সিলেটটুডে ডেস্ক:

০৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৫৭

ছাত্রলীগকে দোষারোপ করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে: তথ্যমন্ত্রী

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতাযুদ্ধে ছাত্রলীগের অবদানের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, কিছু হলেই ছাত্রলীগকে দোষারোপ করার মানাসিকতা পরিহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘যারা চুন থেকে পানি খসলেই কিংবা কিছু হলেই সেটার সাথে ছাত্রলীগে কোনোভাবে একসময় নাম লিখিয়েছিল কিংবা লেখায় নাই, সেই গন্ধ খুঁজে ছাত্রলীগের গায়ে কালিমা লেপন করার অপচেষ্টা করে, তাদের সেই মানসিকতা পরিহারের অনুরোধ জানাই।’

মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে টেলিভিশন অ্যান্ড ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) সঙ্গে বৈঠক করেন।

১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ছাত্রলীগ গঠিত হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার এক বছর আগে।

মঙ্গলবার সারা দেশে বর্ণাঢ্য পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে ছাত্রলীগ।

এ দিনটি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতাযুদ্ধে ছাত্রলীগের অবদান জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে। দেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ছাত্রলীগ দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছে।’

ছাত্রলীগের কাছে নিজের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশকে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ছাত্রলীগের মধ্যে যেন কোনো অনুপ্রবেশকারী ঢুকে বদনাম করতে না পারে। ’

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ২টার দিকে অপরাজেয় বাংলায় বানানো মঞ্চের ডান পাশে দাঁড়ানো নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবি জসীম উদদীন হল ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার জেরে এই মারামারি হয়।

মারামারির এক পর্যায়ে ইটের আঘাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মাথা ফেটে গেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য আগারগাঁও নিউরোসায়েন্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া মারামারিতে আরও ১০-১২ আহত হয়েছেন।

গত সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে হাতাহাতির ঘটনায় বিএনপির সমালোচনায় হাছান মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন সমাবেশে হাজার হাজার নয়, কয়েকশ মানুষ দেখেই বিএনপি ‘খেই হারিয়ে ফেলেছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে মির্জা ফখরুল সাহেবরা তো বছরের পর বছর দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে কয়েকশ মানুষ দেখতেই অভ্যস্ত ছিলেন। এখন বিভিন্ন জেলায় তাদের সমাবেশে আমরা দেখেছি তারা মারামারি করে নিজেরা নিজেদের সমাবেশ পণ্ড করেছেন। বিভিন্ন সমাবেশে হাজার হাজার নয়, কয়েকশ মানুষ দেখেই মির্জা ফখরুল সাহেবরা খেই হারিয়ে ফেলেছেন।’

নারায়ণগঞ্জে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রসঙ্গে এদিন কথা বলেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘আসলে বিএনপি অনুধাবন করতে পেরেছে যে তৈমূর আলম খন্দকারের বিজয় লাভের কোনো সম্ভাবনা নাই। এটি অনুধাবন করতে পেরে আগেই তাকে বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে পরাজয়ের যে গ্লানি, সেটি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে।’

গণমাধ্যমকর্মী আইন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির সময় যে কাজটি করা হয়েছিলো গণমাধ্যমকর্মীদেরকে শ্রমিক বানিয়ে দেয়া হয়েছিলো, সেটি নিরসন করা প্রয়োজন ছিলো, এ আইনে সেটি নিরসন করা হয়েছে। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই মূল বিষয় ঠিক রেখেই অর্থাৎ যে বিষয়গুলো সাংবাদিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল সেগুলো ঠিক রেখেই আইনটি তৈরি করা হয়েছে।

তবে এরপর কারও কোনো প্রশ্ন থাকলে এটি সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপন করা যায়। সংসদীয় কমিটি চাইলে সেখানে পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারেন বলে জানান তিনি।

নাট্য প্রযোজকদের উদ্দেশে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘টেলিভিশন এমন একটি গণমাধ্যম যেটি মানুষের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। এজন্য আপনারা যখন কোনো নাটক, টেলিফিল্ম বা অনুষ্ঠান বানাবেন, সেই ক্ষেত্রে দেশ বিনির্মাণ ও উন্নত জাতি গঠনের লক্ষ্যটি যেন ভাবনায় থাকে সে অনুরোধ জানাই।’

সভায় টিভি নাটক প্রযোজকরা নাট্যনির্মাণ ও বিপণন খাতের বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেন।

সম্প্রচারমন্ত্রী এসময় বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত বা ক্লিনফিড সম্প্রচার বাস্তবায়ন, ক্যাবল নেটওয়ার্কে দেশি টিভি চ্যানেলগুলোর ক্রম নির্ধারণ, সমগ্র ভারতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু এবং দেশি বিজ্ঞাপনচিত্র বিদেশি শিল্পীদের অংশগ্রহণের ওপর করারোপের মাধ্যমে দেশের শিল্প- সংস্কৃতি- গণমাধ্যমকে এগিয়ে নিতে তার মন্ত্রণালয়ের সফল ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

এই সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খাদিজা বেগম, টেলিপ্যাবের সভাপতি ইরেশ যাকের, সাধারণ সম্পাদক সাজু মোনতাসের, সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন দোদুল, জহির আহমেদ, আনসারুল আলম লিংকন, দপ্তর সম্পাদক এ কে এম নাহিদুল ইসলাম নিয়াজী, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বাবলু, আর্কাইভ বিষয়ক সম্পাদক মীর ফখরুদ্দীন ছোটন, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আইনুল ইসলাম চৌধুরী চঞ্চল এবং সদস্যদের মধ্যে এম রেজাউল করিম সজল, সাদেক সিদ্দিকী, জাকির খান, ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন, রাশেদা আক্তার লাজুক সভায় অংশ নেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত