একুশ তাপাদার

০২ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৮:০১

মেয়র পদও হারাচ্ছেন আরিফ!

আরিফুল হক চৌধুরী এবার মেয়র পদও হারাতে চলেছেন ! সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার হওয়ার পর এমন আভাসই প্রকট হয়ে উঠেছে।

আরিফুল হক চৌধুরী এবার মেয়র পদও হারাতে চলেছেন ! সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামী হিসেবে গ্রেফতার হওয়ার পর এমন আভাসই প্রকট হয়ে উঠেছে। মেয়র ও কাউন্সিলর সম্পর্কিত বিধানের বিশেষ ধারা অনুসরন করে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে । যার ফলে শূন্য হবে তার পদ । সাধারণত কোন মামলায় অপরাধ প্রমাণ হলেই তবে জনপ্রতিনিধিত্বরা স্বপদে আর বহাল থাকতে পারেন না । তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , আরিফুল হক চৌধুরীর ক্ষেত্রে অনুসরন করা হতে পারে মেয়র ও কাউন্সিলর সম্পর্কিত বিধানের ধারা । যার ১২ নম্বরে বলা হয়েছে,- “যেক্ষেত্রে কোন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অথবা কাউন্সিলর অপসারণের জন্য ধারা ১৩ এর অধীনে কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে , অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কতৃক গৃহীত হইয়াছে, সেইক্ষেত্রে সরকার, লিখিত আদেশের মাধম্যে , ক্ষেত্রমতে, মেয়র বা কোন কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে । ”

এছাড়াও ১২ (২) উপ-ধারা (১) এর অধীনে বলা হয়েছে , “সিটি কর্পোরেশনের কোন মেয়রকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হইলে উক্ত আদেশপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত মেয়র, ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের জেষ্ঠ্য সদস্যের নিকট স্বীয় দায়িত্ব হস্তান্তর করিবে এবং উক্ত মেয়রের বিরুদ্ধে আনীত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা উক্ত মেয়র অপসারিত হইলে, তাহার পরিবর্তে নতুন মেয়র নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত মেয়রের দায়িত্ব পালন করিবেন

এ থেকে বোঝা যায় চার্জশিটভুক্ত আসামী হওয়ায় সরকার চাইলে আরিফুল হককে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করতে পারে এবং মামলায় দোষী সাবস্ত হলে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হবেন তিনি । এক্ষেত্রে যত দিন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে আনীত কার্যক্রম শেষ না হবে ততদিন তিনি মেয়র পদে থাকতে পারবেন না , তাঁর শূন্য হওয়া পদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র নতুন নির্বাচিত মেয়র না আসা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন ।
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে , সরকার মূলত সে পথেই এগোচ্ছে । একই নীতি হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউছের বেলায়ও অনুসরন করা হবে ।

গত ৩০ ডিসেম্বর  গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে হবিগঞ্জ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চান আরিফুল হক চৌধুরী । আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন ।
গত বছর জুলাই মাসে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে মেয়র হন আরিফুল হক চৌধুরী । যিনি কীনা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ১৮ নম্বর (বর্তমান) ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর (তখনকার কমিশনার) ছিলেন , ছিলেন নগর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি । তখনকার প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী এম.সাইফুর রহমানের প্রিয়ভাজন হওয়া সেসময় তাঁর দাপট ছিলো সর্বত্র।
১/১১ এর পট পরিবর্তনের পর দেশের শীর্ষ দুর্নিতীবাজের তালিকায় নাম আসে আরিফের। যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরোটা সময় জেলে থাকতে হয় তাকে ।

আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবং এম. সাইফুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে অভিভাবকশূন্য হয়ে রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি । মনে করা হয় নিজ দলের অপর বলয়ের প্রভাবশালী নেতা ইলিয়াস আলীর দাপটের কাছেই নতি স্বীকার করে নিভৃতে চলে যেতে হয় তাকে।

পরবর্তীতে ইলিয়াস আলী গুম , বিএনপির দলীয় রাজনীতিতে নানা মেরুকরন ঘটা এবং সিটি নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আবারও সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন আরিফ । তুমুল কোন্দলের মধ্যেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত একক প্রার্থী হিসেবে সিসিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল জয় তোলে ফের পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন আরিফ ।
কিন্তু কিবরিয়া হত্যা মামলার চার্জশিটে নাম আসার পর ফের বিপাকে পড়া তিনি আত্মগোপনে থেকে চার্জশিট থেকে নাম কাটাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে আত্মসমর্পণ করেন । তাঁর গ্রেফতারে কোন্দল জর্জরিত সিলেট বিএনপিও কোন প্রতিক্রিয়া দেখাই নি । দায়সারা প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রিয় বিএনপিরও ।

কি হতে যাচ্ছে আরিফের ভাগ্যে , হয়ত জানা যাবে শীঘ্রই । তবে রাজনীতি থেকে যে আবারও বেশকিছুদিনের জন্য নির্বাসনে চলে যাচ্ছেন তিনি এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত