সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ জুলাই, ২০২৩ ২২:২৭

ন্যাড়া বারবার বেলতলায় যায় না: মির্জা ফখরুল

সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের কাছে দায়িত্ব দিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করেন, সংসদ বিলুপ্ত করেন। নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নতুন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগনের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন।’

রবিবার (১৬ জুলাই) বিকালে চট্টগ্রামের নূর আহমদ সড়কে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দল এই সমাবেশ আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেন। মানে মানে এখনো দেন। নাহলে দেশের মানুষ জানে কী করে আদায় করে নিতে হয়। মানুষ ছেড়ে দেবে না, মানুষ ছেড়ে দেয় না। আমাদের সব কথা এখন এক কথায় পরিণত হয়েছে। সেই কথা হলো, দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’

বিএনপির সাম্প্রতিক সমাবেশে বাধা না দেওয়াকে ক্ষমতাসীন দলের বকধার্মিকতা বলেও মনে করেন বিএনপির মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘সরকার হঠাৎ ভালো হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে আগে আমাদেরকে সমাবেশ করতে দিচ্ছে। আজকে খবর পাইনি, এখন পর্যন্ত কোথাও মারধর করছে। নোয়াখালীতে প্রোগ্রাম ছিল। সেখানে লাকসাম ছাড়া অন্য কোথাও ঝামেলা করেনি। ঢাকার প্রোগ্রামেও খুব একটা বাধা দেয়নি। ওরা বিদেশিদের দেখাতে চায়, দেখ আমরা কত ভালো। আমরা বিরোধী দলকে বাধা দেই না। সভা সমাবেশ করতে দেই। এসব হলো বকধার্মিকতা। তারা আবার আমাদেরকে বেলতলায় নিতে চায়। কিন্তু ন্যাড়া বারবার বেলতলায় যায় না। এই বকধার্মিকতা করে, মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে দেশে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা করা এই দেশের জনগণ আর মানবে না।’

সরকার চরিত্র বদল করলেও ভেতরে ভেতরে ফের ভোটচুরির পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, ‘তারা আবারও পরিকল্পনা করছে কীভাবে ক্ষমতা দখল করা যায়। সেজন্য তারা প্রশাসনকে সাজাচ্ছে। তাদের মন্ত্রীদের পিএস এপিএসকে ডিসি বানাচ্ছে। আর নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। তাদের হাতে যা ক্ষমতা ছিল সেটাও আইন করে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমরা অনেক অনেক ভালো ভাষায় বলেছি। ২০১৪ সালে ১৫১ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। ২০১৮ সালে আগের রাতে ভোট নিয়ে গেছেন। দয়া করে এবারের নির্বাচনে আর মানুষকে বঞ্চিত করবেন না।’

সরকারকে লুটেরা হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় এলে সব ভুলে যায়। খালি একটা কথা মনে রাখে লুট কর। তারা ক্ষমতায় এলে দেশে দুইটা ভাগ করে। এক ভাগে লুটেরা অন্য ভাগে সাধারণ জনতা। তারা সাধারণ মানুষের পকেট কেটে অবাধ লুটপাটের ব্যবস্থা করে। তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল দেবে। আজ চাল ৯০ টাকা। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ অসুস্থ্য হলে চিকিৎসা পায় না। শ্রমিক ভাইরা তাদের ন্যায্য মজুরি পান না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চোউধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকারের মনোবল ভেঙে গেছে। আমি আগেই বলেছি খেলা শেষ। এবার মানে মানে কেটে পড়ুন। এখন দলীয় নেতা কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে তারা বলছেন, বিদেশি মন্ত্রীরা এটা বলেনি, ওটা বলেনি। অথচ একটা দেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলে গেল সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে? লজ্জায় তো প্রধানমন্ত্রীর আত্মহত্যা করার কথা ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশীদের সমর্থনের ওপর বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ভর করে না। তবে সাধারণ মানুষকে এটা উজ্জীবিত করে। তারা খুশি হয়। মূল কাজটা আমাদের করতে হবে।’

এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সামনে একটি কথা বলেছেন। তাহলো ‘আমাকে যদি গণভবন থেকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে আমি কোথায় যাব?’ আপনি আপনার স্বামীর বাড়ি সুধাসদনে যাবেন। আর খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে আচরণ আপনি করেছেন। তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের যেখানে পাঠিয়েছেন আপনার ঠিকানা সেখানে হবে।’

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘এই সরকার মানুষের ওপর জেঁকে বসেছে। শ্রমিক জনতার আন্দোলনের মাধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এই লক্ষ্যে আমরা এক দফা আন্দোলনে নেমেছি। অচিরেই আমরা সফল হব।’

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিন, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল, ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এম নাজিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত