বড়লেখা প্রতিনিধি

০৩ জুলাই, ২০২০ ১৯:৪৪

বড়লেখায় পলিথিন আটকের জেরে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ মামলা, গ্রেপ্তার ৩

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পলিথিন আটকের জের ধরে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৩ জুলাই) বিকেলে দুই মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে বড়লেখা থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- পৌরসভার গাজিটেকা গ্রামের সুমন আহমদ (২৫), নয়ন আহমদ (২২) ও আবুল হোসেন (২৭)। গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুরে পৌরসভার গাজিটেকা এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১ জুলাই) স্থানীয় প্রশাসন পৌর শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মজুদ করা প্রায় ৭০ মণ নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার করে। এর মধ্যে মামলার প্রধান আসামি সাইদুল ইসলামের পারিবারিক মালিকানধীন রেলওয়ে স্টেশন রোডস্থ শাহজালাল শপিং সিটি থেকেও পলিথিন উদ্ধার করে প্রশাসন। এ ঘটনার পর থেকে আসামিরা শামীম আহমদকে (মামলার বাদী) সন্দেহ করছিলেন। তাদের ধারণা শামীম আহমদ পুলিশকে তথ্য দিয়ে পলিথিনগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন। এ আক্রোশে বৃহস্পতিবার সকালে শহরের উত্তর বাজার এলাকায় শামীম আহমদকে কুপিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে যায়। এতে শামীম গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে থাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শামীম আহমদের উপর হামলার খবর পেয়ে তার ভাই জসিম উদ্দিনসহ স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে বেলা ১টার দিকে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে জসিম উদ্দিনসহ প্রায় ১২জন আহত হন। জসিম উদ্দিনসহ কয়েকজন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আহত অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র জানিয়েছেন, দুপুরে সংঘর্ষের সময় পর পর তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শোনেছেন তারা। তবে এই গুলির সত্যতা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।

খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এছাড়া সংঘর্ষের খবরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হককে সাথে নিয়ে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় আহত শামীম আহমদ বাদী হয়ে ১৮ জনের ও জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। দুটি মামলায় শাহজালাল শপিং সিটির মালিক সাইদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার পর শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩জনকে গ্রেপ্তার করে।

হাসপাতালে আলাপকালে সংঘর্ষে আহত জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার পুলিশ শাহজালাল মার্কেটসহ বেশ কয়েক জায়গা থেকে পলিথিন উদ্ধার করে। এই মার্কেটের মালিক সাইদুল ইসলাম। সে কিছু লোক দিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবসা করে। সে ধারণা করে আমার ভাই শামীম এগুলো ধরিয়েছে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজনসহ আমার ভাইকে সকালে আহত করে। এ ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে সাইদুল লোকজন নিয়ে আমাদের উপরও আক্রমণ করে। সাইদুল সরাসরি আমাদের উপর গুলি করে।’
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে (৩ জুলাই) বলেন, ‘সকালে হামলার ঘটনায় একটি ও দুপুরের ঘটনায় একটি করে দুটি মামলা হয়েছে। পৃথক দুটি মামলায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারনামীয় ৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১ জুলাই) প্রশাসন শহরের শাহজালাল শপিং সিটি, বিসমিল্লাহ মার্কেট ও উত্তরবাজার থেকে মজুদ করা প্রায় ৭০ মণ নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার করে। এই ঘটনায় চারজনকে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে উদ্ধার করা পলিথিন পুড়িয়ে ফেলা হয়। এর জেরে পলিথিন ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট জোটবদ্ধ হয়ে প্রশাসনকে তথ্য দিয়েছেন সন্দেহ করে শামীম আহমদ (৪৫) নামের একব্যক্তির ওপর হামলা করে আহত করে। শামীম আহমদের ওপর হামলার খবর পেয়ে তার স্বজনরা ঘটনাস্থলে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত