ডেস্ক রিপোর্ট

২৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১৪:১০

অবরোধ-নাশকতার ৫০ দিন: নিহতের সংখ্যা শতাধিক

টানা অবরোধ আর অব্যাহত নাশকতার ৫০ দিন পূর্ণ হলো। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতায় মারা গেছে শতাধিক লোক। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছে শতাধিক লোক এবং আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে সারাদেশের মানুষ।

এখন পর্যন্ত ভয়ঙ্কর পেট্রোলবোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৫৭ জন। পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আগুন দেয়া হয়েছে ৫৯৪টি যানবাহনে এবং ভাংচুর করা হয়েছে ৫৭৯টিতে।

বিএনপি এসব ঘটনায় সরকারকে দায়ী করেছে। কিন্তু সরকারি পক্ষ থেকে যখন নাশকতাকারীদের দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তখনই উদ্বেগ প্রকাশ করে এর নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। 

আন্দোলনের নামে নাশকতা করে নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা, আতঙ্ক সৃষ্টি, অর্থনীতি আর শিক্ষার্থীদের জীবন বিপর্যয় সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন সফলতা নেই। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় আর বারবার জাতিসংঘ এবং বন্ধুরাষ্ট্র আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি থেকে সরে আসার আহ্বান জানালেও বিএনপি তা অব্যাহত রেখেছে।
খোদ বিএনপি নেতাকর্মীরাও দলের শীর্ষ পর্যায়ের খামখেয়ালিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। ঘর থেকে বের হলেই নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে এজন্য অনেকেই সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক আনুষ্ঠানিকতাকে এড়িয়ে চলছেন। কেবলমাত্র বিএনপি এবং জামায়াতের সন্ত্রাসী গ্রুপ আকস্মিকভাবে পেট্রোলবোমা মেরে, বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।

আন্দোলনের নামে নাশকতা সৃষ্টি বন্ধ করার জন্য স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে শ্রমিক-জনতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিএনপি নেত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনক্রমেই বিএনপি এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসছে না। প্রথমদিকের তুলনায় এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও পেট্রোলবোমায় আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন ১১ জন। আর এ সময় সারাদেশে পেট্রোলবোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৫৭ জন।

গত ৫ জানুয়ারি অবরোধ শুরুর প্রায় তিন সপ্তাহের মাথায় ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেলে শোকাহত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশানে তাঁর কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপি নেত্রী ফটক আটকে রেখে আলোচনার সব সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।

অগ্নিদগ্ধরা সারাদেশের মানুষের হয়ে এই সন্ত্রাসীদের কাছে ক্ষমা চেয়েও পরিত্রাণ পাচ্ছেন না। এসব মানুষের আর্তনাদেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অন্তর কাঁদেনি। সারাদেশে প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠস্বরও তাঁকে সামলাতে পারেনি। রোজই রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র বিএনপির এ নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে সাধারণ মানুষ।

খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে ব্যতিক্রমী কর্মসূচী পালন করেছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। গাছের সঙ্গে আগুনে পুড়ে নিহত ৫৪ জনের নাম সংবলিত কালো ব্যানার সেঁটে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সংসদ সদস্য তারানা হালিমের নেতৃত্বে বিভিন্ন পেশার মানুষ। আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানাতে এক ব্যতিক্রম কর্মসূচী পালন করা হয়।

রবিবার দুপুরে তাঁরা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে নিহত ৫৪ জনের নাম সংবলিত একটি কালো ডিজিটাল ব্যানার একটি গাছে সেঁটে দিয়ে তার সামনে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। ব্যানারে নিহতদের নামের তালিকার ওপরে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে- ‘আর কত লাশ চান খালেদা জিয়া।’

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে আগুনে পুড়ে ৫৪ জনের নাম সংবলিত ব্যানার সেঁটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সংসদ সদস্য তারানা হালিম বলেন, আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানাতে আমরা এখানে এসেছি। একটি স্বাধীন দেশে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে কোন সচেতন মানুষ তা মেনে নিতে পারে না। আমরা আশা করব বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে ফিরে আসবেন। তা না হলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। জনগণ তাঁকে ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ সহিংসতার বিপক্ষে। আমরা আন্দোলনকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। এ থেকে মুক্তি চাই। তারা সহিংসতা করুক তা আমরা চাই না।

উল্লেখ্য, ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ কর্মসূচী পালনের পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে গিয়ে আন্দোলনের নামে নাশকতা করে মানুষ হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রাণহানি ঘটার পাশাপাশি বোমা বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাংচুর ও জ্বালাও-পোড়াওসহ নাশকতামূলক কর্মকা- হচ্ছে। এ নাশকতায় এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ হত্যা ও কয়েক হাজার যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ফুঁসে ওঠেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত