সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ১৮:৩১

এমপি পদ হারালেন পাপুল

কুয়েতে মানব ও অর্থপাচার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পদ হারালেন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।

সোমবার সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান সই করা প্রজ্ঞাপনে এই বিষয় নিশ্চিত করা হয়।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুয়েতের আদালত যেদিন পাপুলকে দণ্ডিত ঘোষণা করেছে, সেদিন থেকেই এমপি পদ নেই তার।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাপুল সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ থাকার যোগ্য নন। এ কারণে সংবিধানের ৬৭ (১) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ ২৮ জানুয়ারি থেকে তার লক্ষ্মীপুর-২ আসন শূন্য হয়েছে।

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৭৮ (৪) বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যের আসন শূন্য সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথাও বলা হয় প্রজ্ঞাপনে।

যে কারণে দেরি
কুয়েতে পাপুল গ্রেপ্তার হন গত বছরের ৬ জুন। আর তার সাজার রায় গণমাধ্যমে আসে গত ২৮ জানুয়ারি।

শাসনতন্ত্রের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।

তবে পাপুল যেহেতু দেশের বাইরে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাই তার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় যা উঠেছিল, সেটি শুরুতেই নাকচ করেছেন আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যে প্রক্রিয়া আছে, সে জন্য সিদ্ধান্ত নিতে কিছু বিলম্ব হয়েছে।

এই সংসদ সদস্য পদ বাতিলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, সংসদ সদস্য কোনো ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে বা আদালতে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশ আটক হলে, গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ফরমে গ্রেপ্তার, দণ্ডাদেশ বা আটকের কারণসহ পুরো বিষয় স্পিকারকে জানাবে।

পাপুলের সাজা হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর গত ২৯ জানুয়ারি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী  জানান, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে রায় পাওয়ার অপেক্ষায়।

গত শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস রায়ের কপি তাদের কাছে পাঠিয়েছে এবং তারা তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

একই দিন স্পিকার বলেন, ‘আমরা এতদিন রায়ের কপির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কারণ, এর আগে আমরা কেবল পত্র-পত্রিকায় সংবাদটি জেনেছিলাম। আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বা প্রমাণ ছিল না। এখন আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে রায়ের কপি পেয়েছি।’

সংবিধান অনুযায়ী, পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা স্পিকারেরই।

কোন প্রক্রিয়ায় পাপুলের সদস্য পদ বাতিল হবে- এমন প্রশ্নে সেদিন স্পিকার বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার কপি সংসদ সচিবালয়ে এসেছে। আমরা কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। প্রথমে রায় পর্যালোচনা বৈঠক করা হবে। পর্যালোচনার পর সদস্যপদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

গত বছরের ৬ জুন পাপুলকে আটক করে কুয়েত সরকার। সে দেশে তার ব্যবসা রয়েছে। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানব পাচার, অর্থ পাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ মামলা করা হয়।

পাপুল যেভাবে সংসদ সদস্য
সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে যাওয়ার কয়েক দশকের মধ্যে ধনকুবের হয়ে যাওয়া পাপুল একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য হন।

সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল।

তবে ভোটের আগে আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান সরে দাঁড়ান। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পাপুলের পক্ষে কাজ করেন।

পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদের আসন বণ্টনের হিসাবে নারী আসনের একটি পেয়েছিলেন এবং তারা সেলিনাকে মনোনয়ন দেন।

পাপুলের স্ত্রীও আসামি
পাপুলের পাশাপাশি তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানও অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচার মামলার আসামি।

দুর্নীতি দমন কমিশন গত ১১ নভেম্বর মামলাটি করে। এই মামলায় সেলিনা এবং ওয়াফা গত ২৭ ডিসেম্বর জামিন পান। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে স্থায়ী দেয়া হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জেসমিন প্রধান দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

‘কাগুজে প্রতিষ্ঠান’ করে তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১৪৮ কোটি টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন বলেও বলা হয় মামলায়।

বলা হয়, এসব কাজে পাপুল, তার স্ত্রী ও মেয়ে সহযোগিতা করেছেন।

পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

সেলিনা ইসলাম এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিন প্রধানের আট ব্যাংকের ৬১৩টি হিসাব জব্দও করেছে দুদক।

তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ৩০ দশমিক ২৭ একর জমি ও গুলশানের ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুদক। এজন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়েও চিঠি দিয়েছে কমিশন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত