নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

সিলেটে ছাত্র ইউনিয়নে বিভক্তি

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রের বিভক্তির রেশ পড়েছে সিলেটও। সিলেট জেলা সংসদেও দেখা দিয়েছে বিভাজন। গত শুক্রবার থেকে এই বিভাজন প্রকাশ্যে আসে।

সিলেটে কর্মীসভার মাধ্যমে শুক্রবার ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে একটি অংশ। আগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ জানিয়ে সেটি বিলুপ্তও ঘোষণা করা হয় এই কর্মীসভায়।

তবে আগে থেকেই কমিটির দায়িত্বে থাকা নেতারা বলছেন- ‘আহ্বায়ক কমিটি গঠনের খবর ভিত্তিহীন’। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সংসদের সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে বলেও জানান তারা।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে বছরখানেক ধরেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই বামপন্থি ছাত্র সংগঠনে। ফয়েজ উল্লাহ ও দীপক শীল এবং নজির আমীন চৌধুরী জয় ও রাগীব নাঈমের নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়নের দুটি কমিটি রয়েছে। আলাদাভাবে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা।

কেন্দ্র দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়লেও এতদিন সিলেটে ঐক্যবদ্ধভাবেই চলছিল ছাত্র ইউনিয়নের কার্যক্রম। তবে গেল শুক্রবার মনীষা ওয়াহিদকে আহ্বায়ক, পাপ্পু সরকার এবং সৈকত দাসকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করে ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ। এই কমিটি গঠনকালে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়ও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) গণসংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র সংগঠনের এই বিভক্তি প্রসঙ্গে সিপিবির সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, গত জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সিলেটেও। সিলেটেও এখন দুইটা ইউনিট কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকাতে ঐক্যের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সিলেটেও ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে। আগামী সম্মেলনে যাতে অবিভিক্ত কমিটি করা যায় সেই চেষ্টা করছি।’

জানা যায়, সবশেষ ২০১৮ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্র ইউনিয়নের সিলেট জেলা সংসদের কমিটি গঠন করা হয়। এতে সরোজকান্তি সভাপতি ও নাবিল এইচ সাধারণ সম্পাদক হন। ছাত্র ইউনিয়নের কমিটির মেয়াদ এক বছর। তবে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সম্মেলন করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। যদিও নেতারা বলছেন, করোনার কারণে যথাসময়ে সম্মেলন করা যায়নি।

আহ্বায়ক কমিটি গঠনের খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর ওইদিনই বিবৃতি দিয়ে এমন খবরকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয়।

ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার সভাপতি সরোজ কান্তি ও সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, ৩৫তম জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটি দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলার কার্যক্রম চলছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ৩৬তম সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের ঐক্য প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার খবর ছড়িয়েছে। সংগঠনের ভেতরের কেউ এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সদ্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মনীষা ওয়াহিদ বলেন, ১২ এপ্রিল জরুরি সম্মেলন করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় সভাপতিও দায়িত্বে ছিলেন।

তিনি বলেন, সিলেটে ছাত্র ইউনিয়নের কমিটির মেয়াদ দুই বছর আগেই ফুরিয়েছে। এই কমিটি একবারে নিষ্ক্রিয়, এমনকি বছরখানেক ধরে তারা কোনো সভাও করতে পারেনি। ফলে কর্মী সভা ডেকে নিষ্ক্রিয় ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তবে এমন কমিটি গঠনের খবর ভিত্তিহীন দাবি করে ছাত্র ইউনিয়নের সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ বলেন, তথাকথিত ওই কর্মীসভায় মনীষা ছাড়া জেলা কমিটির কোনো সদস্যই ছিলেন না। এমনকি ইউনিট কমিটিগুলোর নেতারাও অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সিলেটে ছাত্র ইউনিয়নের আলাদা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের খবর ভিত্তিহীন। যারা এই কমিটি গঠনের কথা বলছেন তাদের কমিটি গঠনের এখতিয়ার নেই।

নাবিল বলেন, ‘করোনার কারণে সারা দেশেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। আমরাও যথাসময়ে সম্মলেন করতে পারিনি। কমিটির বৈঠকও নিয়মিতভাবে করা যায়নি। তবে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা ঠিকই সক্রিয় রয়েছি। এখন যিনি নিষ্ক্রয়তার অভিযোগ তুলছেন তিনি আগে কখনোই দলীয় ফোরামে এমন অভিযোগ তোলেননি।’

যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান নাবিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত