স্পোর্টস ডেস্ক

১০ জুন, ২০১৭ ২৩:৫৪

সেমিফাইনালে বাংলাদেশ

আইসিসি চাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ। শনিবার ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়ার হারের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গেছে টাইগারদের শেষ চারে উঠা। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিধর দেশকে বিদায় করে সেমিফাইনালে ঠাঁই করে নিয়েছে মাশরাফি বাহিনী।

১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফিরেই ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিলো বাংলাদেশ। এবারই প্রথম আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে সেমি-ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ।

শনিবারের ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের উপর অনেকটাই নির্ভর করছিলো বাংলাদেশের ভাগ্য। অস্ট্রেলিয়া হারলে বা নিতান্ত টাই হলেও বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে শেষ চারে- এমন সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশের কোটি দর্শকদের প্রত্যাশা পুরণ করে জিতেছে ইংলিশরা। ফলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটক পড়তে হলো অস্ট্রেলিয়াকে আর বাংলাদেশ উঠে গেলো পরের ধাপে।

ইংল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা বাংলাদেশ পরের ম্যাচে বেঁচে যায় বৃষ্টির জন্য। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরিত্যক্ত হওয়া সেই ম্যাচ থেকে পাওয়া এক পয়েন্টে টিকে থাকে মুশফিকুর রহিম-তামিম ইকবালদের দল।

আর শুক্রবার বাঁচা-মরার ম্যাচে সাকিব আল হাসান-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং বীরত্বে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে বেঁচে থাকে শেষ চারের আশা। তবে স্বপ্নের সেমি-ফাইনালে ওঠাটা তাদের হাতে ছিল না।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে অস্ট্রেলিয়া যেত সেমি-ফাইনালে। পারেনি স্টিভেন স্মিথের দল। স্বাগতিকদের কাছে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে হেরেছে ৪০ রানে। গত বিশ্বকাপে যাদের বিদায় করে শেষ আট নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ, এবার তাদের জয়েই নতুন উচ্চতায় গেল তারা।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়া ২৭৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ গড়ে। সেটির পেছনে ছুটতে গিয়ে ৩৫ রান তুলতেই ইংল্যান্ড তিন শীর্ষ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলায় ইংলিশ সমর্থকদের মতো বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে। তবে চতুর্থ উইকেট স্টোকস ও অধিনায়ক এউইন মরগ্যানের দুর্দান্ত জুটিতে ইংল্যান্ড চালকের আসনে ফেরে।

মরগ্যান ফিরে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডকে আর বিপদে পড়তে দেননি স্টোকস। জস বাটলারকে নিয়ে দারুণ জুটি গড়ে ইংলিশদের কক্ষপথেই রাখেন এই স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। স্টোকসের সেঞ্চুরির কিছুক্ষণ পর ৪০.২ ওভার শেষে দলীয় ২৪০ রানের সময় বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়। এরপর আর খেলা শুরু করা সম্ভব না হলে বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডকে ৪০ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।

ইংল্যান্ডের হয়ে মরগ্যান ৮১ বলে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ৮৭ রান করে আউট হন। স্টোকস ১০৯ বলে ১৩টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ১০২ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তার সঙ্গী বাটলার অপরাজিত ছিলেন ২৯ রান নিয়ে।

২৭৭ রান তাড়া করতে নেমে মিচেল স্টার্কের প্রথম বলেই চার হাঁকান জেসন রয়। তবে পরের বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন এই ইংলিশ ওপেনার। জস হ্যাজলউডের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিঞ্চকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আরেক ওপেনার অ্যালেক্স হেলস। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ৩৫ রানের মাথায় ফিরে যান ইনফর্ম ব্যাটসম্যান জো রুটও। আর তাতেই চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।

তবে সেই চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে স্টোকস-মরগ্যান। এই দুজন বলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রান তোলে উল্টো অস্ট্রেলিয়ান শিবিরে পাল্টা আঘাত হানেন। এই দুজন চতুর্থ উইকেটে ১৫৭ বলে ১৫৯ রানের অনবদ্য জুটি গড়েন। দলীয় ১৯৪ রানের মাথায় মরগ্যান রানআউট হয়ে ফিরে গেলেও বিপদে পড়েনি ইংল্যান্ড। বাটলার-স্টোকসের দৃঢ়তায় দুর্দান্ত জয় পায় স্বাগতিকরা। ‘জয়’ হয়েছে বাংলাদেশেরও।

এর আগে শেষ ১০ ওভারের হতাশাজনক ব্যাটিং সত্ত্বেও নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের হয়ে হেড ৭১, ফিঞ্চ ৬৮ এবং স্মিথ করেন ৫৬ রান। ইংল্যান্ডের হয়ে আদিল রশিদ ও মার্ক উড চারটি করে উইকেট নেন। বেন স্টোকস নেন একটি উইকেট।

আগেই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করা ওয়েন মর্গ্যানের দল ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা দল। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। আগামী বৃহস্পতিবার এজবাস্টনে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে খেলবে তারা। প্রতিপক্ষ এখনও ঠিক হয়নি।

গত বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল খেলেছিল কোয়ার্টার-ফাইনালে। সেবারই প্রথম আইসিসির টুর্নামেন্টের শেষ আটে খেলেছিল বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপ ও এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। দেশের মাটিতে এশিয়ার দলের সঙ্গে খেলা আর বিরুদ্ধ কন্ডিশনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের মতো গ্রুপ থেকে শেষ চারে যাওয়া মোটেও এক নয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত