সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ নভেম্বর, ২০১৫ ০৮:৫৫

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘রাজতন্ত্র’ কায়েম করেছেন, লন্ডনে খালেদা

দেড় মাস ধরে লন্ডনে অবস্থানের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেছেন শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘রাজতন্ত্র’ কায়েম করেছেন। শেখ হাসিনাকে লেডি হিটলার আখ্যা দিয়ে তাদের হটাতে ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তিনি।

রোববার (১ নভেম্বর) লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ সময় ছেলে তারেক রহমান পাশে ছিলেন, দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলেন পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য দল গোছাতে শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলেও প্রবাসী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা বলেন, বাংলাদেশে এখন আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

“বাংলাদেশের মানুষ আজকে মোটেও ভালো নেই, মোটেও শান্তিতে নেই। প্রতিনিয়ত জুলুম-অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।”

“এক রাজতন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম হয়েছে এখন। রাজতন্ত্রের জন্য আছেন একজন লেডি হিটলার। কারণ তিনি যা হুকুম দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন; তার সৈন্য-সামন্তরা যারা আছে, অর্থাৎ প্রশাসন, তারা সেভাবে কাজ করছেন। সবকিছু তার কথামতো চলে।”

দেশে এখন গণতন্ত্র নেই দাবি করে তিনি বলেন, “সেজন্য একের পর এসব ঘটনা ঘটছে। আর সবকিছুতে বিএনপিকে দোষারোপ করা হচ্ছে।”

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন তিনি।

জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকেই দায়ী করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।

“জঙ্গি জঙ্গি হাসিনাই বলেছে, কিসের জন্য? বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য। বোঝাতে চাইছে আমরা যদি চলে যাই, বিএনপি এলে জঙ্গিদের উত্থান হবে। ...কিন্তু দেখেন, জঙ্গিদের উত্থান কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় হয়েছে। তারা একটা জঙ্গিকে ধরেনি। আমরা এসে সব জঙ্গিকে ধরেছি।”

বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে চাইছে দাবি করে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার কথা বলেন খালেদা।

সরকারকে হটাতে ব্যর্থতার জন্য ঢাকা শহরে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার স্বীকারোক্তি আসে বিএনপি চেয়ারপারসনের কথায়।

“আন্দোলন ঢাকায় সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা শহরে বের হলেই গুলি করে দেয়। তবে সারা দেশে যে কী আন্দোলন হয়েছে, স্বাধীনতার সময়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তা হয়নি।”

তিনি বলেন, “গত সাত বছরে বিএনপির তিন হাজার নেতাকর্মীকে খুন, এক হাজার ২০০ জনকে গুম, এক হাজার ১২ জনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে।”

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে নিয়ে তিনি বলেন, “কতো মানুষকে বেনজীর মেরেছে তার হিসাব নেই।”

বিএনপি ভাঙার জন্যও সরকার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা।

“বহু চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। সত্যি কথাই বলি, এরশাদ তেমন করেনি। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনও কম করেনি।”

এমপি হওয়ার যোগ্যতা নেই এমন অনেককে মন্ত্রী করা হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

“বর্তমানে সংসদে কোনো কাজ হয় না, শুধু খালেদা, তারেক আর জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করা হয়।”

বর্তমানে বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে অনেক যোগ্য, মেধাবী কর্মকর্তাকে দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগকে হটাতে সব দল-মতের মানুষকে নিয়ে কাজ করার উপর জোর দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে।”

দেশে দল গঠনের অসামপ্ত কাজ শেষ করতে যাওয়ার গুরুত্ব প্রবাসী নেতা-কর্মীদের কাছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার যাওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজন। গিয়ে আমাকে বাকি কাজগুলো করতে হবে। এরা (পরিবার) আমাকে যেতে দিতে দেয় না। কিন্তু আমাকে যেতে হবে।”

খালেদা বলেন, স্থায়ী কমিটির নেতাদের তিনি অনেক কিছু দেখিয়ে এসেছেন।

“কিন্তু কিছু হলে ওরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সেজন্য আমার যাওয়াটা প্রয়োজন। তাই আমাকে যেতেই হবে।”

লন্ডনের রিভারব্যাংক পার্ক হোটেল প্লাজায় ওই নাগরিক সভায় মঞ্চে বিএনপি জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের পাশাপাশি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত