সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ অক্টোবর, ২০১৮ ২২:৩৬

অভিযোগপত্রের আগে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে অনুমতি লাগবে

আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণের আগে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের অনুমতি নিতে হবে— এমন বিধান রেখে সংসদে 'সরকারি চাকরি বিল, ২০১৮' পাস হয়েছে।

বুধবার (২৪ অক্টোবর) সংসদের বৈঠকে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। বিকেল সোয়া ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

পাসের আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য বিলের বিভিন্ন ধারা নিয়ে সমালোচনা করেন। বিশেষ করে গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি নেওয়ার বিধানকে তারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেন।

তারা বলেন, আইনের চোখে সবাই সমান— সংবিধানের এই বিধান উপেক্ষা করে একটি শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই আইনের শাসন হতে পারে না। বিলের ওপর আনা একাধিক সদস্যের জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ার আগে ওই কর্মচারীকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো আদালতে ফৌজদারি বা অন্য কোনো আইনি কার্যধারা বিচারাধীন থাকলে বিচারাধীন এক বা একাধিক অভিযোগের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা দায়ের বা নিষ্পত্তির ব্যাপারে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, এই বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, সংবিধানে সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। একজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা গেলেও তার অধীনে থাকা সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

একই দলের সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, বিশেষ শ্রেণিকে বৈষম্যমূলক সুবিধা দেওয়ার এই বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবাই আইনের চোখে সমান। কিন্তু এখানে একটি শ্রেণিকে আলাদা করা হয়েছে। যদি সাধারণ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা যায়, তাহলে সরকারি কর্মচারীকেও গ্রেপ্তার করা যাবে।

পাস হওয়া বিলের ৭ ধারায় বলা আছে, এই আইনের আওতাভুক্ত কোনো কর্ম বা কর্মবিভাগে সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। বিলের ২৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি সেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, কিংবা সময়সীমা উল্লেখ না থাকলে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। কোনো কর্মচারী এ ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তা ওই কর্মচারীর অদক্ষতা ও অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।

২৬ ধারায় বলা আছে, কোনো কর্মচারী নির্ধারিত বা যুক্তিসঙ্গত সময়ে সেবা প্রদানে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মচারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে সেবা প্রার্থী ব্যক্তিকে দিতে পারবে। ৩২ ধারায় বলা আছে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ দোষী সাব্যস্ত কোনো কর্মচারীর ওপর বিধি অনুযায়ী একাধিক লঘু ও গুরুদণ্ড আরোপ করতে পারবে।

লঘুদণ্ডের মধ্যে আছে— তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি ও বেতন-ভাতা স্থগিত করা, বেতন স্কেল অবনমিত করা এবং সরকারি অর্থ ও সম্পত্তির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করা। গুরুদণ্ডের মধ্যে আছে— বেতন নিম্ন স্কেলে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করা, চাকরি হতে অপসারণ করা এবং চাকরি হতে বরখাস্ত করা।

৩৮ ধারায় বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্ম হতে বরখাস্ত হয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে বা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। ৪২ ধারায় বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড বা এক মেয়াদের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে ওই ব্যক্তি দণ্ড আরোপের রায় প্রদানের দিন থেকে চাকরি হতে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত হবেন।

তবে কর্মচারী এক বছর বা তার কম মেয়াদের জন্য দণ্ডিত হলে কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিকে তিরস্কার, পদোন্নতি ও বেতন স্থগিত করা, পদ ও বেতন স্কেলের অবনমন করা এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে। তবে এই বিলে যাই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনক মনে হলে তিনি সাজা পাওয়া ব্যক্তিকে অব্যাহতি দিতে পারবেন এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারবেন। ৪২ ধারার এই বিধান সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরি-সংক্রান্ত একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হওয়ায় নতুন এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ট্রেড ইউনিয়নের শর্ত শিথিল করে শ্রম আইনের সংশোধনী পাস: ট্রেড ইউনিয়নের শর্ত কিছুটা শিথিল করে 'বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০১৮' গতকাল পাস হয়েছে। তবে এই আইন চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। সংসদের বৈঠকে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। বিলের ওপর বিরোধীদলীয় সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়।

বিদ্যমান আইনে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের অনুমোদন প্রয়োজন; এখন তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আগে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ধর্মঘট ডাকার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মত গ্রহণের বিধান ছিল। এখন সেটা কমিয়ে ৫১ শতাংশ করা হয়েছে।

নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, শ্রমিককে প্রসব-পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্ত কাজে অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দিতে হবে। এই বিধানে আরও বলা হয়েছে, প্রসূতিকল্যাণ ছুটিতে যাওয়ার আগে কোনো নারী শ্রমিকের গর্ভপাত ঘটলে তিনি প্রসূতিকল্যাণ সুবিধা পাবেন না। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে ছুটির প্রয়োজন হলে তিনি তা ভোগ করতে পারবেন।

বিলে আরও বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে কারখানা ও শিল্পের ক্ষেত্রে একদিন এবং দোকান ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেড় দিন ছুটি পাবেন। কোনো শ্রমিককে উৎসব বা ছুটির দিনে কাজ করতে বলা যাবে। তবে এ জন্য তাকে একদিনের বিকল্প ছুটি ও দুই দিনের ক্ষতিপূরণমূলক মজুরি দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত