সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ১৪:১৭

স্কুলগামী রোগা-পাতলা শিশুহারের শীর্ষ স্থানে বাংলাদেশ

ইউনিসেফের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে স্কুলগামী শিশুদের ১৮ শতাংশ রোগা-পাতলা এবং ৯ শতাংশ স্থূলকায়। জলবায়ু পরিবর্তন ও পুষ্টিহীনতার কারণে এমনটি ঘটেছে।

জাতিসংঘের মা ও শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের স্কুলগামী শিশুদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, স্কুলগামী রোগা-পাতলা শিশুহারের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ তালিকায় বাংলাদেশের পর আছে আফগানিস্তানের নাম। দেশটিতে স্কুলগামী শিশুদের ১৭ শতাংশ রোগা-পাতলা। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভুটান। দেশটিতে স্কুলগামী শিশুদের ১৬ শতাংশই রোগা-পাতলা।

এদিকে স্কুলগামী স্থূলকায় শিশুদের তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে কুক দ্বীপপুঞ্জ। দেশটিতে স্কুলগামী স্থূলকায় শিশুর হার ৬৩ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৯ শতাংশ।

ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহারের তালিকায় শীর্ষ দশে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এ বয়সের ৮৯ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটিতে ২০১৮ সালে ৮ লাখ ৮২ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

২০১৮ সালের তথ্য নিয়ে করা ইউনিসেফের এ প্রতিবেদনে ভারতের পরই ৮ লাখ ৬৬ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। এছাড়া ৪ লাখ ৯ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে পাকিস্তান তৃতীয়, ২ লাখ ৯৬ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে কঙ্গো চতুর্থ, ১ লাখ ৯১ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে ইথিওপিয়া পঞ্চম, ১ লাখ ৪৫ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে চীন ষষ্ঠ, ১ লাখ ২১ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে ইন্দোনেশিয়া সপ্তম, ১ লাখ ৭ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে তানজানিয়া অষ্টম এবং ৯৪ হাজার শিশুমৃত্যুর হার নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে অ্যাঙ্গোলা।

তালিকায় সবচেয়ে তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে রয়েছে জাপান ও নিকারাগুয়া। দেশ দুটিতে ২০১৮ সালে দুই হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর শ্রীলংকায় হয়েছে তিন হাজার। অন্যদিকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ সুদানে। দেশটিতে ২০১৮ সালে ২ লাখ ৩৩ হাজার শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই মৃত্যুবরণ করে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট সফলতা পেয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার, যেটা ১৯৯০ সালে ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০০০ সালে ছিল ৮৭ হাজার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পুষ্টিহীনতা এসব শিশুদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সংকটেও ভুগছে তারা। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শহরের বস্তিতে থাকা শিশুরা। এসব শিশু পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবের পাশাপাশি শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, দূষণ, সহিংসতা ও নানাভাবে অপব্যবহারের শিকার হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে রাজধানীর শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ওয়াহিদা খানম জানান, ইউনিসেফ যে ধারণা নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা ঠিক আছে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সমুদ্র উপকূল থেকে মানুষ আরও শহরমুখী হচ্ছে। কিন্তু তারা শহরে এসে যথেষ্ট স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপের কারণে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আগের চেয়ে সফলতা পেলেও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত রোগের সংখ্যা বাড়ছে। বাল্যবিবাহ না কমায় অল্প বয়সে মা গর্ভবতী হওয়ায় অপরিণত শিশুর জন্ম এবং তাদের পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। এদিকে বড় একটি সংখ্যার শিশু বুদ্ধি বিকাশের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন, মিডিয়া, স্মার্টফোনের কারণে শিশুদের মানসম্মত জীবন নিশ্চিত হচ্ছে না বলে নিজেদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে বলেও জানান তিনি।

তবে ইউনিসেফের প্রকাশিত মৃত্যুহারের সঙ্গে একমত নন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল মতিন।

তিনি বলেন, পুষ্টিহীনতার কারণে আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হলেও ইউনিসেফ যতটা বলছে ততটা নয় বলেই আমি মনে করি। দেশে ১ থেকে দেড় মাসের শিশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা একটু বেশি। কিন্তু গড়ে পাঁচ বছরের নিচের শিশু মৃত্যুর হার অনেক কম। তবে ডায়রিয়া, সাপে কাটা বা পানিতে ডুবে মৃত্যু হওয়ার হার এখনো দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বেশি রয়েছে। এছাড়া রোগা-পাতলা শিশুদের হার কীভাবে নির্ণয় হলো বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার নয়। তবে কিছুটা থাকলেও এটা দীর্ঘদিন থাকবে বলে মনে হয় না। কারণ সরকার এরই মধ্যে স্কুলে পুষ্টির নিশ্চয়তায় খাবার দেয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। যেটা অচিরেই সফলতা বয়ে নিয়ে আসবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত