সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ডিসেম্বর, ২০১৭ ২২:৩০

মেয়র আনিসুলের বাসায় প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেতারা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বনানীর বাসায় গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা সহ বিএনপি নেতারাও গেছেন।

শনিবার দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে তিনি মেয়রের বাসায় যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। এ সময় আনিসুল হকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতও করেন শেখ হাসিনা।

শনিবার দুপুরে বনানীর বাড়িতে উপস্থিত হন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।  

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, নির্দলীয় অবস্থান থেকে স্থানীয় সরকার যে চালানো যায়, উন্নয়ন করা যায়, সেটা তিনি দেখিয়ে গেছেন।

তিনি বলেন, সততা, যোগ্যতা, নিষ্ঠা ও সাহসী ভূমিকার মাধ্যমে যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান চালানো যায়, সেই স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন।

আনিসুল হক শুধু ব্যবসায়িক জীবনে নয়, সব কাজ পরিচালনায় তিনি নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন আমীর খসরু।

এরআগে দুপুর সোয়া ১টার পর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বাসায় পৌঁছে। আর বেলা ১টার দিকে মরদেহ বহন করা বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০২ নম্বর ফ্লাইটটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

লন্ডন থেকে বিমানে মরদেহ নিয়ে সঙ্গে এসেছেন আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক, ছেলে নাভিদুল হক। এই মুহূর্তে বাসার সামনে সর্বস্তরের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ বিকেল ৩টা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা হয়। বিকেল ৪টায় আসরের নামাজের পরপরই তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে নিজের ছোট ছেলের কবরে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে শুক্রবার বাদ জুমা (স্থানীয় সময় বেলা ১২টা ৫৭ মিনিটে) যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে আনিসুল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শিল্পপতি সালমান এফ রহমান, ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন, প্রয়াত মেয়রের ছেলে নাভিদুল হক ও ব্রেন্ট কাউন্সিলের সাবেক মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পারভেজ আহমেদসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। জানাজায় ইমামতি করেন রিজেন্ট পার্ক মসজিদের ইমাম।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক। মেয়ের সন্তান জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডন যান আনিসুল হক। গত ৪ আগস্ট তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ 'সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস' শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে গত ৩১ অক্টোবর তাকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। পরে থেরাপি দেওয়ার জন্য তাকে অন্য একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। এরইমধ্যে গত ২৬ নভেম্বর তার অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

আনিসুল হকের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মাতুলালয়ে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিটিভিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে মুখোমুখি অনুষ্ঠানও করেন। সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন আনিসুল হক। আশির দশকেই তিনি সাবেক সচিব নুরুল হকের দেশ গার্মেন্টে চাকরিজীবন শুরু করেন। পরে যোগ দেন মোহাম্মদী গ্রুপে। এক পর্যায়ে গার্মেন্ট ব্যবসায় যুক্ত হন। ২০০৫ সালে তিনি বিজিএমইএর সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া মেয়র হওয়ার আগে ২০০৮ সালে তিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতিও নির্বাচিত হন। ইতিমধ্যে তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের দায়িত্ব নেন। মেয়র হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যানের পদে আসীন ছিলেন। তার স্ত্রী রুবানা হক বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের দায়িত্বে আছেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। তাদের ছেলে নাভিদুল হক যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক ও দেশ এনার্জি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আনিসুল হক আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদের মনোনয়ন পান। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি দলীয় প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে পরাজিত করেন। তিনি মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগেরও সদস্য ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত