সিলেটটুডে ডেস্ক:

০৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:২১

মুরাদ ছাত্রদল করতেন, দাবি মির্জা ফখরুলের

নারীর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করতেন জানানোর পর যুবদলের এক নেতার সঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।

বিএনপি নেতা মুরাদের ছাত্রজীবনের অবস্থান জানানোর পর যুবদল নেতা গোলাম মওলা শাহীন প্রতিবাদ জানান। এরপর ফখরুল তাকে উদ্দেশ করে ধমক দেন। বলতে থাকেন, যুবদল নেতা জানেন না, তিনিই জানেন।

দুজনের এই বক্তব্য ঘিরে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তৈরি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি।

ফখরুল বারবার যুবদল নেতাকে তার কাছে যেতে বলতে থাকেন, তিনি অন্যদের কাছে জানতে চান তার পরিচয়।

এ নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে বিএনপির অন্য নেতারা মির্জা ফখরুলকেও থামানোর চেষ্টা করলে উপস্থিত শ্রোতারা স্লোগান দিতে থাকেন। মির্জা ফখরুল তাদের চুপ করতে বললেও তারা শোনেননি।

সোমবার এরশাদ সরকার পতনের বার্ষিকীতে এই আলোচনার আয়োজন করে ‘১৯৯০ সালের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের প্রতি ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘একজন ভুঁইফোঁড় ডাক্তার ছিল শুনেছি, সম্ভবত জামালপুরের সরিষাবাড়ীর। এটাও শুনেছি সে নাকি একসময় ছাত্রদল করত। দুঃখের কথা, দুর্ভাগ্যের কথা। আগে সে ছাত্রদল করত। সে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের প্রচার সম্পাদক ছিল। পরবর্তীকালে সে ছাত্রলীগে জয়েন করেছে। ধিক্কার দিই আমি তাকে। শেইম।’

তবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের দ্বিতীয় তলায় থাকা যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মুরাদ ছাত্রদল করে নাই।'

এ সময় ফখরুলের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এই যুবদল নেতা।

মির্জা ফখরুল তাকে থামিয়ে বলেন, ‘এই দাঁড়াও, কী?... চুপ করো। তুমি জানো না। ইউ ডোন্ট নো। ইউ ডোন্ট নো। ইউ ডোন্ট নো....।

‘এই দাঁড়াও, বাজে কথা বলবা না। এই ছেলে কে তুমি? তুমি এদিক দিয়ে বেরিয়ে আস। তুমি জানো না সেটা, সে জন্য এক কথা বলছ। তুমি জানো না...। আমি জানি বলে বলছি।’

‘এই বেয়াদব৷ চুপ...চুপ বেয়াদব। এদিকে আসো। এদিকে আসো... তুমি এদিকে আসো’- যুবদল নেতার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রাগান্বিত স্বরে বলেন ফখরুল।

এ সময় মঞ্চে থাকা বিএনপি নেতাদের দিকে তাকিয়ে যুবদল নেতার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন দলটির মহাসচিব। বলেন, ‘কে এটা? হু ইজ দিস বয়?’

যুবদল নেতাকে উদ্দেশ করে ফখরুল আবার বলেন, ‘কে? তুমি কে? এদিকে আসো তো। এদিকে আসো....। তুমি এগুলো জানো না।‘

এ সময় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকলে তাদের বসতে বলেন ফখরুল। কিন্তু নেতা-কর্মীরা নিজেদের মতো স্লোগান দিতে থাকেন।

তখন বিএনপি মহাসচিব কিছুটা নরম হয়ে অনুরোধ করে বলেন, ‘প্লিজ দাঁড়াও, দাঁড়াও। বসো তোমরা।’

তার পরও যুবদল নেতা শাহীন তর্ক শুরু করলে পুরো মিলনায়তনের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। এ সময় মহাসচিব তাকে চুপ করতে বলেন এবং নিচে নেমে মঞ্চে আসার জন্য বলেন।

সে সময় মিলনায়তনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় মঞ্চে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ, দক্ষিণের আবদুস সালাম হাত উঠিয়ে তাকে চুপ করতে বলেন।

বিএনপি মহাসচিব এই পর্যায়ে সবাইকে শান্ত হয়ে বসার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, দুর্ভাগ্য আমাদের যে একসময়ে সে ছাত্রদল করেছে, পরবর্তীতে সে ছাত্রলীগের নেতা হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্য আমাদের, এই রকম একটা ছেলে ওই সময়ে ছাত্রদলে ছিল। দিস ইজ দ্য মোস্ট আনফরচুনেট।'

‘প্রধানমন্ত্রী, আপনার অবস্থান কী?’

এই তর্ক-বিতর্কের আগে মুরাদ হাসানের করা নানা বক্তব্য নিয়ে কথা বলেন ফখরুল। বলেন, “শেষের যে বক্তব্যটুকু, সেটা অত্যন্ত মারাত্মক। বলেছে, ‘আমি যা কিছু করছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করছি এবং তা তিনি সবকিছু জানেন।’ আমি আজ এই সভা থেকে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করতে চাই প্রধানমন্ত্রীকে- এই কথা সত্য কি মিথ্যা আপনাকে জানাতে হবে।

“কারণ আপনি প্রধানমন্ত্রী- এ দেশের মানুষের নিরাপত্তা, তার নিজের মর্যাদাকে রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে এই ভয়াবহ উক্তি মিডিয়ার উদ্দেশে একজন মন্ত্রী করতে পারে, তা হলে আপনার সরকারের অবস্থান কী আমরা জানতে চাই। এর উত্তর দিতে হবে। কারণ আপনাকে জড়িয়ে এই কথা বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে চাই যে আপনি কি এমন একটি সরকার নিয়ে এখানে এসেছেন, যে সরকার আমাদের দেশের সমস্ত কৃষ্টি, আমাদের দেশের যে সৌজন্যবোধ, আমাদের যে ঐহিত্যগুলো আছে, তাকে বিনষ্ট করে দেবে?

‘রাজনীতিকে তো ধ্বংস করেছেনই, এখন ন্যূনতম মূল্যবোধগুলো আছে, আমাদের মা-বোনের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা সেটাও কি আপনি ধ্বংস করে দেবেন?’

‘আমরা তীব্রভাবে শুধু প্রতিবাদ নয়, আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি সেই সমস্ত বক্তব্যের জন্য।'

দুই দিন আগে একটি অনলাইন টকশোতে এসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য দেন।

এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই ফেসবুকে একটি টেলিফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি মুরাদের। সেখানে শোনা যায়, তিনি একজনকে ফোন করে এক চিত্রনায়িকাকে তার কাছে যেতে বলেন। এই কথোপকথনে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।

মুরাদকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন ৪০ জন নারী অধিকারকর্মী। বিএনপির পক্ষ থেকেও প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তার ভাষা সভ্য নয়।

অনলাইন সাক্ষাৎকার প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি যা বলেছেন, তার জন্য দুঃখিত নন। বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না। আর সমালোচনা তিনি গায়ে মাখেন না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে মুরাদ ইস্যুতে কথা বলেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বিষয়ে কথা বলবেন- এমনটিও জানিয়েছেন। বলেছেন, প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য।

তবে মুরাদের এই বক্তব্যকে আওয়ামী লীগের অবস্থান হিসেবে দেখছেন ফখরুল। বলেন, ‘বন্ধুগণ এটা তাদের চরিত্র। এই যে বর্ণবাদী কথা। এই যে নারীবিদ্বেষী এগুলো গ্রহণযোগ্য না।‘

প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় কয়েকজন নারী নেত্রীকে ধন্যবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, নব্বইয়ের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলাম একটি সভ্য-স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য।

‘আজকে এই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, এই সরকারের নেতৃত্বে সেই দেশটি আজকে একটি অসভ্য, অশালীন, অমর্যাদাকর দেশে পরিণত হয়েছে।'

সরকারের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যেহেতু তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, সে কারণে তারা সামাজিকমাধ্যমে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জঘন্য নিকৃষ্ট প্রচার চালানো শুরু করেছে।’

এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ডাকসুর ভিপি ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।

খবর: নিউজ বাংলা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত