সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:০৮

জঙ্গি সম্পৃক্ততায় আলোচনায় ধানমন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুল

ছবি: গুগল স্ট্রিটভিউ

সেনাবাহিনীর মেজর পদ থেকে অবসর নিয়ে জঙ্গিবাদে জড়ানো  জাহিদুল ইসলাম নিহত হবার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে রাজধানীর ধানমন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুল। এই স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও পরিচালকের জঙ্গিবাদ জড়িত হবার খবর পাওয়া গেছে। এই স্কুলটি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছিলেন জঙ্গি জাহিদুল। যিনি গুলশান হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।

শুধু জাহিদুলই নয় স্কুলটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষসহ অন্তত পাঁচজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার তথ্য আগে থেকেই ছিল।

জানা যায়, স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ জেনিফার আহমেদ ও গণিত শিক্ষক মনিরুজ্জামান মাসুদ হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে, শিক্ষক তেহজীব করিম ও মাঈনুদ্দীন শরিফ জামায়াতুল মুসলেমিন (পরে আনসার আল ইসলাম) , আহমেদ ওয়াদুদ জুম্মান ওরফে সাইফুল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং শিক্ষক জুবায়দুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম (সম্প্রতি নিহত) নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত।

২০০০ সালে ধানমন্ডির ৬এ সড়কে স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। এর প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন জেনিফার আহমেদ। তিনি এ দেশে হিযবুত তাহরীরের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মাওলার স্ত্রী। জেনিফার নিজেও হিযবুতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্কুলটির মূল উদ্যোক্তা ছিলেন জেনিফার আহমেদের বাবা লতিফ আহমেদ। যদিও বর্তমানে জেনিফার স্কুলটির সাথে অফিসিয়ালি আর যুক্ত নন।

স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, লেকহেড গ্রামার স্কুলের উদ্দেশ্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মনে তাঁর মুসলিম পরিচয় গেঁথে দেওয়া এবং সারা জীবন যেন সে এই বিশ্বাস ধরে রাখে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সন্তানকে ‘আল্লাহর খলিফা’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যেন সে সত্যিকারের ইসলামি বিশ্ব গড়ে তোলায় সহযোগিতা করতে পারে।

বর্তমানে স্কুলটির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, শুরু থেকে লেকহেড স্কুলকে হিযবুত তাহরীরের মতাদর্শ প্রচার হত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলটির একটি সূত্র বলছে, ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুসরণ করা হলেও, তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক বই পড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের। এসব বইতে জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মতাদর্শ অনুযায়ী ধর্মীয় ব্যাখ্যা দেয়া আছে।

২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের গুরুত্বপূর্ণ এক জঙ্গিকে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর নাম আহমেদ ওয়াদুদ জুম্মান ওরফে সাইফুল ওরফে ডেইজ ওরফে অর্ণব। পরদিন ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের সংবাদ পোর্টাল ডিএমডি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে জুম্মান পুলিশকে জানান, তিনি ২০১২ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। ওই বছরই তিনি লেকহেড গ্রামার স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি আল-কায়দার সাময়িকী ‘ইন্সপায়ার’-এর পঞ্চম খণ্ড বাংলায় অনুবাদ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ‘জঙ্গি বক্তব্য’ বাংলায় অনুবাদ করতেন, যা পরে আনসারুল্লাহর বিভিন্ন ব্লগে পোস্ট করা হতো।

গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার পর যে দশজন সন্দেহভাজন নিখোঁজ যুবককে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবারের পক্ষ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয় তাঁদের মধ্যে ধানমন্ডির জুবায়দুর রহমান লেকহেডের শিক্ষক এবং পান্থপথের আশরাফ মো. ইসলাম ওই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

বর্তমানে মাঈনুদ্দীন শরিফ, রেজোয়ান শরিফ ও তেহজীব নিরুদ্দেশ রয়েছেন। তেহজীবের বড় ভাই রাজীব করীম ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার ও পরে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। তেহজীবের বাবা জয়নুল করিম সুনামগঞ্জের একটি আসন থেকে ৯০ দশকে একবার সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিল। একসময় বাম রাজনীতি করা জয়নুল বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন তবে তিনি এখন রাজনীতির বাইরে আছেন।


লেকহেড গ্রামার স্কুলটির বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মমিতা ইসলাম। তিনি জানান আগের অধ্যক্ষ জেনিফার আহমেদ ২০০৯ সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তবে তিনি স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটিতে ছিলেন। প্রায় ১০ মাস আগে তিনি পুরোপুরি তাঁর মালিকানা প্রত্যাহার করে নেন।

এখন  স্কুলটির পূর্ণ দায়িত্ব আছেন হারুন-অর-রশীদ, যিনি হারুন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী।


সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

আপনার মন্তব্য

আলোচিত