মো. বেলাল হোসাইন, জুড়ী

২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০০:১৬

জরাজীর্ণ ঘরের কষ্ট ঘুচল বিধান দাশের

কয়েক বছর থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ বিধান দাশ। কিছুটা সুস্থ হয়ে টুকিটাকি কাজ করেন। এ আয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। ৬ সদস্যসহ থাকতেন জরাজীর্ণ টিনের ঘরে। বর্ষায় চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে ভিজেছে বিছানাপত্র। হাড় কাঁপানো শীতে কতই না কষ্টে কেটেছে। পরিবার–পরিজন নিয়ে রাত নির্ঘুম কাটত তার।

তবে এখন পাকা ঘর পাওয়ায় আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না তাকে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে জরাজীর্ণ ঘরের কষ্ট ঘুচেছে তার।

কেবল বিধান দাশ নন। তার মতো ২৪টি দরিদ্র পরিবারকে দূর্যোগসহনীয় পাকা গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দ গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় ঘরগুলো তৈরি করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি গৃহহীন দরিদ্র পরিবারগুলোকে নতুন ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা বিধান দাশ ঘর পেয়ে ভীষণ খুশি। সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘পাঁচ মেয়ে ছিল। একজন মারা গেছে। ছোট একটা ছেলে আমার। ছেলেটা কোনোদিন বড় অইব। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ। তারার লাগি (সন্তানদের জন্য) কোনতা করতাম পারলাম না। সব সময় চিন্তা করতাম। ভাঙা ঘরে কত কষ্ট করেছি। ঝড়-তুফান আইলে ডরাইতাম (ভয়ে থাকতাম)। এই বুঝি ঘর উড়াইয়া লাইয়া যায় গি। কিন্তু আমার কষ্টের জীবনে সরকার একটা ঘর দিছেন। আমি খুশি।’

বিধান ছাড়াও ঘর পাওয়া জায়ফরনগর ইউনিয়নের মিনারা বেগম, ইয়ারুন নেছাসহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা সকলে খুশি। আলাপকালে ইয়ারুন নেছা বলেন, ‘একটা পাকা ঘর জীবনেও বানাইতাম (তৈরি করতে) পারলাম নানে। সরকার ঘর বানাইয়া দিছইন। এর লাগি আমার আর ঘরের কষ্ট নাই। অনেক কষ্ট করেছি একটা ঘরের জন্য।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের টিআর, কাবিটা কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা গৃহহীনদের জন্য দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ২৪টি ঘর তৈরী করে দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা। জায়ফরনগর, পূর্বজুড়ী, পশ্চিমজুড়ী, ফুলতলা, সাগরনাল ও গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন এলাকায় ৪টি করে দরিদ্র ও অসহায় পরিবার ঘর পেয়েছে।

জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী কোনো মানুষ যাতে গৃহহীন না থাকে, সে জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমার ইউনিয়নে ৪টি ঘর দেওয়া হয়েছে। যেগুলো পেয়ে মানুষ অনেক খুশী। এ মানুষগুলোর পক্ষে পাকা ঘর তৈরি করা খুব কষ্টের ছিল। পর্যায়ক্রমে সকল গৃহহীনরা যদি এভাবে ঘর পায় তাহলে এলাকায় কোনো গৃহহীন থাকবে না।’

জুড়ী উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ওমর ফারুক শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) বলেন, ‘প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহনীয় ঘরগুলো টিআর কাবিটার বরাদ্দ থেকে দেওয়া হয়েছে। ঘরের কাজ স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ তাদের দায়িত্বে করেছেন। আমরা সব সময় কাজ তদারকি করেছি। অসহায়, গৃহহীন মানুষগুলো ঘর গুলো পেয়ে অনেক খুশি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত