০৬ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:৫৯
পুরনো ছবি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, করোনার এমন ঘোরতর সংকটেও বাংলাদেশ সরকারের হেঁয়ালি দেশের জনগণকে অসহায় করে তুলেছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে জনগণের সঙ্গে কেন এতো লুকোচুরি করছে এটি বোধগম্য নয়। উন্নত কিংবা অনুন্নত দেশ যারাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েছে তাদেরকে এখন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এখানেই আমাদের ভয়।
তিনি বলেন, দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতামন্ত্রীরা প্রতিদিন যেভাবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অযথা বাক্যবাণ নিক্ষেপ কিংবা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্ববিরোধী মন্তব্য করছেন, তাতে মনে হয় সরকার এখনও পরিস্থিতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছে না। করোনা মোকাবেলায় সরকারের সমন্বয়হীনতাও স্পষ্ট।
সোমবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আপনারা জানেন, করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত বিশ্ব থেকে যতটা না সুসংবাদ আসছে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে দুঃসংবাদ। একটি দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে, তো বাড়ছে অন্য কয়েকটি দেশে। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা শেষ পর্যন্ত বাড়ছেই। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা অতিক্রম করছে লাখের ওপর। যে মুহূর্তে আপনাদের সামনে কথা বলছি তখন গোটা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখের কাছাকাছি। মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছেন ৭০ হাজার মানুষ। আমাদের দেশে গত দুই দিন ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। যা ভীতিকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। শুধু বাংলাদেশই নয় সারাবিশ্ব এক অকল্পনীয় কঠিন সংকটের মুখোমুখি।
‘আমরা আমাদের জীবদ্দশায়, এমনকি বিশ্বের হাতেগোনা সৌভাগ্যবান শতায়ু মানুষেরাও তাদের জীবদ্দশায় আর কখনোই এমন ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হননি। বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলনা করা হচ্ছে বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর হিসেবে।’
তিনি বলেন, দল হিসেবে আমরা শুরু থেকেই বলেছি, এই সংকটটি আমরা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করতে চাই না। কারণ, এই মরণঘাতী করোনাভাইরাস বেছে বেছে মানুষকেই টার্গেট করছে না কিংবা করবে না। বরং একাধারে চলমান এই বৈশ্বিক ও জাতীয় রাষ্ট্রীয় সংকট বাংলাদেশে তো বটেই সারাবিশ্বে এটি এখন খোদ মানবজাতির অস্তিত্বের সংকট।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, আপনারা দেখেছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ২৪ মার্চ তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন ‘দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে অবশ্যই বর্তমান সরকারের বৈধতার সংকট রয়েছে, কিন্তু চলমান করোনাভাইরাস সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ এবং বিপর্যয়কর। বর্তমান সংকট মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে জড়িত। তাই এই সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিএনপি সরকারকে প্রয়োজনীয়ও সহায়তা দিতে প্রস্তুত। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি’।
রিজভী বলেন, বর্তমান সংকটে আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরার পরও আপনারা দেখছেন, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিংবা হাছান মাহমুদ সাহেব কারণে অকারণে বিএনপির বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কথা বলা তাদের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। এ কারণে আওয়ামী লীগের কথার জবাব দিয়ে বিএনপি সময় নষ্ট করতে চায় না। আমরা বরং সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, যেহেতু রাষ্ট্রীয় অর্থ, রাষ্ট্রীয় যন্ত্র আপনাদের হাতে সেহেতু এই মুহূর্তে দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানো আপনাদের দায়িত্ব।
তিনি বলেন, দেশের হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার যে আচরণটি করেছে, এটি কোনো সভ্য রাষ্ট্র কিংবা সভ্য সরকারের আচরণ হতে পারে না। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবস্থানগত পার্থক্য সর্বোপরি সমন্বয়হীনতা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মর্মাহত করেছে। সরকারের পাশাপাশি এই খাতের উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বও চরম দুর্বলতার পরিচয় দিয়েছে। কারখানা খোলা ও বন্ধ রাখা নিয়ে লুকোচুরি খেলা খুবই ন্যক্কারজনক। চাকরি হারানোর ভয়ের কাছে মৃত্যু ভয়কেও হার মানিয়েছে পোশাক শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষজনকে।
‘ফলে তারা সরকারের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে রাস্তায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে শুরু করে কর্মস্থলে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক ট্রাকে, আবার কেউবা হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার কর্মস্থলে গেলেন। যে পরিমাণে জনসমাগম হলো, তা সত্যিই আতঙ্কের। আমাদের মনে ভয় জাগছে। জানি না আমরা ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি কিনা।’
রিজভী বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা ছাড়াও, ভ্যানচালক, কুলি, মজুর, কায়িক শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন পেশার লাখ লাখ মানুষ ঘরবন্দি। দু’মুঠো খাবারের জন্য তাদের হাহাকার আর আহাজারির খবর আসছে। ত্রাণের আশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে মানুষ। প্রতিটি মোড়ে , অলিগলিতে নিরন্ন বুভুক্ষু মানুষের সারি।
তিনি বলেন, এতদিন মন্ত্রীদের ভাষায়-আমাদের দেশ তো সিঙ্গাপুর- ব্যাংকক ছিল! বিশ্বের রোল মডেল ছিল। দেশে কুলখানির দাওয়াত দেয়ার জন্য নাকি ভিক্ষুক খুঁজে পাওয়া যেত না। রাস্তায় বের হলে আমাদের মন্ত্রীরা ভিক্ষুক খুঁজে পেতেন না। মন্ত্রীরা আশ্বাস দিয়ে বলতেন, এই তো আর কিছুদিন পর আমরা কানাডায় রূপান্তরিত হব। কিন্তু এখন শুনি ডাক্তারের পিপিই নাই। ভেন্টিলেটর তো সোনার হরিণ। গতকালও আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যের ডিজি সামর্থ্যবানদের সহায়তা চেয়েছেন। ঢাকার বাইরে করোনা পরীক্ষার কিট নাই। মধ্যবিত্তের পকেটে টাকা নাই। গরিবের পেটে ভাত নাই। চারদিকে কেবল নাই, নাই, নাই!
বিএনপির এই নেতা বলেন, এইসব মানুষদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে বিতরণ করতে সরকার সারাদেশে যেসব চাল বরাদ্দ করেছে ইতিমধ্যেই এসব চাল বিতরণের জন্য তৈরি করা তালিকা নিয়ে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বেছে বেছে নিজস্ব লোকজনের মধ্যে চাল বিতরণ করছেন বলে গণমাধ্যমেও খবর বেরিয়েছে। অন্যদিকে গরিব মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। ত্রাণের চাল চুরি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সতর্কবার্তা থাকলেও থেমে নেই অপকর্ম।
আপনার মন্তব্য