নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ মার্চ, ২০১৭ ০২:০০

কোন আসনে প্রার্থী হতে চান মিসবাহ সিরাজ?

সিলেট-১ না সিলেট-৩, কোন আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এই নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের রাজনীতিক মহলে চলছে আলোচনা।

এ নিয়ে দ্বন্দ্বের তৈরি করেছেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ নিজেই। বেশকিছুদিন ধরেই আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা প্রকাশ করে আসছেন আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু গত ১৩ মার্চ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন মিসবাহ সিরাজ। ওই সভায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অনুমতি দিলে আমি আপনাদের নিয়ে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে নির্বাচন করব।

মিসবাহ সিরাজের এই ঘোষণার পর সিলেট-৩ আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নতুন করে শুরু হয় আলোচনা। অই আসনের বর্তমান সাংসদ মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের অনুসারীরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন 'বহিরাগত' কোনো প্রার্থীকে তারা মেনে নেবেন না। আর কয়েস বিরোধীরা স্বাগত জানান মিসবাহর এই ঘোষণাকে।


এই নিয়ে আলোচনা, পাল্টাপাল্টি বিবৃতিার মধ্যে গত ২২ মার্চ নগরীর আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে মিসবাহ সিরাজ ঘোষণা দেন, তিনি আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।

ওই সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সিলেট-১ আসনের বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উপস্থিত ছিলেন।

এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক, এবং সিলেট জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি।

বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, সিলেট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সফল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বার্ধক্যজনিত কারণে হয়তো আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। তাই আমি সবাইকে সাথে নিয়ে তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে রক্ষা করতে ও এগিয়ে নিতে চাই।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ৩ বার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করেছেন। আমি আশা করছি এবার আমাকে সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে দলের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হবে।

এসময় সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী ভাই, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনও। আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নামও আলোচিত হচ্ছে।

মিসবাহ সিরাজ যখন মঞ্চ থেকে সিলেট-১ আসনে কেবল আগ্রহের কথা প্রকাশ করছিলেন তখন মঞ্চের সামনে থেকে কর্মীরা তুলে ধরেন ব্যানার। যাতে লেখা রয়েছে- 'মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই'।

সিলেটের দুটি আসনে মিসবাহ সিরাজের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা জানানোর পর তাঁর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আলোচনা- আসলে কোন আসনে প্রার্থী হতে চান মিসবাহ সিরাজ।

এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি সিলেট-১ আসনেই নির্বাচন করতে আগ্রহী। বিভিন্ন সময় সেই আগ্রহের কথা জানিয়েছি।

কিন্তু সম্প্রতি ফেঞ্চুগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে গেলে সেখানকার নেতাকর্মীরা স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে আমাকে প্রার্থীতার ঘোষণার জন্য চাপ দেন। তাদের অনুরোধে আমি বলেছি, যদি নেত্রী দেন তবে আমি সেখানে নির্বাচন করবো।

এদিকে, বিভাগীয় প্রতিনিধি সমাবেশে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সমাবেশের অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের প্রার্থিতা ঘোষণা ও  ব্যানার-ফেস্টুন প্রদর্শন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, এধরনের সমাবেশে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের পক্ষে এমন প্রচারণা চালানো ঠিক হয় নি। তিনি তাঁর প্রার্থিতার বিষয়টি হাইকমান্ডকে জানাতে পারতেন। তাছাড়া তখন মঞ্চে সিলেটের প্রবীন নেতা অর্থমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করছি। তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তবে কোনোদিন নির্বাচন করিনি।

তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি তো মনোনয়ন চাইতে পারি। সকল রাজনৈতিক কর্মীর সে অধিকার রয়েছে। আমি যোগ্য কি না সেটা বিবেচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় মনোনয়ন বোর্ড।

তবে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের ব্যাপারে এখনো দলের হাইকমান্ডের সাথে আলাপ করেননি বলে জানান মিসবাহউদ্দিন সিরাজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত