সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ নভেম্বর, ২০২০ ২১:৪৬

‘মমিনুল মউজদীনের অকাল মৃত্যুর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়’

‘এক স্টেডিয়াম শোক’ তথ্যচিত্র উন্মোচন

সুনামগঞ্জ পৌরসভার টানা তিনবারের চেয়ারম্যান ও কবি মমিনুল মউজদীন জ্যোৎস্না রাতে শহরের সব সড়কবাতি নিভিয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতেন। পাশাপাশি সবাইকে জ্যোৎস্নাযাপনের সুযোগ তৈরি করে দিতেন। তার এমন উদ্যোগের ফলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জে জ্যোৎস্না দেখতে ভিড় জমাতেন অনেকেই। জ্যোৎস্নাবাদী সেই কবি মউজদীন এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর স্ত্রী-সন্তানসহ নিহত হন। তার অকাল মৃত্যু অপার এক শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। যা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

মমিনুল মউজদীনের ১৩ তম মৃত্যুদিনকে সামনে রেখে সিলেটে সমাজ অনুশীলন নামের মুক্তচিন্তার সংগঠন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেছেন।

মমিনুল মউজদীন স্মরণে ২০০৭ বছরের ৮ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে সর্বদলীয় নাগরিক শোকসভা হয়েছিল। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত সেই শোকসভায় যোগ দিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৎকালীন জাতীয় নেতারাও। তাদের দেওয়া ভাষণ সংকলিত করে মাহদীয়া ক্রিয়েশন নামের একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ‘এক স্টেডিয়াম শোক’ নামের একটি তথ্যচিত্র। শনিবার মউজদীনের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন এ তথ্যচিত্রের উন্মোচন ও প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘সমাজ অনুশীলন’ নামের মুক্তচিন্তার একটি সংগঠন। করোনা-পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিলেট নগরের পূর্ব জিন্দাবাজার এলাকার গ্রন্থবিপণি বাতিঘরে এ অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। বক্তৃতায় তিনি বলেন, কবি ও জনপ্রতিনিধি মমিনুল মউজদীন ছিলেন তরুণপ্রজন্মকে সম্মোহিত করে রাখা এক রাজনীতিবিদ। তার হাতে ছিল তরুণদের সমাজ ও রাজনীতিতে আকর্ষিত করে রাখার জাদুকরি গুণাবলী। একাধারে কবি আবার রাজনীতি, জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিত্বে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী একজন। তার অকাল মৃত্যুর শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। ভাষণ পরিক্রমা নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও ইউটিউবে প্রকাশের আয়োজনকে তিনি সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে বলেন, বর্তমান সময় হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের অনেক অহংকারের মানুষ আছেন। এই সব রাজনীতিবিদদের তরুণ প্রজন্মের নিকট পরিচিতি করে তুলতে শুধু বই কিংবা কোনো প্রকাশনা নয়, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর আয়োজন রাখতে হবে। তবেই উদ্যোগ সার্থকতা লাভ করবে।

লেখক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কবি মমিনুল মউজীদনের কবিতা ও জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন সিলেটের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল-আজাদ, লেখক নৃপেন্দ্র লাল দাশ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু, সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ ও মউজদীনের একমাত্র সন্তান ফিদেল নাহিয়ান। আয়োজকদের পক্ষে সমাজ অনুশীলনের সদস্যসচিব মুক্তাদীর আহমদ মুক্তা ও সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তামান্না ইসলাম।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, মমিনুল মউজদীন স্মরণে আয়োজিত সর্বদলীয় শোকসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন গণমানুষের নেতা বরুণ রায়। শোকসভায় গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দেওয়ান ফরিদ গাজী, আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আসাদুজ্জামান নূরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। ‘এক স্টেডিয়াম শোক’ নামের তথ্যচিত্রে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ভাষণ পরিক্রমা তুলে ধরা হয়। পর্যায়ক্রমে সকলের ভাষণের অংশবিশেষ নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মউজদীনের লেখা ‘এ শহর ছেড়ে আমি পালাব কোথায়’ কবিতাটি গানে রূপান্তর করে গেয়েছেন শিল্পী লিংকন দাশ।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আল-আজাদ বক্তৃতায় মউজদীনের জনপ্রতিনিধিত্ব ও দুর্ঘটনার সময়কালের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, সিডরের সময় এই দুর্ঘটনাটি সিলেট অঞ্চলে মানুষকে শোকসাগরে ভাসিয়েছিল। ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ সমাজজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলা রাজনীতিবিদদের স্মারণ করে সমাজ অনুশীলনের এমন আয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মত প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, দলনিরপেক্ষ জনপ্রতিনিধিত্বের প্রতীক মমিনুল মউজদীন মরমিকবি হাসন রাজার প্রপৌত্রও ছিলেন। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ ফেরার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নিকট মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি, তার স্ত্রী তাহেরা চৌধুরী, ছোট ছেলে কহলিল জিবরান ও গাড়িচালক কবির মিয়া নিহত হন। গুরুতর আহত হয়েছিলেন মউজদীনের বড় ছেলে ফিদেল নাহিয়ান। সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন।

প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের নিয়ে মউজদীনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল ‘গণঐক্য’ নামের সর্বদলীয় এক রাজনৈতিক মোর্চা। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনসহ সৃজনশীল নানা কর্মযজ্ঞের কারণে দেশ-বিদেশে তিনি এক নামে পরিচিত ছিলেন। মমিনুল মউজদীনের লেখা ‘এ শহর ছেড়ে পালাব কোথায়’ ও ‘হৃদয় ভাঙার গান’ নামের দুটো কবিতার বই রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত