সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০২:০২

‘ছাত্রলীগকেই ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে ‘বাম সংগঠনের নেতাকর্মী নয়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরই ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক সংহতি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘তারা বলছে, বামেরা কবে ক্যাম্পাস ছাড়বি। আমরা বলছি, ছাত্রলীগ কবে ক্যাম্পাস ছাড়বি?’

জোনায়েদ সাকি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও ছাত্রদের উপর হামলা হয়েছে, কিন্তু হামলার পর ঘটনাকে উল্টোভাবে ঘোরানো ও প্রচার করা এর আগে কখনও হয়নি।”

প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা শিক্ষক হয়েছেন, উপাচার্য হয়েছেন শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে যখন খুশি আপনাদের কাছে যাবে। আপনারা তাদের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যার সমাধান করতে বাধ্য।”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও তাদের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিথ্যাচার করছে অভিযোগ করে সাকি বলেন, “মিথ্যা বলতে গিয়ে আপনারা ঠিকমত সাজাতে পারেন না। একজনের কথার সাথে আরেকজনের কথার মিল নেই। ছাত্রলীগকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি দিন টিকতে পারবেন না।”

সংহতি সমাবেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক ভিপি সেলিম বলেছেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি শুধু উদ্বেগের বিষয় নয়, এটা ক্রোধের বিষয়। পাকিস্তান আমলে আইয়ূব খান ও মোনায়েম খান যেভাবে এনএসএফ বাহিনীকে ব্যবহার করেছিল, সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পেটাতে ছাত্রলীগকে লাটিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই অবস্থানের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেছেন, “আজকে আইয়ূব খান ও মোনায়েম খানের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু যারা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, লড়াই করেছিল তারা আজ অজেয় হয়ে আছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য় অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সমালোচনা করে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, “ভিসির পদে যিনি অবস্থান করেন তার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের কথা শোনা, তাদের সমস্যার সমাধান করা। কারণ শিক্ষার্থীদের জন্যই ভিসি। যে ভিসি নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে গেইটে তালা মেরে বসে থাকেন, শিক্ষার্থীদের কথা শোনেন না, তার ভিসি থাকার কোনো অধিকার নেই।”

‘ছাত্রী নিপীড়নে’ আট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বহিষ্কারসহ কয়েকটি দাবিতে গত মঙ্গলবার উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের এই অবস্থানে অবরুদ্ধ হন উপাচার্য। ঘণ্টা তিনেক পরে পেছন দরজা দিয়ে তিনি কার্যালয় থেকে বেরোতে গেলে তার পথ আটকান আন্দোলনকারীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গিয়ে পিটিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

সরকার সমর্থক সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সে সময় রড-লাঠি নিয়ে চড়াও হন বিক্ষোভকারীদের ওপর; উপাচার্য ভবন থেকে থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরও বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় হামলা হয় বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষকের ভূমিকা থেকে সরে গিয়ে আমলা ও দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা যদি শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা এমন ন্যক্কারজনক হত না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

খালেকুজ্জামান বলেন, “যে ছাত্রলীগ পাকিস্তান আমলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করত সেই ছাত্রলীগ এখন শিক্ষার্থীদের পেটাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, “ছাত্রলীগের অত্যাচার আবাসিক হলের প্রতিটি দরজা-জানালায়। প্রশাসন এগুলো দেখছে না। লজ্জাহীন এ প্রশাসন উল্টো এই ছাত্রলীগের শরণাপন্ন হয়।

অধ্যাপক এ এন রাশেদা বলেন, “বর্তমান ভিসি বা আগের ভিসি-এদের কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা এদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তার নির্দেশ ছাড়া পিঁপড়াও নড়ে না।

“প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর দেড় লক্ষ শিক্ষার্থীর বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেটা গ্রহণ করেছে। শিক্ষা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কোনো ধারণা-ই নেই। উনি ভালো শাসক হতে পারেন, কিন্তু শিক্ষাবিদ নন।”

প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন– ডাকসুর সাবেক ভিপি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক (বাসদ) কমরেড খালেকুজ্জামান, ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গীতিয়ারা নাসরিন, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া প্রমুখ৷

আপনার মন্তব্য

আলোচিত