ক্রীড়া প্রতিবেদক

১৩ আগস্ট, ২০১৫ ২০:৫৪

সাফ অনুর্ধ-১৬ ফুটবল : মুগ্ধতা ছড়ালো কিশোরেরা, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার অভিমূখী সবকটা সড়কে দীর্ঘ জ্যাম। রিকাবীবাজারেই সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের অবস্থান। বিকেলে এই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভারত। খেলা দেখতে তাই দুপুর থেকেই স্টেডিয়ামমূখী ফুটবলপ্রেমীরা। খেলা শুরুর ঘন্টাখানেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ সবক’টা গ্যালারি।

স্টেডিয়ামভর্তি এই হাজার বিশেক দর্শককে বিফল করেনি বাংলাদেশের কিশোররা। গত আসরের চ্যাম্পিয়ান ভারতকে হারিয়ে টানা ২য় জয় আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে সাফ অনুর্ধ-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়ানশিপের এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ান হয়েই সেমিফাইনালে পা রাখলো বাংলাদেশ।

ভারত গত আসরের চ্যাম্পিয়ান, আগের ম্যাচেই শ্রীলংকাকে ৫-০ গোলে গুড়িয়ে দিয়েছে তারা। শক্তিমত্তার বিচারে কিছুটা এগিয়েই ছিলো ভারত। তবে বাংলাদেশের কোচ গোলাম জিলানী আগের দিনই জানিয়েছিলেন, এসব পরিসংখ্যানগত হিসেব নিকেষের ধার ধারবে তার শিষ্যরা। বরং প্রথম ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আক্রমণতাত্মক ফুটবল খেলতে চায় বাংলাদেশ।

কিন্তু মুখে তো অনেক কিছুই বলা যায়। মাঠে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারে ক’জন? বাংলাদেশের কিশোররা পারলো। আর পারলো বলেই বৃহস্পতিবার রাতে এই রিপোর্ট লেখার সময়ও স্টেডিয়ামের আশপাশের সড়কে মিছিল। বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার। গ্যালারির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ক্ষাপাটে দর্শকদের পতাকা নিয়ে ভো-দৌড়।

বৃহস্পতিবার ম্যাচ শুরুর পর থেকেই আক্রমনে বাংলাদেশ। এখানে আরেকবার উদৃত করতে হবে বাংলাদেশ কোচকে। আগের প্র্যাকটিসে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘শ্রীলংকা বিপক্ষে যে সব ভুল করে অনেকগুলো গোলের সুযোগ মিস করেছে তার শিষ্যরা ভারতের সাথে সেই ভুলের পুণরাবৃত্তি হবে না।’ 

গুরুর এই কথাও রাখলো জিলানীর শিষ্যরা।

আগের ম্যাচে যেখানে প্রথম দুটি সহজ সুযোগ মিস করেছিলো বাংলাদেশ সেখানে গতকাল প্রথম সুযোগেই গোল। খেলার ৩৩ মিনিটের মধ্যে গোল করে বাংলাদেশ দলকে প্রথমবারের মতো উল্লাসে মাতান শাওন।

বাঁ প্রান্ত দিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া বল নিয়ে দারুণ ক্ষিপ্ততায় ভারতের ডি বক্সে ঢুকে দর্শনীয় শর্টে গোল করেন শাওন। প্রথমার্ধের বাকী সময়ের পুরোটাই আধিপত্য ধরে রাখে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ একের পর এক আক্রমণ করলেও আর গোলের দেখা পায়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমথায় ফিরে ভারত। অতি আক্রমনাত্মক ফুটবলের খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশকে। দ্বিতীয়ার্ধের ৪র্থ মিনিটে একটি পাল্টা আক্রমন থেকে গোল করে ভারতকে সমতায় ফেরান রহিম আলী।

গোল পেয়ে অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠে ভারত। ক্লান্তি হোক কিংবা কৌশলগত কারনেই দ্বিতীয়ার্ধের বেশকিছু সময় অনেকটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। খেলার শেষের দিকে এসে আবার আক্রমনে বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে একের পর এক আক্রমন সামলাতে তখন ব্যতিব্যস্ত ভারতীয় রক্ষণ। ভারতীয় রক্ষণভাগকে এমন চাপে রাখার সুফলও মিললো। খেলার ৪০ মিনিটে বাঁ প্রান্ত বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়া নিপুকে পেছন দিক থেকে টাকল করে বসেন ভারতীয় রক্ষণভাগের খেলোয়াড় চঙ্গমলিপা। সাথে সাথে সাথেই বেঁজে ওঠে রেফারির বাঁশি। গর্জে ওঠে স্টেডিয়াম। পেনাল্টি।

বাংলাদেশের পক্ষে পেনাল্টি শট নিতে আসেন আখতারুজ্জামান। পুরো গ্যলারি দাঁড়িয়ে। পুরো গ্যালারিতে তখন পিনপতন নীরবতা। এই নিরবতা মিনিটখানেকই। মিনিটখানেক পড়েই সমস্বরে গর্জে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। ততক্ষণে আখতারুজ্জামানের শট খুঁজে নিয়েছে ভারতীয় জাল। বাংলাদেশ ২, ভারত ১।

খেলার বাকী সময়টুকু কেবল সময়ক্ষেপনের। কয়েকটি থ্রো আর কর্ণারের। স্কোর লাইনে কোনো হেরফের হয়নি। ফলাফলে তো নয়ই।

শেষ বাঁশি বাজার দীর্ঘক্ষণ পরও মাঠে পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করলেন বাংলাদেশ দলের বিজয়ী কিশোররা। একে অপরকে জড়িয়ে মাঠে লুটোপুটি খেলেন। দর্শকরাও নেচে, চিৎকার করে অভিনন্দিত করলেন বিজয়ী বীরদের। কেবল গোলের হিসেবে নয়, দারুণ সব ড্রিবলিং, গতি, চমৎকার সমন্বিত ফুটবলের মাধ্যমে এই বীরেরা যে মন জয় করে নিয়েছে সকল দর্শকদেরই।

ভারতের বিরুদ্ধে এই জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হওয়া নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের। সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছিলো আগের ম্যাচেই। এগুলো হলো এই টুর্ণামেন্টের হিসেব নিকেষ। এইসব হিসেব নিকেষ ছাড়াও এই কিশোরের দল, এই গ্যালারি ভর্তি দর্শক যেনো ফুটবলে বাংলাদেশের পুণরোথ্থানেরই স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত