সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

১২ অক্টোবর, ২০২০ ১৮:৫৭

‘অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন মিছবাহ’

সিলেটের দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির সংবাদ সম্মেলন

সিলেটের দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমদ মিছবাহ, কোম্পানিকে নিজের ব্যক্তিগত মালিকানার প্রতিষ্ঠানের মতো পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।

সোমবার (১১ অক্টোবর) সিলেটের মেন্দিবাগের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অসচ্ছতাসহ আরও নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছেলে নওশাদ। তিনি বলেন, দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাফিজের মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণ উত্তরাধিকার সনদসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিলেও তাদেরকে শেয়ার হোল্ডার হিসাবে নিবন্ধন করা হয়নি। তিনি বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত বা অন্যান্য পরিচালকের মতামতকে কোন গুরুত্বই দেন না। কার্যনির্বাহী কমিটি বার বার সভা আহবান করলেও তিনি এসব সভায় উপস্থিত থাকেন না।

তিনি বলেন, ফারুক আহমদ মিছবাহর পরামর্শে কোম্পানি শাহ ডেভলপার কোম্পানিতে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভেজাল জমি ক্রয় করেন। ঐ জমি সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশন অধিগ্রহণ করলেও সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানি পায়নি। তিনি এ বাবদ ১২ কোটি টাকা উত্তোলন করলেও মোটা অংকের টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এরমধ্যে কোম্পানির বিনিয়োগকৃত ১ কোটি টাকার কোন হিসাব প্রদান করেননি। মিছবাহ নিজে শাহ ডেভলপার কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর।

তিনি আরও বলেন, গার্ডেন টাওয়ার ও স্প্রিং গার্ডেনের ফ্ল্যাট মালিকরা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করলেও তিনি রেজিস্ট্রেশন করতে গড়িমসি ও জটিলতা সৃষ্টি করে রেখেছেন। সার্ভিস চার্জ দিয়ে দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানিকে রক্ষণাবেক্ষণ ও ভাড়া আদায়ের দায়িত্ব দিলেও তিনি ভাড়ার টাকা আদায় করে মালিকদের না দিয়ে নিজের কাজে খরচ করেছেন। এছাড়াও গত ১০ বছরে কোম্পানির কোন এজিএম বা ইজিএম হয়নি। যার দায়িত্ব ছিল মিছবার। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে তিনি দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির কোন হালনাগাদ তথ্য ও প্রদান করেন নি। তিনি ভুয়া অডিট রিপোর্ট ও বিভিন্ন সময়ে এজিএম বা ইজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একসাথে ১০ বছরের রিটার্ন দাখিলের চেষ্টা করেছিলেন এ বছর। এ কারণে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারগণ গত মার্চের ১৫ তারিখে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছিলেন। তিনি বেআইনিভাবে এবি ব্যাংক গার্ডেন টাওয়ার শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে মামলা দায়ের হয়েছে এবং এর বিচার চলছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসাবে আমি ১৪ জুলাই নোটিশের মাধ্যমে ৫ আগস্ট কোম্পানির ইজিএম আহŸান করলে মিছবাহ হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসেন, এরপর তা প্রত্যাহারও করেন।

তিনি বলেন, ফারুক আহমদ মিছবাহর কাজের প্রেক্ষিতে কোম্পানির ২ জন পরিচালক গত ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে দুটি মামলা করেন। এসব মামলায় দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির নথি তলব, সম্পত্তি বিক্রি ও শেয়ার হস্তান্তরে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, এয়ারপোর্ট খাসদবিরের রেহানা হাসান নাহার নামক একজন মহিলা নিজেকে মিছবাহর স্ত্রী দাবি করলে বিষয়টি তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। এতে তিনি রেগে যান এবং কোম্পানির রেজুলেশন বই নিজের কাছে নিয়ে রাখেন। এ ব্যাপারে নাহার আদালতে গেলে বর্তমানে তা সিআইডি তদন্ত করছে। এরপর থেকে মিছবাহ তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে কোম্পানির বিভিন্ন পরিচালকের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের করছেন, জিডি করাচ্ছেন। কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এনামুল হক সরদারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি ১৫ বছর এই কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে গত ২০১৮ সালে অব্যাহতি নিয়েছেন। ২০১০ সাল থেকে কোম্পানির ৫ নম্বর টাওয়ার ভাড়া নিয়ে তিনি কলেজ পরিচালনা করছেন ও নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছেন। কিন্তু গত ২ বছর কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী পানি সরবরাহ না করায় এবং অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল দেয়ায় কলেজের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি তিনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মিছবাহর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সমস্যাটির সমাধান হয়নি। তিনি কোম্পানির ১ হাজার ৯শ’টি শেয়ারের মালিক। খাদিম প্রকল্পের দুটি প্লটের বিপরীতে তিনি ১২ লাখ টাকা নগদ জমা দিলেও তাকে কোন প্লটই সমজে দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে নিজের অনিয়ম আড়াল করতে তিনি গত ৪ অক্টোবর এনামুল হক সরদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। এই মামলায় যে পরিমাণ ভাড়া তার কাছে পাওনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তা মোটেও সঠিক নয়।

আব্দুল মুক্তাদির বলেন, বিনা অনুমোদনে কোম্পানির টাকা নেয়া, ফ্ল্যাট ব্যবহারের ভাড়া, বিভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে উত্তোলিত ভাড়ার টাকা নেয়া, ও শাহ ডেভলাপারের অফিস ভাড়া বাবদ তার কাছে কোম্পানির মোট দেড় কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তাছাড়া সিটিসেল কোম্পানির সাথে ৬০ লাখ টাকা রফাদফার বিষয়ে কোন সঠিক জবাব এখনো দেন নি। এনামুল হক সরদারসহ আমরা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডাররা কোম্পানির কাছে ২ কোটি টাকা পাই। হিসাব চাইলে মিছবাহ সুষ্ঠু হিসাব দেন নি। তিনি বলেন, মিছবাহ পরিচালকদের হেয় প্রতিপন্ন করতেই মামলার আশ্রয় নিয়েছেন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি দি ম্যান অ্যান্ড কোম্পানির বৈধ পরিচালক বলে দাবি করেন। মিছবাহ এমডি হিসেবে অবৈধ বলে উল্লেখ করলে সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে তার মাধ্যমে ২০০২ সালের পর থেকে যত ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে, পরিচালক হয়েছেন, শেয়ার হোল্ডার হয়েছেন সবাই অবৈধ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তাদির বলেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। সেখানেই তা ফয়সালা হবে। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাদিরের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার ছেলে নওশাদ। এসময় কোম্পানির কয়েকজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত