী কথা বলেছেন। তারা রিফাতের মা রিনা বেগমকে দিয়ে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দেওয়ায়। শুক্রবার তাকে স্কুলে ডেকে আনা হয় এ বলে যে, স্কুলে এমপি সাহেবের দেওয়া পঞ্চাশ লাখ টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে মিটিং হবে। তিনি স্কুলে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে পার্শ্ববর্তী মসজিদের মাইকে তিনি ধর্মীয় অবমাননা করেছেন বলে প্রচার করে জনসাধারণকে স্কুলে আসতে আহ্বান জানানো হয়। জনতা স্কুলে এসে ম্যানেজিং কমিটির লোকজনের সহায়তায় তাকে গণপিটুনি দিতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর কী হয়েছে তিনি জানেন না।

এ ব্যাপারে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি জানতে পারি যে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি সেখানে পুলিশ পাঠাই। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু তাকে বাইরে নিয়ে আসতে পারছিল না। কয়েক হাজার জনতা তাদের ঘিরে রেখেছিলো। খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়ে জনতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে কান ধরে ওঠ-বস করিয়ে তাকে উদ্ধার করি। তাকে থানায় নিয়ে নিরাপত্তা হেফাজতের ব্যবস্থা করি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের স্ত্রী সবিতা হালদার বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। তারা এমনভাবে গুজব রটিয়েছে যে, আমরা আবারো হামলার শিকার হতে পারি।’

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত