নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ মার্চ, ২০১৬ ০১:২৮

বাংলাদেশকে সমর্থন করা কি দেশদ্রোহিতা হবে, প্রশ্ন কবি শ্রীজাতের

এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশর অসাধারণ জয়ে উচ্ছ্বসিত পশ্চিমবাংলার কবি শ্রীজাত। একইসঙ্গে বুধবারের ম্যাচে পশ্চিমবাংলার অনেক বাঙালির বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়া কি দেশদ্রোহিতা হবে এই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

বুধবার এশিয়া কাপের শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এই জয়ের পর কবি ও গীতিকার শ্রীজাত তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন-

'আজ এশিয়া কাপ-এ বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারাল। চমৎকার ব্যাপার, সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ জন বাঙালির জয়জয়কার। বাঙালি হিসেবে ভাললাগার মতো ঘটনা বৈকি। এখন মুশকিল হচ্ছে, গোটা সন্ধে যাবৎ অগুনতি ভারতীয় বাঙালি বাংলাদেশকে প্রকাশ্যে গর্বিত সমর্থন জানালেন। ১১ জন বাংলাদেশী বাঙালি পাকিস্তানকে হারানোয় অসংখ্য ভারতীয় বাঙালি জনসমক্ষে উদযাপনের ডাক দিলেন। স্বাভাবিকভাবেই, এক ভাষার এবং একদা একই মাটির অংশীদার হবার সুবাদে। এই আবেগ অবান্তর নয়।

কিন্তু প্রশ্ন হল, আগামীকাল কি তাহলে প্রভূত পরিমাণ ভারতীয় বাঙালির জেলে যাওয়া সুনিশ্চিত, দেশদ্রোহিতার অপরাধে? নাকি পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে বেশি মাত্রায় না-পসন্দ হওয়ায় আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন চলতেই পারে?

তাই যদি হয়, তাহলে বহু ভারতীয় নাগরিক পাকিস্তানের সঙ্গে এক ভাষা এবং একদা একই মাটি ভাগ করে নেবার সুবাদে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান তুলতে পারেন। তাঁরা কি এ দেশে বসবাসের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন পরদিন থেকে? খুব ঝামেলার অঙ্ক। কিছুতেই মিলতে চাইছে না।

 

তবে শ্রীজাতের সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশী লেখাকি মাসুদা ভাট্টি মন্তব্য করে লিখেছেন, 


পাকিস্তান জিন্দাবাদ আর জয় বাংলা কি এক হলো শ্রীজাত? কোনো বাংলাদেশী কি আপনাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় সংসদ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে গিয়েছেন? বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষার জন্য কি আপনাদের জাতীয় আয়ের অতোটা ব্যয় হয় যতোটা আপনাদের ব্যয় হয় পাকিস্তান সীমান্ত পাহারায়? আপনার কি ধারণা, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কখনও সেই অর্থে যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ হয়ে বসে থাকবে? হয়তো জেএনইউ-র ঘটনাবলী আপনাকে এই প্রশ্ন উত্থাপনে উদ্বুদ্ধ করে থাকবে কিন্তু পাকিন্তানের উগ্র জঙ্গিইজম ও ধর্মভিত্তিক জাতীয়বাদের সঙ্গে আপনি কি কোনো ভাবেই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মেলাতে পারেন? নাকি কোনো ভাবেই মেলে? যে কারণে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিলে ভারতীয়ত্ত্ব (ইন্ডিয়ানিজম) আঘাত পায় সেই একই কারণে জয় বাংলা বললে আসলে ভারতীত্ত্ব একটু হলেও মহান হয়ে ওঠে। অঙ্কটা আসলে সহজ, জিন্দাবাদ আর জয় শব্দদ্বয়ের মধ্যেই এর উত্তর আছে। একটি শব্দ ভারতীয়ত্ত্বকে হত্যা করতে চায়, আরেকটি শব্দ ভারতকে মহৎ করে তোলে---একটি শব্দে বোমা বিস্ফোরণ আর পোড়া লাশের গন্ধ পাওয়া যায়, আরেকটিতে শান্তি, বন্ধুত্ব, বিশাল ভারতীয় পণ্যের বাজার আর ভবিষ্যতে ইউরোপিয় ইউনিয়নের মতো একটি বিশাল কমিউনিয়ন গঠনের আশাবাদ জেগে ওঠে। এখন আপনিই বলুন শ্রীজাত, অঙ্কটা কি আসলেই ঝামেলার?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত