৩১ মার্চ, ২০১৫ ০০:১৭
ঢাকা দক্ষিণের তিন মেয়র প্রার্থিকে রীতিমত টাকার কুমিরই বলা যায়। নির্বাচনে প্রার্থীদের দেয়া হলফনামায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন, বিএনপির মির্জা আব্বাস ও নাসির উদ্দিন আহামেদ পিন্টুর সম্পদ এবং দায়দেনা দুটোই অনেক বেশি।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালামের সম্পদ ও দায়দেনা অন্যদের চেয়ে কম দেখা গেছে। রোববার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকনের ব্যবসার পরিমাণ এবং দায়দেনা অন্যদের চেয়ে বেশি। পিছিয়ে নেই বিএনপির মির্জা আব্বাস ও নাসির উদ্দিন আহামেদ পিন্টুও। তুলনামূলক কম সম্পদ ও কম দায়দেনা রয়েছে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালামের। তবে বিএনপির অপর দুই প্রার্থী আসাদুজ্জামান রিপন ও কাজী আবুল বাশারের হলফনামা পাওয়া যায়নি।
সাঈদ খোকনের হলফনামায় দেখা যায়, সাঈদ খোকনের ছয়টি ব্যবসা রয়েছে। এর মধ্যে ১. ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড (সাধারণ বীমা), ২. সাঈদ খোকন প্রপার্টিজ লিমিটেড, প্রপার্টিজ ব্যবসা (নির্মাণ) আমদানি ও রফতানিকারক, ৩. ইন্দো জেএসএ ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ম্যাচ প্রস্তুতকারক ৪. থ্রি এ হোটেল অ্যান্ড প্লাজা লিমিটেড (আবাসিক হোটেল), ৫. মেসার্স এস অ্যান্ড এস করপোরেশন (আমদানি রফতানি) ও ৬. ঢাকা ট্রেডার্স (ট্রেডিং ব্যবসা)।
অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে তিনি দিয়েছেন- নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকা। শেয়ার আছে ১৯ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫ টাকা। মোটর গাড়ির মূল্য ৩৮ লাখ টাকা। ব্যবসার মূলধন রয়েছে ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৪৮৭ টাকা। এছাড়া আসবাবপত্র ও ইলেকট্র্রনিক সামগ্রী তিনি সব উপহারস্বরূপ পেয়েছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে অকৃষি জমি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
দালান, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা যা বাড়ি-পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত। দায়দেনার মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণ ১৯ কোটি ২৭ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। আয়ের উৎস দেখিয়েছেন, বার্ষিক বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া ৩২ লাখ ৩৪ হাজার ১৫০ টাকা। ব্যবসা থেকে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ ও ডিরেক্টরস ফি থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া অতীতে তার বিরুদ্ধে পাঁচটি ফৌজদারি মামলা ছিল বলে উল্লেখ করেছেন।
বিএনপির মির্জা আব্বাস হলফনামায় লিখেছেন, বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৩৭টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অতীতে ছিল ২৪টি মামলা। মির্জা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বার্ষিক আয়ের উৎস দেখিয়েছেন- বাড়ি ভাড়া থেকে ১ কোটি ৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৩ টাকা। শেয়ার ব্যবসা থেকে ৬ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার ২৯০ ও অন্যান্য খাত থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২৫০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দেখিয়েছেন, নগদ ৫০ লাখ, ব্যাংকে জমা আছে ১০ লাখ ৬২ হাজার ১২৩ টাকা। বন্ড রয়েছে ৩৫ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ১০০ ও ৪২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৪৫ টাকা।
স্থায়ী আমানত রয়েছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৯ টাকা। গাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন ৯৭ লাখ ৫০ হাজার, স্বর্ণ আছে ২ লাখ টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে ১০ লাখ টাকার। আসবাবপত্র রয়েছে ৭ লাখ ও অন্যান্য জিনিসের মূল্য ৯০ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- অকৃষি জমি ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার, দক্ষিণ শাজাহানপুরে দালানের মূল্য ১ কোটি ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার ১২৩, অপর আরেকটি দালানের মূল্য ২ কোটি ৬২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪৫ টাকা। এছাড়া জমি বায়না বাবদ অগ্রিম ৪ কোটি টাকা। দায়দেনার মোট পরিমাণ ৭৫ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৯০৩ টাকা।
নাসির উদ্দিন আহামেদ পিন্টুর হলফনামায় দেখা গেছে, আশা এন্টারপ্রাইজ ও ডায়মন্ড থ্রেড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আয়ের উৎস দেখিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া থেকে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ১৪০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র থেকে ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭২ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নগদ ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৮ হাজার ৩২২, বন্ড রয়েছে ৪ কোটি ২৫ লাখ, স্থায়ী আমানত আছে ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭ হাজার ২৮০, এছাড়া একটি জিপ গাড়ি যার মূল্য ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ২২৪, স্বর্ণ রয়েছে আট তোলা, ইলেকট্রনিকসামগ্রী- টিভি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্রের মূল্য ২০ হাজার ও অন্যান্য জিনিসের মূল্য ৬১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০৯ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, কৃষি জমি, অকৃষি জমি, অ্যাপার্টমেন্ট মূল্য ৩ কোটি ৭২ লাখ ৭১ হাজার ২৯৮ টাকা।
দায়দেনার মধ্যে রয়েছে, স্ত্রীর দায়- ২ কোটি ৩৫ লাখ ও নাসির উদ্দিনের ৭ লাখ টাকা। এছাড়া গাড়ি বাবদ দেনা রয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ টাকা। ঋণ রয়েছে- ফিনিক্রস লিজিংয়ের ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭, ডায়মন্ড স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ৫৪ কোটি ৪৩ লাখ ৪ হাজার ৬০৮ টাকা। এছাড়া বর্তমানে তার বিরুদ্ধে চারটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অতীতে আরও দুটি ফৌজদারি মামলা ছিল। আবদুস সালামের হলফনামায় বলা হয়েছে, মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাওন সাগর ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি ব্যবসা রয়েছে।
আয়ের উৎসে শুধু বাড়িভাড়া দেখিয়েছেন। তা হলো বার্ষিক ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- নগদ ৩২ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮.৭৫ টাকা। ব্যাংকে জমা ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ১২১.২৫ টাকা। হাইজ মাইক্রো গাড়ি (ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে) ক্রয় করা, এছাড়া স্বর্ণ রয়েছে ৩৫ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- অকৃষি জমি-৪২ শতাংশ, দালান ছয়তলা একটি। দায়দেনার মধ্যে রয়েছে গাড়ি ক্রয় বাবদ ৫ লাখ ১৬ হাজার ২৫৫ টাকা। এছাড়া বর্তমানে তার বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। অতীতে কোনো মামলা ছিল না।
আপনার মন্তব্য