সদরুল আমিন, ছাতক

১৪ অক্টোবর, ২০২০ ২১:১০

সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণায় সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ছাতক পৌরসভা নির্বাচন

নির্বাচনী সম্ভাব্য দিনক্ষণ বা তফসিল ঘোষণা না হলেও ছাতক পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা। পৌর নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে অনেকটাই নীরব থাকলেও সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মেয়র পদে প্রার্থীতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচনী প্রভাব এখনো লক্ষ্য করা যায়নি।

তবে চলমান পৌর পরিষদের মেয়াদ বিবেচনায় চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে ছাতক পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিগত পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালে ৩০ ডিসেম্বর। আসন্ন পৌর নির্বাচনে এখানে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র ছাড়াও আরও ৫ প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর তালিকায় কয়জন ঠিকে থাকবেন ভোটাররা তারই অপেক্ষায় রয়েছে। পৌর নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালালেও প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থীতার ব্যাপারে এখনো খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারছেন না।

ভোটারদের হিসেব মতে ছাতক পৌরসভায় মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে আবারো মেয়র পদে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আবুল কালাম চৌধুরীর পক্ষেই থেকে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ধারাবাহিক উন্নয়ন ও পৌর নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার অবিচল পথচলা, কর্মদক্ষতা ও সততার কারণেই পৌর নাগরিকদের মন জয় করতে পেরেছেন তিনি। একজন সৎ এবং সাদা মনের মানুষ হিসেবে বারবার তাকে পৌর পিতার মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে পৌরবাসী। আগামী নির্বাচনে এর বিকল্প হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

১০ দশমিক ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ছাতক পৌরসভা ইতিমধ্যেই ৪টি নির্বাচন কাল পার করে ৫ম নির্বাচনের জন্য এখন দরজায় কড়া নাড়ছে। প্রতিষ্ঠার প্রথম দুবছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল খালেক পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে এ পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম নির্বাচনে পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু। পরবর্তী ২০০৫, ২০১১ এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী হ্যাটট্রিক বিজয় লাভ করেন।

বিএনপি-জামাত জোট সরকারের শাসনামলে ২০০৫ সালে পৌর নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মাহফুজ শিপলু এবং রানিং পৌর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনুকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে ছাতা প্রতীকে প্রথম বারের মতো পৌর পিতা নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবুল কালাম চৌধুরী। ২০১১ সালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে কাপ-পিরিচ প্রতীকে ৭ হাজার ৪৬৯ ভোট পেয়ে ২য় বারের মতো পৌর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। এ সময় তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ সাইফুর রহমান চৌধুরী খোকন (জাহাজ) পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৮৩৮ এবং আব্দুল ওয়াহিদ মজনু (আনারস) পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৮৭১ ভোট।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে ১০ হাজার ৮২৬ ভোট পেয়ে হ্যাটট্রিক বিজয় লাভ করেন আবুল কালাম চৌধুরী। মোবাইল ফোন প্রতীকে ৪ হাজার ৬৫১ ভোট পেয়ে ২য় স্থানে ছিলেন আব্দুল ওয়াহিদ মজনু এবং বিএনপির প্রার্থী দলীয় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৩৫০ ভোট পেয়ে শামছুর রহমান শামছু ছিলেন ৩য় স্থানে।

বিগত ৪টি পৌর নির্বাচনেই মেয়র পদে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহিদ মজনু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বলে তার কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন। বিগত নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। আসন্ন পৌর নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়ে আগামীতে পৌর পিতার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বঞ্চিত পৌরবাসী ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন।

এ ছাড়া নতুন মুখ হিসেবে উপজেলা যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান চৌধুরী সুমনও মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি শহরের বাগবাড়ী গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম সুনু মিয়া চৌধুরীর ছেলে এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান চৌধুরীর ছোট ভাই। পারিবারিক ঐতিহ্য পৌরবাসীর সমর্থন নিয়ে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছে রয়েছে বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন।

বিএনপি থেকে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে বিগত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শামছুর রহমান শামছু, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশিদা আহমদ ন্যান্সি এবং পৌর বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন সালমান।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে রাশিদা আহমদ ন্যান্সি বিপুল ভোটে প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালনকালে তার দায়িত্বপরায়নতা ও কর্মদক্ষতা মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। তিনি মানুষের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে আসন্ন পৌর নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দিতে চান। এখানের দ্বিধাবিভক্ত বিএনপির একটি বলয়ের সাথে তিনি যুক্ত রয়েছেন।

রাশিদা আহমদ ন্যান্সি জানান, বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ছাতক পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়েও তিনি ব্যাপক আশাবাদী। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, বিগত পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শামছুর রহমান শামছু আবারো দলীয় মনোনয়নে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছন। দেশের রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশেও বিগত নির্বাচনে তিনি সম্মানজনক ভোট পেয়েছিলেন বলে তিনি মনে করেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত ও মনোনয়ন পেলেই তিনি আসন্ন পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অবাদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং ভোটাররা যদি তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে পারেন তবে আসন্ন পৌর নির্বাচনে এখানে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে তিনিই বিজয়ী হবেন।

আসন্ন পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী জানান, নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। প্রার্থী হওয়া সকলেরই একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার ভোটারের। পৌর নাগরিকরা তাদের ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটিয়ে টানা তিনবার তাকে মেয়র পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। জনগণের ভালোবাসা আছে বলেই মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার উপর আস্তা রেখে বিগত পৌর নির্বাচনে স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রতীক নৌকা তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভোট দিয়ে এ প্রতীকের সম্মানও রেখে ছিলেন পৌর নাগরিকরা। আসন্ন পৌর নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত