নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০১:১৯

‘সাকিবরা যায়নি, সালমারা যাবে কেন?’

ক্রিকেটপ্রেমীদের ফেসবুক দেয়ালে থেকে নেয়া

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরে সরকার সবুজ সংকেত দেয়ার পরই ক্রিকেটপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। এই 'অনিরাপদ' সফর বাতিলের দাবিতে ইতিমধ্যে একটি ইভেন্ট খোলা হয়েছে।

ইভেন্ট থেকে জানা গেছে এই ইস্যুতে বুধবার শাহবাগে সালমা-লতাদের পাকিস্তান সফর বাতিল করার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করা হবে।

এ বিষয়ে ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সি লিখেছেন-

বাংলাদেশ প্রমিলা ক্রিকেট টিমকে পাকিস্তান পাঠানোর পরিকল্পনা চলছে। পাকিস্তান হাতে পায়ে ধরেছে, এখন সম্পর্ক রক্ষার খাতিরে আমাদের মেয়েদের মরতে পাঠাতে হবে।বিশ্বের কোন ক্রিকেট টিম যেখানে খেলতে যেতে চায় না, সেখানে আমাদের কেন খেলতে যেতে হবে? দরকার হইলে তাদের প্লেন ভাড়া ভিক্ষা দিয়ে এনে খেলানো হোক। আমাদের সালমা, যে সারা বিশ্বের নারী অলরাউন্ডারদের ভেতর অন্যতম। একটা আত্মঘাতী হামলায় তাঁকে মরে যেতে দেখতে কে কে চাইবেন? আমাদের ভাইদের যখন পাঠানোর কথা চলছিলো, ২০১২ সালে। আমরা আন্দোলন করে ঠেকিয়ে দিয়েছিলাম। আজ আমাদের বোনদের পাঠাবে , আমরা কি বসে থাকবো? আমরা কোন মৃত্যুপুরীতে আমাদের জাতীয় গর্বদের পাঠাবোনা। আগামীকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪ টায় শাহবাগ আমরা দাঁড়াচ্ছি।

২০০৯ সালে পাকিস্তান সফররত শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের আয়োজন করেছিল তৎকালিন ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে তা পরে বাতিল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)-এ কোন পাকিস্তানি ক্রিকেটারকে পাঠায় নি পিসিবি।

ক্রিকেটমোদীরা ধারণা করছেন, আসছে বিপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই সালমা-শুকতারাদের গিনিপিগ হিসেবে সেদেশে পাঠানো হচ্ছে।

পাকিস্তানে নারী ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা সমস্যা বেশি উল্লেখ করে ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন,

"পাকিস্তানে পুরুষ ক্রিকেটারদের তুলনায় নারী ক্রিকেটারদের জীবনের ঝুঁকি বেশি, কারন নারীরা মাঠে খেলাধুলা করছে, সেটা তালেবানি জঙ্গীদের জন্য আরো বড় উস্কানি।
আল্লাহ না করুন, যদি নারী ক্রিকেটারদের উপর কোনো হামলা পাকিস্তানে হয়, তাহলে এর জন্য সব দালালকেই জবাবদিহি করতে হবে।
আমি বুঝি না কোন দুঃখে সেধে গিয়ে সব দালাল পাকিস্তানের ঝুঁকিতে ক্রিকেটার পাঠাতে চায়? পাকিস্তানি রূপীর দাম এসব বহুরূপীদের কাছে দেশের খেলোয়াড়দের প্রানের চাইতে বেশি হয় কীভাবে!"

নারী ক্রিকেটারদের অনিরাপদ দেশে পাঠানোয় বানিজ্যের আভাস পেয়ে অর্জুন মান্না লিখেছেন "মহিলা ক্রিকেট দলের পাকসফরে পাক টেকাটুকার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।"

রাহাত মুস্তাফিজ লিখেছেন,

জঙ্গী হামলা থেকে শ্রীলংকান পুরুষ জাতীয় ক্রিকেট দল অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে বছর কয়েক আগে। ক্রিকেট বিশ্বকে সাঙ্গাকারা- মাহেলাদের জন্য প্রতিবছর শোকদিবস পালন করতে হতো। কী বিভৎস ব্ল্যাক ডে হতে যাচ্ছিল সেদিন! ভাবতেই শিউরে উঠি। তারপর থেকে পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে যায় না সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো দেশ। এই তো সেদিন ওয়াসিম আকরাম একটুর জন্য জানে বাঁচলেন। ধর্মান্ধ - জঙ্গী - কট্টর মৌলবাদী ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানে এ ধরণের ঘটনা নিত্যকার।
এরকম একটা ভয়াবহ রাষ্ট্রে প্রবল চাপ উপেক্ষা করে যেখানে আমাদের মাশরাফি - সাকিব - মুশফিকদের পাঠানোর কথা চিন্তায় আনতে পারি না সেখানে নারী ক্রিকেট দলকে কোন আক্কেলে পাঠানোর কথা ভাবি?  সালমারা যাবে না। দ্যাটস ফাইনাল। সরি, সাধারণ ক্রিড়ামোদী পাকিস্তানি জনগণ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে শক্তিশালী একদল। কারো সাথে দরকষাকষির পর্যায়ে নেই উল্লেখ্য করে শামস রশীদ জয় লিখেছেন- 

"আগে না হয় একটা 'প্রেক্ষাপট' ছিল - টাইগারদের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত হতো পাকিস্তান। কিন্তু এখন? এভাবে হেসেখেলে দুই ফর্মের ক্রিকেটে ওদের ধরাশায়ী করার পরও বিপিএল এর তাবুমালিকরা বলছেন - প্রথম পছন্দ পাকিস্তানী প্লেয়ার্স! সেটা আবার 'একাত্তর' নামক মিডিয়া দেখাচ্ছে। কারও আত্মসম্মানে লাগছে না! কে বলে এই দেশ থেকে গন্ডার বিলুপ্ত!"

মারজিয়া প্রভা প্রশ্ন রেখেছেন, "নিরাপত্তার কারনে যদি সাকিবরা না যায় তাহলে সালমারা যাবে কেন, সালমাদের জীবনের মূল্য কি কম?" একই রকম প্রশ্ন রেখেছেন আরও অনেকে।

আবু এম ইউসুফ লিখেছেন- "সালমাদের টোপ হিসাবে ব্যবহার হতে দেয়া যায় না।"

সম্প্রতি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে সফরের আমন্ত্রণ জানায় পাকিস্তান। এর প্রেক্ষাপটে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সফরের সম্মতি চেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। তারই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে সম্মতি দিয়ে চিঠি পাঠায়। পাকিস্তান জানায় স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শক শূন্য রেখে নিরাপত্তাবাহিনী বসিয়ে খেলা হবে। অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন "যেখানে দর্শকই থাকবে না তাহলে এমন খেলার দরকারটা কি?"

দীর্ঘদিন পর এই বছরই কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে স্বল্প সময়ের একটি সফর করে জিম্বাবুয়ে। সেই সফরচলাকালীন স্টেডিয়ামের রাস্তায় বিস্ফোরক সহ কয়েকজন আটক হয়েছিল। অতি সম্প্রতি করাচিতে হামলার শিকার হন সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম।

এসব বিষয় উল্লেখ করে ক্রিকেটপ্রেমীরা এই সফর বাতিলের দাবি জানিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত