১৮ জুন, ২০১৬ ২১:২০
লক্ষাধিক মুফতি ও আলেম-ওলামা জঙ্গিদের জানাজা পড়াও হারাম বলে মত দেওয়ার পাশাপাশি তারা বলছেন, যারা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মারা যাবেন তারা শহীদের মর্যাদা পাবেন।
ইসলামের নামে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে ‘হারাম’ আখ্যায়িত করে দেশের এক লাখ আলেম, মুফতি ও ইমামের সই করা ৩২ পৃষ্ঠার ফতোয়া প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির দাবি, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে প্রকাশ করা হয়েছে ওই ফতোয়া।
শনিবার (১৮ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আলেমদের এই ‘ফতোয়া’ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ইমাম মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
গত দেড় বছরজুড়ে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, অধ্যাপক, বিদেশি, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষুর ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে একই কায়দায় হামলার প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে এ মত পাওয়া গেল।
সংবাদ সম্মেলনে মওলানা মাসঊদ বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামের নাম ব্যবহার করে কতিপয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের উদ্দেশ্যে মহাগ্রন্থ কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
মানুষের চোখে ইসলামকে একটা বর্বর নিষ্ঠুর ও সন্ত্রাসী ধর্মরূপে চিত্রিত করছে। এতে সরলমনা কেউ কেউ বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন।”
‘ফতোয়া’র মূল অংশ পুস্তক আকারে প্রকাশ করে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জঙ্গিদের অনেকেই ‘জিহাদি’ বললেও তারা আসলে ‘সন্ত্রাসী’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইসলাম সন্ত্রাস সমর্থন করে না। আর যারা বেহেশত পাওয়ার আশায় আত্মঘাতী হামলা করছে, বলছে মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী, তারা কোরআন ও হাদিসের আলোকে বেহেশত পাবে না। তাদের স্থান নিশ্চিত দোজখে।
“এমনকি ধর্মের নামে সন্ত্রাসকারী, জঙ্গি, গুপ্ত হত্যাকারীদের জানাজার নামাজ পড়াও হারাম। আর যারা এই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মারা যাবে তারাই শহীদ হবেন। ”
ফতোয়ায় ১০টি প্রশ্ন রয়েছে-
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জিহাদ হল ইসলামের অন্যতম একটা নির্দেশ, পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হল হারাম ও অবৈধ।”
চতুর্থ প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “যারা বেহেশত লাভের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন, তারা জাহান্নামের এই পথ ছেড়ে দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে শান্তি ও হেদায়েতের পথে ফিরে আসতে হবে।”
পঞ্চম প্রশ্নের উত্তরে ‘আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হামলা ইসলামের দৃষ্টিতে ‘হারাম’ বলা হয়েছে।
নবম প্রশ্নের উত্তরে বলা আছে, “মুসলিম সমাজে বসবাসকারী অমুসলিমকে যদি কেউ হত্যা করে সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না। অমুসলিমদের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। এটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
ফতোয়ার সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ইসলামের নামে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ হারাম। যারা জঙ্গিবাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তারা বেহেশত তো দূরে থাক, বেহেশতের গন্ধও পাবে না। কারণ, ইসলামে কোনো বৃদ্ধ, নারী, শিশু, ধর্মীয় গুরু এবং অমুসলিম, অর্থাৎ, যারা যুদ্ধের আওতায় নয়, তাদের হত্যা নিষিদ্ধ। ইসলামে আত্মঘাতী হামলা বৈধ নয়। কারণ, আত্মঘাতীর জানাজা পড়াও ইসলামে বৈধ নয়।
ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, গত ৩ জানুয়ারি থেকে আলেমদের স্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়। গত ৩১ মে শেষ হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে পুলিশ সদর দপ্তরে ধর্মীয় নেতাদের একটি সভা হয়। ওই সভায় এ স্বাক্ষর গ্রহণের প্রস্তাব তুলে ধরার পর তা সভায় সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়। এরপর এ বিষয়ে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তারা সারা দেশের আলেমদের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে।
আলেম-ওলামাদের কাছে ১০টি প্রশ্ন রেখেছিল জমিয়তুল উলামা। জঙ্গিবাদীরা পবিত্র কোরআনের সূরা তওবার ৫ নম্বর আয়াতকে ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এ আয়াতের মাধ্যমে ইসলাম অস্বীকারকারীকে হত্যা করা বৈধতা পেতে পারে কি-না? এ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল এক লাখ মুফতির কাছে। তারা সহিহ মুসলিম ২ :২৩৬ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, শুধু মানুষ নয়, কোনো প্রাণীকে হত্যার বৈধতা ইসলাম দেয় না। সূরা বাকারার ২০৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা মুনাফেকের কাজ। মুসনাদে আহমাদের ৭০৭৬ নম্বর হাদিস উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মুসলিম হলো সেই ব্যক্তি যার কাছে সব মানুষ নিরাপদ।
আপনার মন্তব্য