১৯ আগস্ট, ২০১৫ ২০:০০
বুধবার হোটেল ছাড়ার আগে শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ ফুটবল দল
এমন উৎসবের রাত আগে আর কখনো আসেনি এই কিশোরদের জীবনে। মঙ্গলবার রাতটাকেই জীবনের শ্রেষ্ঠতম রাত বলে স্বীকার করলেন সকলে। এমন উৎসবের রাত কী আর ঘুমিয়ে অপচয় করা যায়! তাই তারভর হৈ-হুল্লোড় আর নেচেগেয়ে কাটালেন বাংলাদেশের কিশোর বীরেরা।
বুধবার দিনভর চললোও সাফ অনূর্ধ-১৬ ফুটবলের শিরোপা জয়ের উদযাপন। দিনভর বৃষ্টি থাকার কারনে বুধবারও সকাল থেকে হোটেলবন্দি বাংলাদেশ দল। হোটেলেই চললো শিরোপা জয়ের উৎসব। বাফুফে কর্তা, স্থানীয় ক্রীড়া কর্মকর্তা আর রাজনীতিবিদদের ফুলের শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হলো বাংলাদেশ দল। কোন পত্রিকায় কার ছবি ছাপা হলো, কার বীরত্বগাঁথা লেখা হলো- এসব নিয়ে একে অপরের সাথে খুঁনসুটিও চললো সকাল থেকে।
বৃষ্টির মধ্যেই ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট ছাড়লেন শিরোপা জয়ী বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা। শারিরীকভাবে সিলেট ছাড়লেন বটে, তবে তাদের মনে ঠিকই গেঁথে রইলো সিলেট। এ পর্যন্ত নিজেদের সবচেয়ে বড় কীর্তি, সবচেয়ে গৌরবকাব্য যে রচিত হয়েছে এই সিলেটেই।
এখনো ১৬ পেরোয় নি কেউই। অথচ রাতারাতি তারা পরিণত হয়ে গেছে জাতীয় তারকায়। সকলের মুখে মুখে এখন নিপু-সাদ-শাওন-ফয়সলদের বীরত্বগাঁথা।
ধরা যাক ফয়সল আলমের কথাই। সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের এই কিশোরকে কে চিনতো আগে? অথচ মঙ্গলবার একটি পেনাল্টি ঠেকিয়েই তিনি পরিণত হয়েছেন জাতীয় বীরে। এই পনাল্টি ঠেকানোর মধ্য দিয়েই যে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের বিজয়।
কিংবা সাদের কথাও বলা যেতে পারে। সিলেটের এই রোগাটে কিশোর কী ভেল্কিই না দেখালেন গত এক সপ্তাহ। বল পেয়েই তীব্র গতিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণবুহ্যে ঢুকে পড়া কিভাবে ভুলবে সিলেটের দর্শকরা।
এভাবে এক এক করে বলা যায় সকলের কথাই। এই সকলে মিলেই একটি দল হয়ে উঠেছিলো সদ্য শেষ হওয়া টুর্ণামেন্টটিতে। অবাক কিশোরের দল। তাদের কেউ এসেছেন বিকেএসপি থেকে, কেউবা সিলেটের বাংলাদেশ ফুটবল একাডেমি থেকে আবার অনেককে বিভিন্ন জেলা খোঁজে আনা হয়ে হয়েছে। নানা জায়াগা থেকে উঠে আসা এইসব ফুলের কলি নিয়ে মালা গেঁথেছিলেন কোচ গোলাম জিলানী। এই বিনি সুতোর মালাতেই মিললো সাফল্য।
ছোট বয়সে এমন বাড় সাফল্যে রাতারাতি তারকা বনে গেলেও পা মাটিতেই থাকছে এই নবীন বীরদের।
যেমন হোটেল ছাড়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক শাওন বললেন, দর্শকদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অভূতপূর্ব। এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই। আগামীতে আরো ভালো ফুটবল খেলতে চাই। দেশের হয়ে আরো সাফল্য বয়ে আনতে চাই।
হলুদ কার্ডের ফাঁদে পড়ে ফাইনালে খেলা হয়নি বাংলাদেশের মাঝমাঠের শিল্পী নিপুর। তবু যেটুকু খেলেছেন তাতেই নিজেদের জাত চেনাতে সক্শত হয়েছেন এই কিশোর। তাই তো ফাইনালে না খেলেও তিনি টুর্ণামেন্টের সেরা খেলোয়াড়।
এমন সাফল্যের পর নিপু’র মন্তব্য, এই কয়দিনের কথা জীবনেও ভুল ভুলবো না। স্বপ্নের মতো কেটা সিরিজ মেষ করলাম আমরা। আগামী জাতীয় দলে খেরার স্বপ্নের কথা জানালেন নিপু।
ফাইনালের তারকা ফয়সল চিন্তা অবশ্য আরেকটু সুদূর প্রসারি। সে বলে, এখন আন্ডার সিক্সটিনে এসে আমাদের খোঁজে বের করা হইছে। এই কাজটা যদি আন্ডার এইট বা আন্ডার টেনে করা হয় তাহলে দেশের ফুটবল আরো লাভবান হবে।
টুর্ণামেন্ট শুরুর আগে অপর্যাপ্ত অনুশীলন নিয়ে অতৃপ্তির কথা জানিয়েছিলেন কোচ জিলানী। শিরোপ জয়ের পর সকল অতৃপ্তি ভুলে গিয়ে তার চোখেমুখে এখন তৃপ্তির হাসি। এই সাফল্যের রহস্য সম্পর্কে জিলানী জানালেন, আমরা পুরো একটা টিম হতে পেরেছিলাম। এই ক’দিনে আমরা সবাই একটা পরিবার হয়ে গেছি। এটাই আমাদের সাফল্যের প্রধান রহস্য।
তবে এই সাফল্যেই থেমে থাকতে চান না জিলানী। তিনি জানালেন, এবার আমাদের লক্ষ্য এএফসি কাপ। এএফসিতে কোয়ালিফাই করতে চাই আমরা। আমার বিশ্বাস এই টিম নিয়ে সেটা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের সকল ফুটবল অনুরাগীও মনে করেন এই টিমকে দিয়ে সম্ভব। এই টুর্ণামেন্টে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে বাংলার কিশোররা তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করলে দেরে ফুটবলের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ফুটবল অনুরাগীরা।
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ আর সুযোগ সুবিধার দাবি জানালেন কোচ জিলানীও। তাঁর দাবি, সিলেট ফুটবল একাডেমির মতো দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে ফুটবল একাডেমি স্থাপনের। তাকে অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার উঠে আসবে।
আপাতত আশার খবর হলো, ফাইনালে সিলেটের মাঠে বসে কিশোরদের নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন আশ্বাস দিয়েছেন, এই কিশোরদের তিনি নিজের তত্ত্বাবধানে রাখবেন। তারা যাতে সবধরনের সুযোগ সুবিধা ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পায় সেটি নিশ্চিত করবেন।
আপাতত এই আশ্বাস আর সুখস্মৃতি নিয়ে অপেক্ষা। কিশোররাও একদিন বড় হবে। বড় হবে তাদের নিয়ে স্বপ্নের পরিধিও।
আপনার মন্তব্য