সামিউল্লাহ সমরাট

০৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ২২:২০

ফিরে দেখা: ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মুহম্মদ দবিরুল ইসলাম

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠনে যে কজন তেজোদীপ্ত তরুণ ছাত্রনেতা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে মুহাম্মদ দবিরুল ইসলাম অন্যতম

 
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা পর্বে ‘‘ রাষ্টভাষা বাংলা চাই’’ আন্দোলন, ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলন,পূর্ব পকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) গঠনে, যে কজন তেজোদীপ্ত তরুণ ছাত্রনেতা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে মুহাম্মদ দবিরুল ইসলাম অন্যতম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ক্লাসের সহপাঠী। মুহম্মদ দবিরুল ইসলাম ২৯ ফাল্গুন ১৩২৮ সালে (বাংলা), ১৩ মার্চ ১৯২২ সালে ঠাকরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাধীন বামুনিয়া গ্রামে জন্ম লাভ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলানা তমিজউদ্দিন আহমেদ, মাতা দখতর খানম। 


মাতামহের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের প্রখ্যাত জামালপুর জমিদার বাড়ি। তিনি লাহিড়ী এম ই স্কুল থেকে বিভাগীয় বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। ঠাকরগাঁও হাই স্কুল হতে ১৯৩৮ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন । সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়ন কালে রাজশাহী বিভাগীয় ‘‘মায়াদেবী উন্মুক্ত রচনা প্রতিযোগিতায়’’স্বর্ণপদক লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে আই.এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন।পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের স্বাধীকার আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী ও অন্যান্য আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে এবং
সরকারী রোষানলে পড়েন। পরে ১৯৪৭ সালে তিনি বি.এ পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্রে ভর্তি হন। বিভিন্ন আন্দোলনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং ১৯৫৫ সালে কারাবাস থেকে এল.এল বি পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্তের সাথে উর্ত্তীর্ণ হন। 


১৯৪৭ সালের ৬/৭ সেপ্টেম্বরের ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুবলীগের কর্মী সম্মেলনে দিনাজপুর থেকে ছাত্রনেতা দবিরুল ইসলামের নেতৃত্বে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, এম আর আখতার মুকুল ও আব্দুর রহমান যোগদান করেন। ১৯৪৮ সালে নঈমুদ্দিন আহমদকে আহবায়ক করে পূর্ব পাকিস্তান মুসলীগ ছাত্রলীগের প্রথম সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে দিনাজপুর জেলা থেকে দবিরুল ইসলাম, ফরিদপুর জেলা থেকে শেখ মুজিবর রহমান, কুমিল্লা থেকে অলি আহাদ সহ বিভিন্ন জেলার তেরজন সদস্য হিসেবে অন্তভূুর্ক্ত হন।  ছাত্র মহলে পূর্ব পকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উদ্ধুদ্ধ করে। 


১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে দিনাজপুরের নূরুল হুদা, কাদের বক্স, মুসাতফা নূরউল ইসলাম, এম আর আক্তার মুকুল, দবিরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রথম কাউন্সিল অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে দবিরুল ইসলাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। 


১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রীসভায় তিনি প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী ( শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রম) নিযুক্ত হন সে সময়ে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে সুগার মিল স্থাপনের জন্য জোরালো উদ্যোগ গ্রহন করেন।  


বিরল প্রতিভার অধিকারী মুহাম্মদ দবিরুল ইসলাম ১৯৪৯ ও ১৯৫৪ সালে কারা অভ্যন্তরে অকথ্য নির্যাতন ভোগ করায় হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন। ফলে ১৯৬১ সালে তিনি অকালে মৃত্যুবরণ করেন।    

আপনার মন্তব্য

আলোচিত