স্পোর্টস ডেস্ক

২৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ২২:৪৯

ভারতের পাকিস্তান বধ

২০ ওভারের খেলা তো কি? পাকিস্তান ২০০ ছুঁই ছুঁই স্কোর করবে আর ভারত পৌঁছে যাবে সেখানেও। শেষপর্যন্ত টার্গেট পাড়ি দিতে না পারলেও যুদ্ধ হবে সমানে সমান। কিংবা ১০০ তেই ইনিংস শেষ পাকিস্তানের। আবার এই রান তুলতেই ভারতের ঘাম ছুটে যাবে! ভারত-পাকিস্তান মহারণের ইতিহাস এমনই। বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেট যার বড় সাক্ষী।

টি-টোয়েন্টিতেও খুব একটা এর ব্যতিক্রম হয় না। ভারত-পাকিস্তান মহারণের যে উত্তাপ তার পুরোটার দেখা মিলেছে মিরপুরেও। মাত্র ৮৩ রানেই ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের সেই ঝাঝ। তবে এবার সেটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না। প্রথম ইনিংসের পরই এক তরফা শাসন। যদিও ব্যাট হাতে আগে ধোকার পর বোলিংয়ে শুরুটা ক্ষেপাটেই করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ম্যাচসেরা কোহলির ব্যাটিংয়ে মিলিয়ে গেল পাকিস্তানের সব প্রতিরোধ।

৪৯ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের দেয়া ৮৪ রানের টার্গেট মামুলিই বানিয়ে ফেললেন ভারতের এই ব্যাটিং সেনসেশন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার দ্বৈরথে মিরপুরে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে আরো একবার পাকিস্তানের মুখের ওপর ছড়ি ঘোরালো ভারত। ৭ বারের সাক্ষাতেই ভারতই জিতলো পাঁচবার। এশিয়া কাপের ফাইনালে যাওয়ার পথটা আরো মসৃণ হলো টানা দুই জয় পাওয়া ভারতের।         

মামুলি লক্ষ্যই-৮৪। কিন্তু প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই কি ভারতের এমন শুরু? নাকি পাকিস্তান পেসার মোহাম্মদ আমিরকে বুঝতেই পারলেন না ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও অজিনকা রাহানে? প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ’র আবেদন হলো। এ যাত্রায় বাঁচলেন রোহিত। কিন্তু পরের বলে একই আবেদনে আঙ্গুল তুলে দিলেন আম্পায়ার।

বাকি ওপেনার রাহানেরও একই দশা। আমিরের এলবিডব্লিউর ফাঁদে রাহানেও। ২ রানেই ওপেনাররা সাজঘরে। তবে ওই ২ রান রোহিত বা রাহানের ব্যাট থেকে আসেনি। এদের কেউ-ই রানের খাতা খুলতে পারেননি। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো দুই ওপেনারের শূন্য রানে ফেরার রেকর্ড দেখলো ভারত। আমির তবুও থামলেন না। পরের টার্গেট বানালেন সুরেশ রায়নাকে। আমিরের ডেলিভারি বুঝতে না পেরে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন রায়না।

ভারতের শুরুটা হলো পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ। তখন হয়তো ভারতের দুর্দশার ছবিই দেখতে পাচ্ছিল সবাই। কিন্তু বিরাট কোহলি একাই ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের ভাগ্য। সঙ্গী হিসেবে যুবরাজ সিংও থাকলেন কিন্তু পাকিস্তান বোলারদের শাসন করলেন কোহলিই। ৮ রানেই তিন উইকেট হারানো ভারতকে বুঝতেই দিলেন না জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে কি ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। ৪৯ রান করে আউট হলেও ভারত তখন জয়ের খুব কাছে। এসময় হার্দিক পানডিয়াও আউট হন। তবে বাকি কাজটুকু সেরে নেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং ও অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।      

টস হারেই যেন ভাঙ্গনের সুর বেজেছিল মিরপুর শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তবে সে সুর শুধু পাকিস্তানের কানেই পৌঁছালো। তাদের ইনিংসের শুরু তো তেমনই বলে। যদিও প্রথম ওভারে ভারত পেসার আশিষ নেহরার বলে পাকিস্তান ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজের মারা চার বলছিল মিরপুরে বারুদের গন্ধই ছড়াবে। লড়াই হবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতোই।

কিন্তু নেহরার চতুর্থ বল পাল্টে দিল সব সমীকরণ। মোহাম্মদ হাফিজ তখন সাজঘরে পথে হাঁটছেন। তখনো অবশ্য পাকিস্তান তাদের ইনিংসের অপমৃত্যুর চেহারা দেখতে পায়নি। এটার শুরু ২২ রানের মাথায় বাকি ওপেনার শারজিল খানের বিদায়ে। প্রথম ওভারের চাপ যেন ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানের পুরো ইনিংসে। কেউই হাঁটতে পারছিলেন না চেনা পথে। ব্যাটও যেন কথা বলছিল ভারতের হয়ে!

বল কেবল কথা শুনছিল নেহরা, হার্দিক পানডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজাদেরই! এর মাঝে জুটলো রান আউট হওয়ার হতাশাও। দুই ওপেনারকে হারিয়ে পাকিস্তান যখন আলোর সন্ধানে তখন রান আউট হয়ে ফিরলেন খুররম মনজুর। ১০ রান করা খুররমের বিদায়েই যেন টিকে থাকা বাকি আশাটুকুও ফুড়–ৎ করে উধাও। তিন রান পর (দলীয় ৩৫ রান) শোয়েব মালিকও পরাস্থ। ৪০ রান পেরোতেই নেই ৪ উইকেট!

জ্বালাটা দিগুণ হলো পরের ওভারের প্রথম বলেই উমর আকমলের বিদায়ে। এসময় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সরফরাজ আহমেদ কিছুটা আশার আলো দেখাতে শুরু করলেন। কিন্তু অন্যপাশে চলতেই থাকলো আসা-যাওয়ার মিছিল। অধিনায়ক আফ্রিদি, ওয়াহাব রিয়াজরা কিছুই করতে পারলেন না দলের জন্য। পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলের কারণে ৬২ টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ১০ ওভারে প্রথমবারের মতো ৬ বা তার বেশি উইকেট ফেলার রেকর্ড হয়ে যায় ভারতের।    

মাত্র ২৫ রান করেই অনায়াসে পাকিস্তান ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরার সরফরাজও থামলেন ৭০ রানের মাথায়। এরপরের ১৩ রান এলো ব্যাটের কানায়-কোনায় লেগে। ৮৩ তেই ‘প্যাকেট’ পাকিস্তান। উল্টো দিকে হার্দিক পানডিয়ার মুখে চওড়া হাসি। মোহম্মদ আমিরের স্টাম্প উপড়ে ৩ উইকেট পূরণ করা পানডিয়ার যে এটাই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।  

আপনার মন্তব্য

আলোচিত