ক্রীড়া প্রতিবেদক

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ ২১:৫৫

২০১৬: ইংল্যান্ডের সাথে টেস্ট জয় আর টি-টোয়েন্টিময় বছর

২০১৬ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছিলো টি-টোয়েন্টিময়। এ বছর ১৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। অক্টোবরে শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছে ৯টি আর টেস্ট মাত্র দুটি।

বছরের শুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে টেস্ট বাদ দিয়ে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের সাথে ৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে বছর শুরু হয় টাইগারদের। এরপর ঢাকায় প্রথমবারের মত এশিয়া কাপও আয়োজিত হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এশিয়া কাপের  ফাইনালসহ ৫ ম্যাচ খেলার পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার টেন পর্যন্ত মোট ৭টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে দীর্ঘ পাঁচ মাসের বিরতীর পর আফগানিস্তানের সাথে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আয়োজন করে বিসিবি। আফগান সিরিজ শেষেই ইংল্যান্ডের সাথে ৩ ওয়ানডে ও ২ টেস্টের পূর্নাঙ্গ সিরিজ খেলে মাশরাফি-সাকিবরা।

১৬টি টি-টোয়েন্টির মধ্যে ৭টিতে জয়ী হয় বাংলাদেশ, হেরে যায় ৮ ম্যাচ আর বৃষ্টির জন্য পরিত্যাক্ত হয় অপর ম্যাচ। আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের সাথে খেলা ৬ ওয়ানডেতে ৩ টি করে জয় ও হার খাতায় লেখা হয় বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের সাথে ২ টেস্টের প্রথমটিতে হেরে গেলেও দ্বিতীয়টিতে অবিস্মরণীয় জয় পায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের সাথে টেস্ট জয়ের জন্যই ২০১৬ সালটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। তবে বছরের একদম শেষ সপ্তাহে নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচে হেরে হতাশা দিয়েই শেষ করেন মাশরাফিরা।

জিম্বাবুয়ে সিরিজ
১৫ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের সাথে খুলনায় ৪টি টোয়েন্টি খেলে প্রথম দুটিতে জিতলেও শেষ দুটি হেরে যায় টাইগাররা।

১৫ জানুয়ারি প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের করা ১৬৩ রান তাড়া করে ৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে মোস্তাফিজ ও ব্যাটিংয়ে সাব্বির রহমান বাংলাদেশের জয়ে ভূমিকা রাখলেও ৭৯ রান করে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন।

১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় ম্যাচে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের ১৬৭ রানের জবাবে ১২৫ রানের বেশি করতে পারেনি মাসকাদজারা। এ ম্যাচে ব্যাটে-বলে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচ সেরা হন সাব্বির রহমান।

২০ জানুয়ারি তৃতীয় ম্যাচে ম্যালকম উলারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৮৭ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করা জিম্বাবুয়াইনদের কাছে ৩১ রানে হেরে যায় মাশরাফিরা।

২২ জানুয়ারি সিরিজের চতুর্থ ও শেষ ম্যাচটিও ছিল হতাশার। মাসাকাদজার ৯৩ রানের কল্যাণে জিম্বাবুয়ের ১৮০ রানে বিশাল পুঁজির জবাবে ১৬২ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি

২৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ভারতের ৪৫ রানে হারে বাংলাদেশ। রোহিত শর্মার ৮৩ রানের ইনিংসে ভর করে ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ১৬৭ রানের লক্ষ্যে পৌঁছানোর ৪৫ রান আগেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।  

নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয় পায় বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ১৩৩ রানের বেশি করতে না পারলেও শক্তিশালী বোলিং দিয়ে আমিরাতকে ৮২ রানের বেশি করতে দেয়নি মোস্তাফিজরা। ব্যাটে-বলে অবদান রেখে ম্যাচ সেরা হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।

২৮ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শ্রীলংকাকে ২৩ রানে হারিয়ে ফাইনালের আশা জিইয়ে রাখে মাশরাফির দল। সাব্বিরের ৮০ রানের দারুণ ইনিংসে ভর করে ১৪৭ রান দাঁড় করিয়ে লঙ্কানদের ১২৪ রানে বেঁধে রাখেন মাশরাফি-মোস্তাফিজ-সাকিবরা। তবে এই ম্যাচেই পাওয়া চোটে  পড়ে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায় ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজের।

২ মার্চ ফাইনালে উঠার শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৫ বল হাতে রেখে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ না থাকলেও আল-আমিন, তাসকিনদের তোপের মুখে পাকিস্তানিদের চেপে রেখে ১২৯ রানের বেশি করতে দেয়নি বাংলাদেশ। চোট থেকে ফিরে এই ম্যাচে মাঠে নামা তামিম ইকবাল ব্যর্থ হলেও অপর ওপেনার সৌম্য সরকারের ৪৮, মাহমুদুল্লাহর ২২ ও শেষ দিকে অধিনায়ক মাশরাফির ঝড়ো ১২ রানে দুর্দান্ত জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। ৪৮ রান করে  ম্যাচে সেরা হন সৌম্য সরকার।

৬ মার্চ বৃষ্টিবিঘ্নিত  ফাইনালে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি টাইগাররা। ভারতের সাথে ৮ উইকেটে হেরে টানা দুটি এশিয়া কাপে দ্বিতীয় সেরা হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
এশিয়া কাপের ফাইনাল হারার ক্ষত তাজা থাকতেই ৩ দিন পর ৯ মার্চ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ম্যাচে ভারতের ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ভারতের হিমাচল প্রদেশের প্রতিকূল পরিবেশে ৮ রানে জিতে শঙ্কামুক্ত হয়ে যাত্রা শুরু করে টাইগাররা। বাংলাদেশের করা ১৫৩ রানের জবাবে ১৪৫ রানে থামে ডাচদের ইনিংস। ৮৩ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন তামিম ইকবাল।

তবে এই ম্যাচে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য দুই আম্পায়ার সুন্দরাম রবি ও রড টাকার রিপোর্টেড করেন টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ ও বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিকে। পরে টুর্নামেন্টের মাঝপথে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে নিষিদ্ধ হন এই দুজন। যা নিয়ে তোলপাড় হয় ক্রিকেট দুনিয়ায়।

১১ মার্চ একই মাঠে প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ ওভার খেলেই বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যায়।

১৩ মার্চ ওমানের বিপক্ষে প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তোলে নেয়া তামিমের ৬৩ বলে ১০৩ রানের ইনিংসের জন্য সমর্থকরা মনে রাখবেন এই ম্যাচ। বাংলাদেশের দেয়া ১৮০ রানের কোন জবাব ওমানের কাছে ছিল না। ৬৫ রান তুলেই গুটিয়ে যায় তারা।

১৬ মার্চ সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। হতাশার এই ম্যাচে ৫৫ রানে হেরে যায় মাশরাফিরা। পাকিস্তানের করা ২০১ রানের বিশাল সংগ্রহের জবাবে ১৪৬ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। পরাজয়ের হতাশার পর তাসকিন ও সানির বোলিং নিষিদ্ধ হবার খবর হতাশা বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ।

২১ মার্চ বেঙ্গালুরুতে তাসকিন-সানিকে ছাড়া বিমর্ষ বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সাথে লড়াই করে ৩ উইকেটে হেরে যায়। মাহমুদুল্লার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথমে ব্যাট করে ১৫৬ রান তোলার পর অসীদের ৭ উইকেট ফেলে দিয়ে জয়ের আশা জাগিয়েও হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

২৩ মার্চ একই মাঠে জন্ম হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে আরেকটি বড় আক্ষেপের। তাসকিন-সানির বোলিং নিষিদ্ধের পর নানামুখী আলোচনার মধ্যে মাঠেই দারুণ জবাব দেয়ার উপলক্ষ তৈরি করেছিলেন মাশরাফি-মোস্তাফিজরা। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে চেপে রেখে ১৪৬ রানের বেশি করতে না দিয়েই সাবলিল ব্যাটিংয়ে জয়ের দিকেই এগোচ্ছিলেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। হার্দিক পাণ্ডার করা শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণে প্রথম ৩ বল থেকে ১০ রান তুলে নিয়েও অবিশ্বাস্যভাবে শেষ ৩ বলে আর কোন রান তুলতে না পেরে উল্টো ৩ উইকেট হারিয়ে ১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। শেষ হয়ে যায় পরের রাউন্ডে উঠার স্বপ্নও।

বেঙ্গালুর অবিশ্বাস্য পরাজয়ের ট্রাজেডির পর ২৬ মার্চ কলকাতায় টুর্নামেন্টে নিজেদের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে উল্টো আরও ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। ২২ রানে ৫ উইকেট তোলা মোস্তাফিজের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে ১৪৬ রানের টার্গেট পেয়েও মাত্র ৭০ রানে অলআউট হয়ে ৭৫ রানে হেরে বিশ্বকাপ শেষ করে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।

আফগানিস্তান সিরিজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে ৫ মাসের দীর্ঘ বিরতির পর ২৫ সেপ্টেম্বর মিরপুর শেরে-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের সাথে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ৭ রানে জিতে নতুন মৌসুমে শুভ সূচনা করে মাশরাফি বাহিনী। তামিমের ৮০, রিয়াদের ৬২ ও সাকিবের ৪৮ রানের ইনিংসে ২৬৫ রান তোলা বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন রহমত শাহ ও হাশমতুল্লাহ শহিদি। তবে ম্যাচ সেরা সাকিবের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত জয় বাংলাদেশেরই।
২৮ সেপ্টেম্বর শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। টপ অর্ডারের ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে কেবল ব্যতিক্রম ছিলেন অভিষিক্ত মোসাদ্দেক সৈকত। তার ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংসের ভীতে দাঁড়িয়ে ২০৮ রান করা বাংলাদেশকে শেষ ওভারে গিয়ে হারায় আফগানিস্তান। ৪৯ রান করে মোহাম্মদ নবী গড়ে দেন এই ম্যাচের ব্যবধান।

তবে শেষ ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্যের পুরো পরিচয় দিয়ে বিশাল জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগার বাহিনী। তামিমের সেঞ্চুরিতে ২৭৯ রান তোলা বাংলাদেশের সামনে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান।

ইংল্যান্ড সিরিজ
নিরাপত্তার শঙ্কা কাটিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসা ইংল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচেই সহজের হারানোর সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে হাতছাড়া করে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ।

৭ অক্টোবর মিরপুরে বেন স্টোকসের সেঞ্চুরিতে ৩০৯ রান তোলা ইংলিশদের জবাবে ইমরুল কায়েসের দুর্দান্ত শতক আর সাকিবের অর্ধশতকে জয় হাতের মুঠোয় থাকা অবস্থায় ব্যাটিং ধসে উল্টো ২১ রানে হেরে যায় মাশরাফিরা। হাতে ৬ উইকেট রেখে এক পর্যায়ে ৫২ বলে ৩৯ রানের লক্ষ্য থাকা অবস্থায় মাত্র ১৭ রানেই বাকি সব উইকেট খুইয়ে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দেয় বাংলাদেশ।

৯ অক্টোবর দ্বিতীয় ম্যাচেই অবশ্য তেতে উঠে জয় তোলে সিরিজে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দাপটে নৈপুণ্য দেখিয়ে এই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আগে ব্যাট করে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে দাঁড় করান মাহমুদুল্লাহ (৭৫) ও ২৯ বলে ৪৪ রান করা মাশরাফি। নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের ২৩৮ রানের জবাবে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় জস বাটলারদের ইনিংস। ২৯ রানে ৪ উইকেট নেন বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক।

চট্টগ্রামে ১২ অক্টোবর ফাইনালে পরিণত হওয়া সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে হতাশায় পোড়ান বেন স্টোকস। বাংলাদেশের দেয়া ২৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় এই ইংলিশ অলরাউন্ডার রাখেন বড় ভূমিকা। তার ৪৭ রানের ইনিংসে বাংলাদেশকে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে যায় ইংলিশরা। টানা ৬ ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর জয়রথ থামে বাংলাদেশের।

টেস্ট সিরিজ

ইংল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজ খুইয়ে প্রায় ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশা ছিল সামান্যই। তবে ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টে টার্নিং উইকেট বানিয়ে অ্যালেইস্টার কুকের দলকে চেপে ধরে জয়ের খুব কাছেই চলে গিয়েছিল মুশফিকের দল। অভিষিক্ত মেহেদি হাসান মিরাজের অফ স্পিনে খাবি খেতে থাকা ইংলিশদের বিপক্ষে শেষ দিনে গিয়ে ২২ রানে হেরে যাওয়া ম্যাচের ফল বিপরীতে যাওয়ার দায় ব্যাটসম্যানদেরই।

চট্টগ্রামে জিততে জিততে হারলেও মিরপুরের ‘হোম অব ক্রিকেট’ এ ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২০১৬ সালে খেলা নিজেদের শেষ  টেস্ট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক দিন। প্রথম ম্যাচে জয়ের কাছে গিয়েও না পারার আক্ষেপ বাক্সবন্দি রেখে টেস্টের কুলিন দল ইংল্যান্ডকে মাত্র ৩ দিনেই হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

তামিম ইকবালের শতক ও মুমিনুলের অর্ধশতকের পরও প্রথম ইনিংসে কঠিন পিচে ২২০ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করে ইংল্যান্ড। এবারও মেহেদি মিরাজ নেন ৬ উইকেট।

দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম, ইমরুল, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব ও শুভাগতের দৃঢ়তায় ২৯৬ রান তোলে সফরকারীদের সামনে ২৭৩ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় মুশফিকের দল।

তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে বিনা উইকেটে ১০০ রান তোলা ইংল্যান্ডকে শেষ সেশনে ভড়কে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। টার্নিং পিচে এই অফ স্পিনারের সাথে অভিজ্ঞ সাকিবের ঘূর্ণির জবাব ছিল না ইংলিশদের কাছে। দুজন মিলে মূলত এক সেশনেই গুটিয়ে দেন কুক-রুটদের। মিরাজ ইনিংসে ৭৭ রানে ৬ উইকেট আর সাকিব ৪৯ রানে নেন ৪ উইকেট।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই ১২ উইকেট নিয়ে দেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েন তরুণ মিরাজ। ঐতিহাসিক জয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের কোটায় প্রত্যাশিতভাবেই নাম লিপিবদ্ধ হয় যুব দলের সাবেক এই অধিনায়কের।

বছরের শেষ প্রান্তে এসে নিউ জিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত হবার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। আড়াই বছর পর এই প্রথম কোন ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচ হারল মাশরাফিরা। প্রথম ওয়ানডেতে কিউইদের রানের নিচে চাপা পড়ে হারলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের সম্ভবনা জাগিয়েও নাটকীয় ব্যাটিং ধসে ৭৭ রানে হারে টাইগাররা। আর শেষ ওয়ানডেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে না পেরে হার ৮ উইকেটে। নতুন বছরেও ৩ জানুয়ারি টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু করবে মাশরাফির দল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত